Advertisement
E-Paper

রাস্তায় দেখা হলে বলত সেলাম সাব

পাড়ার মাতব্বরদের দেখলে হাত কচলে সবিনয়ে সে বলত, ‘সেলাম সাব’। পেশায় গাড়ির মিস্ত্রি, বছর তিরিশের দোহারা যুবকটিকে হাড়ে-হাড়ে না হলেও মোটামুটি চিনে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। ছিঁচকে চুরি, ছিনতাই, মোটরবাইক চুরি এমনকী শ্লীলতাহানির অভিযোগেও মাঝেমধ্যে ধরা পড়তে দেখা গিয়েছে তাকে

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৪ ২১:১৭

পাড়ার মাতব্বরদের দেখলে হাত কচলে সবিনয়ে সে বলত, ‘সেলাম সাব’।

পেশায় গাড়ির মিস্ত্রি, বছর তিরিশের দোহারা যুবকটিকে হাড়ে-হাড়ে না হলেও মোটামুটি চিনে গিয়েছিলেন প্রতিবেশীরা। ছিঁচকে চুরি, ছিনতাই, মোটরবাইক চুরি এমনকী শ্লীলতাহানির অভিযোগেও মাঝেমধ্যে ধরা পড়তে দেখা গিয়েছে তাকে। কখনও সেই সব ঘটনায় পাড়ার ছেলেরা মারধর করলে কেঁদেকেটে দোষ স্বীকার করে বেঁচেছে। ওয়াটগঞ্জের কলুপাড়ার নেশাড়ুদের সান্ধ্য ঠেকে অবশ্য রোজই দেখা

যেত তাকে।

তবু মহম্মদ হামিদ ওরফে রাজকে এতটা বিপজ্জনক মনে হয়নি তার পাড়ার বাসিন্দাদের। ডেন্ট মিশন রোড, বাবুবাজার, ফ্যান্সি মার্কেট এলাকায় গত পাঁচ বছর ধরে যথেষ্ট পরিচিত মুখ সেই রাজই খিদিরপুর গণধর্ষণ-কাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে ধরা পড়ার পর তাই তাঁরা একটু হকচকিয়ে গিয়েছেন। যেতে আসতে ‘সেলাম সাব’ আওড়ানো রাজ যে মেয়ে ভোলানোতেও সিদ্ধহস্ত, সেটাও প্রতিবেশীদের অনেকেরই মনে হয়নি।

যদিও রাজের নারীঘটিত গুণপনার বেশ কিছু নমুনা ইতিমধ্যেই হাতে পেয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে একাধিক মহিলার তার ঘনিষ্ঠতার কথা। ধরা পড়ার পরে রাজ নিজেই তদন্তকারীদের কাছে সগর্বে দাবি করেছিল যে, সোনাগাছি এবং ওয়াটগঞ্জের যৌনপল্লির মহিলাদের মধ্যে সে জনপ্রিয়। তদন্তে অবশ্য জানা গিয়েছে, ২০১১ সালে মেটিয়াবুরুজের এক তরুণীকে বিয়ে করে বন্দর এলাকায় রীতিমতো সংসার পেতেই বসেছিল রাজ। কিন্তু সেই সংসার এক বছরের বেশি টেকেনি। পুলিশকে রাজ জানিয়েছে, ওই এক বছরে মাঝেমধ্যেই ফ্ল্যাট কেনার জন্য তার উপরে চাপ দিত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। কিন্তু ফ্ল্যাট কেনার রেস্ত সে জোগাড় করতে পারেনি। কিছু দিন বাদে তার স্ত্রী বাপের বাড়িতে ফিরে যান।

পুলিশের দাবি, প্রথমটায় রাজ নিজের পরিচয় বিশদে জানাতে চায়নি। খোঁজখবর করে জানা যায়, তার আদি বাড়ি বাংলাদেশে। বছর আটেক আগে সে কলকাতায় আসে। রাজ নিজেকে গাড়ি সারানোর মিস্ত্রি বলে দাবি করলেও লালবাজারের গোয়েন্দারা জেনেছেন, বন্দর এলাকার পুলিশের খাতায় তার নানা রকম হাতযশের নমুনা বেশ কয়েক বছর ধরেই ঠাঁই পাচ্ছিল। সন্ধের পর অনেক রাত পর্যন্ত রাজের ঠেক ছিল হেরোইন ও মদের আড্ডা। তবে রবিবার সন্ধে ৭টার পর তাকে আর ওই ঠেকে দেখা যায়নি বলে পুলিশ জেনেছে।

এ হেন রাজের মাথা গোঁজার ঠিকানার গল্পটিও যথেষ্ট গোলমেলে। খাতায়-কলমে সেই ঠিকানা হল ৫১, সুধীর বসু রোড (জামালপাড়া)। তবে ওই বাড়ির তিনতলার ঘুপচি ফ্ল্যাটে গিয়ে এ দিন কোনও প্রাণীর দেখা মেলেনি। আশপাশের বাসিন্দারা জানালেন, আগে রাজের সঙ্গে বছর চল্লিশের এক মহিলাও ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন। তিনি নাকি রাজকে নিজের দেওর বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। বছর দেড়েক আগে ওই ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়ে চলে গিয়েছিলেন মহিলা। রাজও তখনই ওই তল্লাট ছেড়ে চলে যায়। ইদানীং খিদিরপুরের কলুপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে দু’জনে।

কলুপাড়ায় একটি চারতলা বাড়ির দোতলার যে ছোট ফ্ল্যাটটিকে ‘রাজের বাড়ি’ বলে চিনিয়ে দিলেন স্থানীয়রা, তার দরজাতেও এ দিন তালা ঝুলছিল। পাশের ফ্ল্যাটের লোকেরা জানালেন, রাজের ‘বৌদি’ই মাসে দেড় হাজার টাকায় ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ ধরা পড়ার সময় থেকেই ওই মহিলাও যেন উবে গিয়েছেন!

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বছর চারেক আগে ওয়াটগঞ্জ থানার ময়লাডিপো এলাকায় একটি বস্তিতে থাকত রাজ। তখনই তার থেকে বয়সে কিছুটা বড় এক মহিলার সঙ্গে পরিচয় হয়। ক্রমে জামালপাড়ায় রাজ এবং ওই মহিলা একসঙ্গে থাকতে শুরু করে। ওই মহিলার খোঁজ মিললে রাজের অন্য সঙ্গীদের বিষয়ে তথ্য মিলতে পারে বলে আশা পুলিশের।

rape khidirpore
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy