হরিসাধন ঘোষ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
মুকুল রায়ের প্রতি দল ‘অবিচার করছে’ অভিযোগ তুলে তৃণমূল ছাড়লেন দলের দার্জিলিং জেলার সহ সভাপতি হরিসাধন ঘোষ।
এর আগে মুকুলকে দলে কোণঠাসা করা হচ্ছে বলে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হুমায়ুন কবীর, স্বপন ঘোষ ও শীলভদ্র দত্তর মতো তৃণমূলের নেতারা। কিন্তু মুকুলের প্রতি অবিচার হচ্ছে বলে দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে এই প্রথম তৃণমূলের কোনও নেতা দলত্যাগ করলেন।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ‘আসল বামপন্থী’ বলে উল্লেখ করে ২০১৩ সালে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন পাহাড়ের প্রবীণ সিপিআই নেতা হরিসাধনবাবু। তার মাত্র দু’বছর পরেই সোমবার ‘বিবেকের দংশনে’ দল ছেড়ে দিলেন তিনি।
এ দিন দলত্যাগ করার পরে সাংবাদিক বৈঠকে ক্ষোভে ফেটে পড়েন হরিসাধনবাবু। তাঁর অভিযোগ, “দলে নানা অনাচার চলছে। সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে জেলে যাওয়া সত্ত্বেও মদন মিত্রকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরানো হয়নি। অথচ মুকুল রায়ের সঙ্গে মত বিরোধ হতেই তাঁকে যে ভাবে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরানো হয়েছে, তা মানা যায় না।” এর পরেই হরিসাধনবাবুর দাবি, “বিবেকের দংশন হচ্ছিল অনেক দিন থেকেই। সেটা মুকুলবাবুকে বলেছিলাম। উনি এখন দল ছাড়তে বারণ করেছিলেন। কিন্তু, তৃণমূলে আর থাকতে পারলাম না। তাই সরলাম। তবে আগামী দিনে রাজনীতিতেই থাকব।” মুকুলবাবু বলেন, “হরিসাধনবাবু কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতা ছিলেন। উনি কী বলেছেন, আমি জানি না। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলব।”
তবে তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা কমিটির অনেকেরই দাবি, আসন্ন পুরভোটে প্রার্থীপদ নিশ্চিত করতে না পেরেই দল ছেড়েছেন হরিসাধনবাবু। রবিবার বিজেপির সঙ্গে আলাপ আলোচনার পরেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত বলেও জেলা তৃণমূল নেতাদের একাংশ দাবি করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, মুকুলবাবুকে সামনে রেখে দল ছেড়ে প্রচারের শিরোনামে থাকার চেষ্টা করছেন তিনি। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব জানান, হরিসাধনবাবু কেন দল ছেড়েছেন, জানি না। তবে তিনি পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। গৌতমবাবু বলেন, “আমরা বলেছি, দলের নিয়ম অনুযায়ী ওয়ার্ড কমিটি থেকে নাম প্রস্তাব করে জেলা কমিটিতে পাঠাতে হয়। সেখান থেকে প্রদেশ কমিটিতে যায়। অনুমোদন পেলে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়। সেই নিয়মটা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সেটা যদি কেউ না মানতে চান তা হলে কী করা যাবে।” হরিসাধনবাবুর অন্য অভিযোগ প্রসঙ্গে গৌতমবাবুর মন্তব্য, “ভিত্তিহীন অভিযোগ নিয়ে কিছু বলব না।”
সিপিআইয়ের প্রাক্তন দার্জিলিং জেলা সভাপতি হরিসাধনবাবু একদা শিলিগুড়ি পুরসভার ডেপুটি মেয়র ছিলেন। বছর দুয়েক আগে তিনি মুকুলবাবুর উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। এখন তৃণমূল ছেড়ে তিনি কি অন্য কোনও দলে যোগ দেবেন? হরিসাধনবাবুর জবাব, “বিজেপিতে যাব কি না, সেটা ঠিক করিনি। তবে বিজেপিতে যাব না, এটাও কখনও বলিনি।”
বিজেপির দার্জিলিঙের সাংসদ সূরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “হরিসাধনবাবু দীর্ঘদিনের নেতা। ওঁর মতো শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি কোন দলে থাকবেন বা কী করবেন, তা ওঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।” হরিসাধনবাবু বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন কি না, সে প্রশ্নে তিনি “এখনই কিছু বলব না।”
হরিসাধনবাবু দীর্ঘদিনের সিপিআই নেতা। ১৯৮৯ সালে শিলিগুড়ি পুরসভা হওয়ার পর তিনি ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে প্রথম ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৯৪ পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যান থাকেন। ১৯৯৪ সালে আসন সংরক্ষণের গেরোয় তিনি দাঁড়াননি। পরে ১৯৯৭ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে ডেপুটি মেয়র হন। সেই সময় থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি ডেপুটি মেয়র ছিলেন। তারপর ২০০৪ এর পুর নির্বাচনে তাঁকে আর টিকিট দেয়নি দল। ন’বছর রাজনীতির বাইরে ছিলেন বর্ষীয়ান এই নেতা। এরপর ২০১৩ সালে ফের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তিনি নজরে আসেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy