Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যে স্থায়ী অফিস খুলছে এনআইএ

কলকাতায় এ বার পুরোদস্তুর অফিস খুলে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের তদন্তে নামছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।এত দিন গুয়াহাটি থেকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তঘেঁষা এলাকায় সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের উপরে নজরদারি করত তারা। সেখান থেকেই জাল নোট পাচার-সহ এ রাজ্যের মামলাগুলির দেখভাল করা হতো। কিন্তু যে ভাবে বিভিন্ন মৌলবাদী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গের আনাচে-কানাচে জাল বিছোনোর চেষ্টা করছে তাতে অসম থেকে তদন্তে নিয়ন্ত্রণ রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে করছে এনআইএ।

ভবানী ভবনে এনআইএ-র আইজি সঞ্জীব সিংহ। শনিবার।  —নিজস্ব চিত্র

ভবানী ভবনে এনআইএ-র আইজি সঞ্জীব সিংহ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র

দেবজিৎ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৪
Share: Save:

কলকাতায় এ বার পুরোদস্তুর অফিস খুলে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের তদন্তে নামছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

এত দিন গুয়াহাটি থেকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তঘেঁষা এলাকায় সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের উপরে নজরদারি করত তারা। সেখান থেকেই জাল নোট পাচার-সহ এ রাজ্যের মামলাগুলির দেখভাল করা হতো। কিন্তু যে ভাবে বিভিন্ন মৌলবাদী সংস্থা পশ্চিমবঙ্গের আনাচে-কানাচে জাল বিছোনোর চেষ্টা করছে তাতে অসম থেকে তদন্তে নিয়ন্ত্রণ রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে বলে মনে করছে এনআইএ। তাই এ বার খাস কলকাতাতেই পাকাপাকি ভাবে অফিস খুলছে ওই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।

নবান্ন সূত্রের খবর, দিন কুড়ি আগে রাজ্য সরকারকে চিঠি লিখে এ ব্যাপারে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছে এনআইএ। কিন্তু সেই আবেদন ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকায় এখন নিজেদের উদ্যোগেই কলকাতায় অফিস খুঁজতে শুরু করেছে তারা। এনআইএ-র এক মুখপাত্র বলেন, “দিল্লিতে আমরা সম্প্রতি এক একর জমি পেয়েছি। খুব শীঘ্র সেখানে নতুন অফিস ভবন তৈরি হবে। অন্য রাজ্যেও যেখানে আমাদের অফিস আছে তার ভাড়া আমরাই গুনছি। পশ্চিমবঙ্গেও আমরা অফিস খুঁজে নেব। একটু হয়তো সময় লাগবে। তাতে অবশ্য কাজ আটকে থাকবে না।”

কিন্তু কেন কলকাতায় পুরোদস্তুর অফিস খোলা জরুরি হয়ে পড়ল? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, পশ্চিমবঙ্গের দোরগোড়াতেই বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর (আইবি) যে রিপোর্ট দিচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের হাসিনা সরকারের তাড়া খেয়ে সে দেশের সন্ত্রাসবাদীদের এ রাজ্যে লুকিয়ে থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তার উপরে যে ভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন-এর পশ্চিমবঙ্গে যোগাযোগের নতুন নতুন সূত্র মিলছে তাতে অসম বা দিল্লি থেকে এ রাজ্যে নজরদারি কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাঁর মতে, গুয়াহাটির অফিস থেকে এনআইএ উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যের সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের উপরে নজরদারি করে। তার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে নজরদারি করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই কলকাতায় পাকাপাকি ভাবে অফিস খুলতে উঠেপড়ে লেগেছে এনআইএ। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের পরে সেই উদ্যোগ গতি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই কর্তা।

দিল্লিতে সদর অফিস ছাড়া বর্তমানে দেশের পাঁচটি শহরে শাখা অফিস রয়েছে এনআইএ-র। সেগুলি হল মুম্বই, হায়দরাবাদ, কোচি, লখনউ ও গুয়াহাটি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, মৌলবাদী কাজকর্মের পরিধি ও গুরুত্ব বিচার করে মুম্বই, হায়দরাবাদ ও লখনউ অফিসে ডিআইজি ও বাকি দুই অফিসে এসপি পদমর্যাদার অফিসারকে যাবতীয় তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে পাকাপাকি ভাবে অফিস খোলার আগেই অবশ্য পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক জন অফিসারকে কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়েছে এনআইএ। বিক্রম খালাটে নামে ওই আইপিএসের নেতৃত্বে আপাতত সল্টলেকের সিআরপিএফ ক্যাম্পাসে অস্থায়ী অফিস খুলে সেখান থেকেই বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের তদন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনআইএ।

২০০৮-এ মুম্বই হামলার পরই জন্ম হয় ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার। তৎকালীন ইউপিএ সরকার চেয়েছিল, এমন একটি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা গড়া হোক, যারা দেশ জুড়ে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের উপরে নজরদারি করবে এবং শুধু সে সংক্রান্ত মামলারই তদন্ত করবে। এতে যেমন সন্ত্রাসবাদীদের গতিবিধি গোয়েন্দাদের লাগাতার নজরে থাকবে, তেমনই মামলাগুলিও দ্রুত শেষ হবে। সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজ্যের আইপিএস অফিসারদের নিয়ে সিবিআইয়ের তুলনায় ছোটই একটি সংস্থা তৈরি করা হয় দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, ওই সংস্থা যাতে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারে তার জন্য তদন্তের ভার দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্যের অনুমতির বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি এনআইএ আইনে। কেবল তথ্য আদানপ্রদান ও তদন্তের সুবিধার্থে সব রাজ্যেই এক জন ‘নোডাল অফিসার’কে চিহ্নিত করেছে এনআইএ। পশ্চিমবঙ্গের তরফে ওই দায়িত্ব ছিল সিআইডি-র প্রাক্তন এডিজি ত্যাগরাজুর। কিন্তু তাঁর অবসরের পরে আর কারও নাম এনআইএ-র কাছে পাঠানো হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jamaat e islami state nia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE