Advertisement
E-Paper

‘রিলিজ’ হলেও চড়-কাণ্ডের দেবাশিস কেন পিজিতেই, প্রশ্নে স্বাস্থ্য দফতর

এসএসকেএম হাসপাতালে মদন মিত্র বা সৃঞ্জয় বসুদের দিনের পর দিন ভর্তি রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার সেই একই অভিযোগ উঠল ‘চড় কাণ্ড’-এর দেবাশিস আচার্যের ক্ষেত্রে। এসএসকেএম থেকে এক বার ছেড়ে দিয়েও তাঁকে ফেরানো হয়েছিল। এ বার রিলিজ অর্ডার লেখার পরেও তা কার্যকর না করে দেবাশিসকে এসএসকেএমেই রেখে দেওয়া হল। ৪ জানুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের সভায় যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মারেন এই দেবাশিস।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৫

এসএসকেএম হাসপাতালে মদন মিত্র বা সৃঞ্জয় বসুদের দিনের পর দিন ভর্তি রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে একাধিক বার প্রশ্ন উঠেছিল। এ বার সেই একই অভিযোগ উঠল ‘চড় কাণ্ড’-এর দেবাশিস আচার্যের ক্ষেত্রে। এসএসকেএম থেকে এক বার ছেড়ে দিয়েও তাঁকে ফেরানো হয়েছিল। এ বার রিলিজ অর্ডার লেখার পরেও তা কার্যকর না করে দেবাশিসকে এসএসকেএমেই রেখে দেওয়া হল।

৪ জানুয়ারি পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের সভায় যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চড় মারেন এই দেবাশিস। তার পরেই উপস্থিত তৃণমূল সমর্থক ও অনুগামীরা তাঁকে মারধর করেন। ৮ জানুয়ারি তাঁকে এসএসকেএমে ভর্তি করা হয়। ছাড়া হয় ২৭ জানুয়ারি। কিন্তু সে দিনই তাঁকে এসএসকেএম থেকে তমলুক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে পুলিশ ফের এসএসকেএমে ভর্তি করে।

কেন ফেরানো হল এবং তার পরেও চোদ্দো দিন কেন দেবাশিসকে ভর্তি রাখা হয়েছে, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ৭ ফেব্রুয়ারি, শনিবার দেবাশিস পুরো সুস্থ আছে জানিয়ে রিলিজ অর্ডার লিখে দেন তাঁরা। কিন্তু তার পরেও ওই যুবককে হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাননি বাড়ির লোক। সোমবার ৯ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসকেরা জানান, দেবাশিসের মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে। তাই রিলিজ পিছিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি করা হয়েছে।

আদতে যে দেবাশিসের তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা নেই, সে কথা স্বীকার করেছেন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষই। রিউম্যাটোলজি-র মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে পুরুষদের মাত্র ২টি কেবিনের মধ্যে একটি টানা আটকে থাকায় তাঁরা যথেষ্ট বিরক্ত। দেবাশিসকে ভর্তি রাখার পিছনে প্রশাসনিক চাপের ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা। ক্ষুব্ধ এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কিছু ডাক্তারকে চাপ দিয়ে দেবাশিস আচার্যের ছুটি পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

দেবাশিসের বাবা দেশবন্ধু আচার্য বলেছেন, “ও এখনও সুস্থ হয়নি। তাই রিলিজ অর্ডার হয়েছে শুনে পুলিশকে অনুরোধ করলাম যেন এখন নিয়ে যাওয়া না হয়। ওরাই হাসপাতালের সঙ্গে কথা বলে ১৬ তারিখ রিলিজ ডেট ঠিক করল।” কী সমস্যা রয়েছে দেবাশিসের? দেশবন্ধুবাবুর জবাব, “ছেলের মাথায় আর আঙুলে খুব ব্যথা। চোখের উপরেও রক্ত জমে আছে। মাঝে মাঝে কেমন একটা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। এখন বাড়ি নিয়ে গেলে সামলাতে পারব না।”

কেন রিলিজ অর্ডার লেখার পরেও দেবাশিসকে ছাড়া হল না? বা উল্টো দিক থেকে বললে, যদি উনি অসুস্থই হয়ে থাকেন তা হলে শনিবার রিলিজ অর্ডার লেখা হয়েছিল কেন? দেবাশিসের চিকিৎসক অমিতাভ সরকার শুধু বলেন, “মাফ করবেন, আমি কিছু বলব না। আমাকে প্রশ্ন করবেন না।” যিনি রিলিজ অর্ডারে সই করেছিলেন, সেই ডেপুটি সুপার সর্বেশ্বর মণ্ডল বলেন, “আমি সই করেছিলাম। তার পরেও না ছাড়া হলে সেটা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দায়িত্ব।”

এসএসকেএমের অধ্যক্ষ প্রদীপ মিত্র জানান, কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে পইপই করে বলা হয়েছে, হাসপাতালে রোগী-ভর্তি এবং রোগী সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও বেশ কিছু দিন ভর্তি রেখে দেওয়ার জন্য দু’দফায় বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মাধ্যমে চাপ তৈরির প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছে। কিছু চিকিৎসক এই চাপের কাছে মাথা নোয়াচ্ছেন। তাঁর কথায়, “এ ভাবে চললে শয্যা খালি হবে না। ফলে প্রকৃত অসুস্থ রোগীরা ভর্তি হতে পারবেন না।”

প্রদীপবাবুর দাবি, গত ২ ফেব্রুয়ারি চিকিৎসক অমিতাভ সরকারকে ডেকে তিনি জানতে চান দেবাশিসকে কবে ছাড়া হবে। তখন অমিতাভবাবু জানান, ওই যুবকের আঙুলে প্লাস্টার আছে। ৫ ফেব্রুয়ারি প্লাস্টার কাটার পরেই ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তা হয়নি। দেবাশিসের দৈনিক রিপোর্টও অমিতাভবাবুকে জমা দিতে বলা হয়। তা এখনও জমা পড়েনি বলেও জানান প্রদীপবাবু। তাঁর দাবি, এর পরে চিকিৎসকেরা বলতে শুরু করেন দেবাশিসের কিছু মানসিক সমস্যা হচ্ছে। অথচ ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’র প্রধান প্রদীপ সাহা বলেন, “আমি ওঁকে পরীক্ষা করেছিলাম। মানসিক ভাবে উনি সম্পূর্ণ স্থিতিশীল। অস্থি সংক্রান্ত সামান্য অসুবিধা রয়েছে। আর চোখে একটু রক্ত জমে রয়েছে। এর জন্য আপাত ভাবে হাসপাতালে থাকার দরকার হয় না।”

কিন্তু দেবাশিস আচার্যকে এসএসকেএমে রেখে দেওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকদের উপর চাপ আসছে কেন? কারা চাপ দিচ্ছেন?

দেবাশিসের বাবা দেশবন্ধুবাবুর কথায়, “২৭ জানুয়ারি এসএসকেএম ওকে ছেড়ে দেওয়ার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেক্রেটারির দ্বারস্থ হয়েছিলাম। অনুরোধ জানিয়েছি, যেন আরও কিছু দিন দেবাশিসকে হাসপাতালে রাখা হয়। উনিই এসএসকেএমে ফেরত আসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।”

এসএসকেএম সূত্রের খবর, দেবাশিসকে হাসপাতালে রেখে দেওয়ার বিষয়টি তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন তৃণমূল কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের চিকিৎসা সেলের সম্পাদক শান্তনু সেন। শান্তনুবাবুর বক্তব্য, “সপ্তাহ দুয়েক আগে দেবাশিসের বাবা-মা কালীঘাটে আসেন। সুব্রত বক্সী আমাকে বিষয়টি দেখতে বলেন। ওঁরা অনুরোধ করেন, যাতে দেবাশিসকে তাড়াতাড়ি এসএসকেএম থেকে ছেড়ে না দেওয়া হয়। আমি সুপারকে বলে দিয়েছিলাম। ওইটুকু হেল্প করে দেওয়াকে চাপ বলে না। ওঁরা রোগীকে সুস্থ মনে করলে ছেড়ে দেবেন। অনন্তকাল তো রেখে দিতে বলা হয়নি।”

এসএসকেএমের চিকিৎসকেরা অবশ্য জানান, তৃণমূলের উপর মহল থেকে এইটুকু নির্দেশ আসাই যথেষ্ট। এর পরে আর কোনও চিকিৎসক ওই রোগীকে নিজের থেকে ‘রিলিজ’ করার ঝুঁকি নিতে চাইবেন না।

parijat bandyopadhyay debasish acharyay abhisekh bandyopadhyay manhandled
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy