Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
কল্যাণী

বিএড-বিতর্কে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিঁধছেন পার্থ

ভর্তি হওয়ার জন্য অনৈতিক ভাবে টাকা দেওয়া হয়েছিল কেন, সেই প্রশ্ন তুলে আগেই সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদের দোষারোপ করেছিলেন তিনি। নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজে টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তির ঘটনায় এ বার কার্যত কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বিএড কলেজগুলির উপরে নজরদারির ক্ষেত্রে শিথিলতা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

ভর্তি হওয়ার জন্য অনৈতিক ভাবে টাকা দেওয়া হয়েছিল কেন, সেই প্রশ্ন তুলে আগেই সংশ্লিষ্ট ছাত্রছাত্রীদের দোষারোপ করেছিলেন তিনি। নদিয়ার ভক্তবালা বিএড কলেজে টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তির ঘটনায় এ বার কার্যত কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বিএড কলেজগুলির উপরে নজরদারির ক্ষেত্রে শিথিলতা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেই।

কীসের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করছেন তিনি?

শিক্ষামন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেন, “সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র দেখে প্রাথমিক ভাবে আমার এই ধারণা হয়েছে। মনে হয়েছে, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড কলেজগুলিতে যে-নজরদারির দরকার ছিল, তাতে যেন কোথাও একটা শিথিলতা হয়েছে। এত শিথিলতা থাকা উচিত ছিল না।”

কিন্তু তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-এর নেতার বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির জন্য টাকা নেওয়ার যে-অভিযোগ উঠেছে, সেই বিষয়ে কী বলবেন মন্ত্রী?

“ছাত্র-শিক্ষক দেখা হবে না। আর্থিক অনিয়মে জড়িত থাকলে কেউই রেহাই পাবেন না,” দাবি পার্থবাবুর। যদিও ওই ঘটনার তদন্তে রাজ্য সরকারের গড়া কমিটির একমাত্র সদস্য অভিজিৎ চক্রবর্তী ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, ভর্তির ক্ষেত্রে অনিয়ম হয়েছে কি না, তিনি শুধু সেটাই দেখছেন। তদন্ত কমিটির ‘টার্মস অব রেফারেন্স’ বা বিচার্য বিষয় অনুযায়ী অভিযুক্ত ছাত্রনেতার ভূমিকা, টাকার বিনিময়ে ছাত্র ভর্তি হয়েছে কি না ইত্যাদি দেখার দায় নেই তাঁর।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রতনলাল হাংলুর বক্তব্য, শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন, সেই ব্যাপারে তাঁর কিছুই বলার নেই। কারণ, যাঁরা টাকা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন, তাঁরা গত বছর জুলাইয়ে ওই কলেজে ভর্তি হন। আর হাংলু দায়িত্ব নিয়েছেন গত নভেম্বরে। তাঁর দাবি, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পরিদর্শনে খামতি ঘটেনি।

অভিযোগকারী ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হন প্রাক্তন উপাচার্য দিলীপকুমার মহান্তের আমলে। কিন্তু দিলীপবাবুর দাবি, তাঁর সময়ে সব কিছু হয়েছে নিয়ম মেনেই। তিনি বলেন, “কোথাও কোনও অনিয়মের অভিযোগ উঠলেই গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু যত দূর মনে পড়ছে, ভক্তবালা কলেজ নিয়ে কোনও অভিযোগ ওঠেনি।” টাকা দিয়ে ভর্তি হওয়ার অভিযোগ যাঁরা জানিয়েছেন, সেই পড়ুয়াদের অনেকেই এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্যের পরে মুখ খুলতে চাননি।

কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে ভক্তবালা বিএড কলেজের ১৭ জন পড়ুয়া লিখিত ভাবে অভিযোগ জানান, ভর্তি হওয়ার জন্য তাঁদের মোটা টাকা দিতে হয়েছে। এবং টাকা দেওয়া হয়েছে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তথা টিএমসিপি নেতা তন্ময় আচার্যের মাধ্যমেই। সেই ঘটনার তদন্তে অভিজিৎবাবুকে নিয়ে গড়া এক সদস্যের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট গত সপ্তাহে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের কাছে পেশ করা হয়েছে।

পার্থবাবু এ দিন সকালে একটি স্কুলের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে বেরোনোর সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উচ্চশিক্ষা সচিবকে। সচিবের রিপোর্ট পেলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে কী আছে, সেই ব্যাপারে কেউই মুখ খুলতে চাননি। শিক্ষামন্ত্রী বা শিক্ষা দফতরের কোনও কর্তাও এই বিষয়ে কিছু জানাননি। কিন্তু পাথর্র্বাবুর এ দিনের মন্তব্যের পরে ওই রিপোর্টের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অভিজিৎবাবু বলেছেন, ওই তদন্ত বা রিপোর্ট সম্পর্কে নৈতিক কারণে তিনি কিছুই বলবেন না।

ভক্তবালার ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবশ্য টিএমসিপি-র তোলাবাজির নজিরই জনসমক্ষে এসেছে বলে অনেকের মত। এতে যে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই, তা বোঝাতে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা আগেই আসরে নেমেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আইন অফিসারের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন শঙ্কুদেব। পরে সেই আধিকারিককে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এ দিন শঙ্কুদেব বলেন, “শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন, তা একদম ঠিক। এটা অনেক দিন ধরেই আমরা বলার চেষ্টা করছি। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা আছে।”

ভক্তবালা কলেজের ঘটনা নিয়ে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ও পৃথক তদন্ত করছিল। কিন্তু মঙ্গলবারেই নোটিস জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ সেই কমিটি ভেঙে দিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ব্যাপার। ওই কমিটি গড়ার ক্ষেত্রে আমার বা আমার দফতরের কোনও ভূমিকা ছিল না। কমিটি ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারেও নেই।” উপাচার্যও জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার যখন তদন্ত করেছে, তখন আর পৃথক ভাবে তাঁদের তদন্ত চালানোর যুক্তি নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE