Advertisement
E-Paper

বেলাকোবার দোষীদের চেনাতে দায়িত্ব স্কুলকে

মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে স্কুলে ভাঙচুর, শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় বেলাকোবা হাইস্কুলের দোষী পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের নাম ঠিকানা পাঠানোর নির্দেশ দিল জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতর। মঙ্গলবার পরীক্ষার শেষে ও বুধবার বুধবার পরীক্ষার মুখে যে স্কুলে ওই কাণ্ড ঘটেছে, সেই নগেন্দ্রনাথ হাইস্কুলে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৪৫
তাণ্ডবের চিহ্ন রয়েছে বৃহস্পতিবারেও। — সন্দীপ পাল

তাণ্ডবের চিহ্ন রয়েছে বৃহস্পতিবারেও। — সন্দীপ পাল

মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে গিয়ে স্কুলে ভাঙচুর, শিক্ষকদের মারধরের ঘটনায় বেলাকোবা হাইস্কুলের দোষী পরীক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের নাম ঠিকানা পাঠানোর নির্দেশ দিল জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতর। মঙ্গলবার পরীক্ষার শেষে ও বুধবার বুধবার পরীক্ষার মুখে যে স্কুলে ওই কাণ্ড ঘটেছে, সেই নগেন্দ্রনাথ হাইস্কুলে ভিডিও ক্যামেরা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত পুলিশ দিতে অনুরোধও করেছেন বিদ্যালয় পরিদর্শক স্বপন সামন্ত। বুধবারের ঘটনার নিন্দায় মুখর বেলাকোবার বাসিন্দারাও। স্বপনবাবু বলেন, “পরীক্ষার বাকি দিনগুলোতে আর গোলমাল হতে দেওয়া হবে না। একজন ভিডিও ক্যামেরাম্যানকে নিয়োগ করা হচ্ছে।’’

স্বপনবাবু জানান, জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসিকে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। দোষী ছাত্রদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে তা আমাদের দফতরে জানানোর জন্য বেলাকোবা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষককে চিঠি দেওয়া হয়েছে।”

নগেন্দ্রনাথ হাইস্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট চারটি ঘরে বেলাকোবা হাইস্কুলের ছাত্রদের পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সেগুলি হল ৩, ৪, ৫ এবং ৬ নম্বর ঘর। এই ঘরগুলির মধ্যে প্রথমে ৬ নম্বর ঘরের ছাত্ররা গোলমাল শুরু করে। তাদের সংখ্যা ৩১ জন। তারপর ৫ নম্বর ঘরের ছাত্ররা তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ৫ নম্বর ঘরে মোট ৫৮ জন ছাত্র পরীক্ষা দিচ্ছে।

এদিন নগেন্দ্রনাথ হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে নকলের ছড়াছড়ি। ছোট কাগজে বইয়ের পাতার জেরক্স পড়ে আছে সর্বত্র। বুধবার স্কুলে পরীক্ষা শুরুর আগে গোলমাল হয়েছিল। ওই দিন স্কুলে পরীক্ষা শেষের পর কয়েকজন ছাত্র নগেন্দ্রনাথ স্কুলের শিক্ষক অরূপ দত্তর মাথায় একগোছা নকল করার কাগজের টুকরো ঢেলে দেয়।

গত বছর এরা স্কুলের ফ্যানগুলি নষ্ট করে দিয়েছিল বলে এবছর ফ্যানগুলি খুলে রাখা হয়েছে। নগেন্দ্রনাথ হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক বরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “আমরা চাই বেলাকোবা হাইস্কুলের কয়েকজন শিক্ষক পাঠানো হোক। তাঁরা পরীক্ষা শুরু সময় থাকবেন। আবার তিনটের সময় পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে আসবেন।” বেলাকোবা হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক ইন্দুভূষণ রায় বলেন, “আমরা অবশ্যই আমাদের শিক্ষকদের পাঠাবো। মুষ্টিমেয় ছাত্র ঘটনাটি ঘটিয়েছে। যারা ঘটিয়েছে তারা কোনদিন স্কুলে আসে না। পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দিতে আসে। এদের জন্যই আমাদের স্কুলের বদনাম হচ্ছে। সরকার থেকে ছাত্রদের শাসন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা তাদের কিছুই বলতে পারি না। এটা আমাদের একটা সমস্যা।”

কিন্তু এই ঘটনায় বেলকোবার সম্মান নষ্ট হচ্ছে বলে নিন্দায় মুখর হয়েছেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই। বেলাকোবা থেকে নির্বাচিত শিকারপুর গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান কল্যাণ হোড় বলেন, “স্কুল কমিটিকে বলা হয়েছে অবিলম্বে দোষী ছাত্রদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”

বেলাকোবা হাইস্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি রণবীর মজুমদার এবং সদস্য মনোরঞ্জন ঘোষ ওই স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র। তাঁরা বলেন, “এ এক সামাজিক অবক্ষয়। একে ঠেকানোর জন্য আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

বেলাকোবা রেল গেটের কাছে চায়ের দোকান করেন কুলসুম বিবি। তার মেয়ে আমিনা খাতুন বেলাকোবা গার্লস হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। এবার বেলাকোবা হাইস্কুলের ছাত্রদের সঙ্গে একই নগেন্দ্রনাথ হাইস্কুলে সিট পড়েছিল বেলাকোবা গার্লসের মেয়েদের। তিনি বলেন, “আমার মেয়ে যখন পরীক্ষা দেবে আমি চাই না দুটি স্কুলে একসঙ্গে সিট পড়ুক। ওদের গোলমালের জন্য গার্লস স্কুলের মেয়েদের ক্ষতি হচ্ছে।” বেলাকোবা বাজার এলাকার ব্যবসায়ী গৌতম সরকার, অনিমেষ রায়, চন্দ্রশেখর পালচৌধুরীরা দোষী ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তি দাবি করেছেন। তারা বলেন, “স্কুলে টোকাটুকির জন্য শিক্ষকদের মারধর করা কখনই বরদাস্ত করা যায় না। আমরা দোষী ছাত্রদের কঠিন শাস্তি দাবি করছি।”

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy