Advertisement
E-Paper

মাঠে আছেন, কাদায় নেমে বার্তা রাহুলের

বিশ মিনিটের ঝড়-বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড ময়দান। কোথাও থকথকে কাদা। কোথাও জল থইথই। সভাস্থল ঘেরা সামিয়ানা ছিঁড়ে ফর্দাফাই। তাঁর জন্য বাঁধা মঞ্চের চাঁদোয়া-কাঠামো ভেঙে ঝুলছে। তবু যাঁর জন্য আয়োজন, তিনি দমলেন না!

সঞ্জয় সিংহ ও দেবারতি সিংহচৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৪ ০২:৫৭
কাদা ডিঙিয়ে মঞ্চের পথে রাহুল গাঁধী। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

কাদা ডিঙিয়ে মঞ্চের পথে রাহুল গাঁধী। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।

বিশ মিনিটের ঝড়-বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড ময়দান। কোথাও থকথকে কাদা। কোথাও জল থইথই। সভাস্থল ঘেরা সামিয়ানা ছিঁড়ে ফর্দাফাই। তাঁর জন্য বাঁধা মঞ্চের চাঁদোয়া-কাঠামো ভেঙে ঝুলছে। তবু যাঁর জন্য আয়োজন, তিনি দমলেন না!

কাদা-জল ঠেলেই মঙ্গলবার বিকালে কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে শহিদ মিনার ময়দানে হাত মেলালেন রাহুল গাঁধী। নীল জিনস, সাদা কুর্তা, পায়ে পাম্প শু্য কাদা-জলে মাখামাখি। ভেঙে-পড়া বেড়া ডিঙিয়ে উচ্ছ্বসিত কর্মীদের হুড়মুড় করে এগিয়ে আসতে দেখে কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে বলতে শোনা গেল, “ধীরে ভাইয়া, ধীরে! চোট লেগে যাবে!”

তৃণমূলের সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়ার পরে রাজ্যের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দিয়ে একা লড়ছে কংগ্রেস। দক্ষিণবঙ্গের কংগ্রেস কর্মীদের প্রত্যাশা ছিল রাহুলের কাছ থেকে লড়াইয়ের বার্তা শোনার। প্রকৃতি বাদ সাধায় সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। কিন্তু বক্তৃতা করতে না-পারলেও বিপর্যস্ত শহিদ মিনারের মাঠে ঝাঁকি দর্শন দিয়েই সনিয়া-তনয় প্রতীকী বার্তা দিয়ে গেলেন, ময়দান ছাড়া চলবে না!

বিকেল পৌনে চারটের মধ্যেই কালবৈশাখীর দাপটে সভা পণ্ড। আগরতলা থেকে তিনি যখন কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছেছেন, তখনই এসপিজি মারফত খবর এসেছে যে, সভা করার পরিস্থিতিই নেই। রাহুলের সঙ্গী প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী ফোনে শহিদ মিনার ময়দানে উপস্থিত দলীয় নেতৃত্বের কাছে পরিস্থিতি জানতে চাইছিলেন। অধীর-ঘনিষ্ঠ, কান্দির বিধায়ক অপূর্ব সরকার তাঁকে জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। মাইকের সংযোগ ব্যবস্থাও জলের তলায়। কিন্তু ঝড়-জলের মধ্যেও লোক রয়েছে। পরে অধীর বলেন, “ভিজেও মানুষ তাঁর জন্য অপেক্ষা করছে শুনেই রাহুলজি বলেন, চলুন!” পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারেই শহিদ মিনারের উদ্দেশে রওনা দেন রাহুল। জল-কাদায় ভরা মাঠে তখন রাহুলের কাটআউট নিয়ে এককোণায় দাঁড়িয়ে মানস শাসমল। ঝোড়ো হাওয়া, অঝোর বৃষ্টিতে কাটআউট মাটিতে পড়ে যাচ্ছে দেখে সেটিকে তুলে দাঁড় করিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন কাকদ্বীপের যুবক। পৌনে ৫টা নাগাদ শহিদ মিনারের মাথায় হেলিকপ্টার উড়তে দেখেই চিৎকার করে উঠেছিলেন মানস, গারুলিয়ার পার্থ দত্ত, বোটানিক্যাল গার্ডেনের পঙ্কজ পাল, হাসনাবাদের মহম্মদ আনোয়ার গাজি, মহম্মদ রাজুর মতো অসংখ্য যুবক। উত্তর ২৪ পরগনার গারুলিয়ার এক কাউন্সিলরও ভিড়ে কংগ্রেসের হাতে নিয়ে বলছিলেন, “তৃণমূলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কংগ্রেসই লড়তে শিখিয়েছে। দুর্যোগের পরেও দেখেছেন, কত লোক মাঠে!”

শহিদ মিনার ময়দানে তাঁর থাকার কথা ছিল ঘণ্টাখানেক। থাকলেন সাকুল্যে পাঁচ মিনিট। কিন্তু তার মধ্যেই ভাঙা মঞ্চে উঠে পড়লেন। মঞ্চে তখন দলীয় প্রার্থী অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়, মৌসম বেনজির নূর এবং মানস ভুঁইয়া ছাড়াও রয়েছেন পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য। মঞ্চে পাশে দাঁড়িয়ে এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ খান এবং সম্পাদক শুভঙ্কর সরকার রাহুলের নামে স্লোগান দিচ্ছেন। মাঠের কর্মী-সমর্থকরাও গলা মেলাচ্ছেন। এর পরের দৃশ্যেই উচ্ছ্বসিত রাহুলকে দেখা গিয়েছে শ্রোতাদের সঙ্গে হাত মেলাতে। রাহুলের পিঠে হাত রেখে মানসবাবু বলেন, “আমি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ঘাটালে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছি বলে আমাকে উনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন!” ভোটের আগে তাঁকে আবার কলকাতায় আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রদীপবাবু। রাহুল সম্মতি দিয়েছেন। পার্ক সার্কাস ময়দান, নেতাজি ইন্ডোর চেয়েও পাওয়া যায়নি। শহিদ মিনারের সভাও বৃষ্টিতে পণ্ড। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার রসিকতা, “শহিদ মিনারে কংগ্রেসের সভা শহিদ হয়েছে!”

rahul gandhi debarati sinhachowdhury sanjay sinha monument congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy