Advertisement
E-Paper

বাজার চষে বিদ্যুতের খদ্দের খুঁজছে ডিভিসি

এমন একটি পণ্য, যা মজুত করার উপায় নেই। কারণ, তা মজুত করার প্রযুক্তিই আবিষ্কৃত হয়নি এখনও। এই অবস্থায় নিজেদের নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির বিদ্যুৎ নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন ডিভিসি-কর্তৃপক্ষ। কেননা উৎপাদনের ক্ষমতা বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু বাড়তি বিদ্যুৎ কেনার মতো খদ্দের নেই। সেই বিদ্যুৎ জমিয়ে রাখার উপায়ও নেই। তাই খদ্দের পেতে বাজার ঢুঁড়ে ফেলছেন তাঁরা।

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৫

এমন একটি পণ্য, যা মজুত করার উপায় নেই। কারণ, তা মজুত করার প্রযুক্তিই আবিষ্কৃত হয়নি এখনও। এই অবস্থায় নিজেদের নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির বিদ্যুৎ নিয়ে সঙ্কটে পড়েছেন ডিভিসি-কর্তৃপক্ষ। কেননা উৎপাদনের ক্ষমতা বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু বাড়তি বিদ্যুৎ কেনার মতো খদ্দের নেই। সেই বিদ্যুৎ জমিয়ে রাখার উপায়ও নেই। তাই খদ্দের পেতে বাজার ঢুঁড়ে ফেলছেন তাঁরা।

ঝাড়খণ্ডের কোডারমা ছাড়াও এ রাজ্যের মেজিয়া, অণ্ডাল, রঘুনাথপুরে নতুন তাপবিদ্যুৎ ইউনিট গড়ে তুলেছে ডিভিসি। সেগুলোর মধ্যে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরেই ৬০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য তৈরি। কিন্তু ওই কেন্দ্রের বিদ্যুৎ কেনার মতো কোনও ক্রেতা এখনও পায়নি ডিভিসি। একই সমস্যা দেখা দিয়েছে মেজিয়ার সাত-আট নম্বর ইউনিটের বিদ্যুৎ নিয়েও। সব মিলিয়ে এখন প্রায় ২০০০ মেগাওয়াট বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম ইউনিট রয়েছে ডিভিসি-র হাতে। কিন্তু খদ্দের মিলছে না বলেই সেই সব ইউনিটকে পূর্ণ ক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না। ওই ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের গতি করা অর্থাৎ তা ক্রেতার হাতে তুলে দেওয়াটাই এখন ডিভিসি-র সব চেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ডিভিসি সূত্রের খবর, মেজিয়ার সাত নম্বর ইউনিট এবং রঘুনাথপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কমনওয়েলথ গেমসের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করা। ২০১০ সালে খেলাধুলোর সেই বিরাট আসর বসেছিল। যদিও নানান জটিলতায় সেই সময় রঘুনাথপুরের বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করে ওঠা যায়নি। এখন মূলত ওই ইউনিটগুলোর বিদ্যুতের ক্রেতা খুঁজতে হচ্ছে।

ক্রেতা খোঁজাটাও রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন এক ডিভিসি-কর্তা। তিনি জানান, প্রতিযোগিতার বাজারে বিদ্যুতের বিক্রেতাই এখন বেশি। সেই তুলনায় খদ্দের কম। ফলে ইউনিট-পিছু বিদ্যুতের দামও অনেকটা কম। তার মধ্য থেকেই ভাল খদ্দের বেছে নিতে হচ্ছে। যাতে বাড়তি বিদ্যুৎ বিক্রি করে টাকা আসে ঘরে।

বিদ্যুৎ শিল্পের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী নতুন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে হলে আগে ‘পাওয়ার পার্চেজ এগ্রিমেন্ট’ (পিপিএ) বা বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তি করতে হয়। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে যাকে বিক্রি করা হবে, তার সঙ্গে চুক্তি থাকা বাধ্যতামূলক। তা না-থাকলে অসুবিধা হয় দু’দিক থেকে।

• কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে কয়লা পাওয়া যায় না।

• ব্যাঙ্কগুলিও ঋণ দিতে চায় না। ডিভিসি যখন ওই সব নতুন ইউনিট তৈরির পরিকল্পনা করে, তখন বিদ্যুৎ বিক্রি সংক্রান্ত চুক্তি করাটা বাধ্যতামূলক ছিল না।

পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ৬০০ মেগাওয়াটের দু’টি ইউনিট তৈরি হয়ে গিয়েছে। চলতি মাস থেকেই সেগুলি পরীক্ষামূলক ভাবে চালানোর কথা। কিন্তু ডিভিসি-কর্তৃপক্ষ জানেন না, ওই বিদ্যুৎ কাকে বা কাদের বিক্রি করা হবে। কোডারমা, অণ্ডাল এবং মেজিয়ার ইউনিটগুলি বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হলেও সেগুলি অধিকাংশ সময়েই বসিয়ে রাখতে হয়। ফলে লাভ তো দূরের কথা, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যে-বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে, তা তুলে আনতেই বেগ পেতে হচ্ছে।

সেই জন্যই এখন খদ্দের ধরতে ডিভিসি-কর্তাদের কোমর বেঁধে মাঠে নামতে হয়েছে। রেল যাতে অন্তত ১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনে, তার জন্য সংস্থার চেয়ারম্যান নিজে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ডিভিসি-র চেয়ারম্যান অরূপ রায়চৌধুরী জানান, নতুন ইউনিটগুলি থেকে কোথায় বিদ্যুৎ পাঠানো হবে, সেই ব্যাপারে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। “কর্নাটক সরকার আমাদের ৪৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনবে বলে চুক্তি করেছে। বাকি বিদ্যুৎ যাতে রেল বা অন্য রাজ্যকে বিক্রি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করছি, খুবই শীঘ্রই ক্রেতা মিলবে,” বললেন ডিভিসি-র চেয়ারম্যান।

pinaki bandyopadhyay dvc electric
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy