Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলশিক্ষায় পরিকাঠামোর বিবর্ণ ছবি প্রকট সমীক্ষায়

দেশে শিক্ষার অধিকার আইন (রাইট টু এডুকেশন, সংক্ষেপে আরটিই) কার্যকর হয়েছে চার বছর হয়ে গেল। তবু পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক (প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি) শিক্ষার পরিকাঠামো নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। আগের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গোটা দেশের প্রেক্ষাপটে দেখলে পশ্চিমবঙ্গ এখনও পিছিয়ে বলে জানিয়েছে এক সমীক্ষা।

সাবেরী প্রামাণিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:৪৭
Share: Save:

দেশে শিক্ষার অধিকার আইন (রাইট টু এডুকেশন, সংক্ষেপে আরটিই) কার্যকর হয়েছে চার বছর হয়ে গেল। তবু পশ্চিমবঙ্গে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক (প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি) শিক্ষার পরিকাঠামো নিয়ে উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। আগের তুলনায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গোটা দেশের প্রেক্ষাপটে দেখলে পশ্চিমবঙ্গ এখনও পিছিয়ে বলে জানিয়েছে এক সমীক্ষা। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার করা দেশব্যাপী ওই সমীক্ষার দাবি: মহারাষ্ট্র-গুজরাত-কেরল-কর্নাটক-অন্ধ্র-হিমাচল বা হরিয়ানার মতো অনেক রাজ্য এই মুহূর্তে প্রাথমিক শিক্ষা-পরিকাঠামোর নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি ফি বছর স্কুল-শিক্ষা নিয়ে সমীক্ষা চালায়। এমনকী, বাম আমলে তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজ্যের বেশ ক’টি জেলার জেলাশাসককে শো-কজও করা হয়েছিল। তখন রাজ্যের স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন পার্থ দে। বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য তাদের রিপোর্টকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। “রাজ্যে সব মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার স্কুল। সমীক্ষা হয়েছে মাত্র ৪৬১টিতে স্কুলে। এতে কিছু বোঝা যায় না।” প্রতিক্রিয়া ব্রাত্যবাবুর। পাশাপাশি তাঁর দাবি, “আরটিই-আইন কার্যকর করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের বিচারে পশ্চিমবঙ্গ প্রথম সারিতেই আছে।”

ব্রাত্যবাবু এ হেন দাবি করলেও তাঁর দফতরের তথ্য কিন্তু অন্য কথা বলছে। তাতে পরিষ্কার, আরটিই-র অনেক মাপকাঠিতে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান যথেষ্ট করুণ। রাজ্য স্কুল-শিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১:৪১, আরটিই অনুযায়ী যা থাকার কথা ১:৩০। প্রাথমিক স্তরে মাত্র ৪১% স্কুলে মেয়েদের জন্য আলাদা শৌচালয় আছে, উচ্চ প্রাথমিকে ৫০% স্কুলে। পরিকাঠামোয় এ ধরনের ঘাটতির কথা অবশ্য ব্রাত্যবাবু অস্বীকার করেননি। তাঁর আশ্বাস, “এখনও যে সব খামতি রয়ে গিয়েছে, অবিলম্বে সেগুলো দূর করা হবে।”

৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালে আরটিই-আইন পাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওই আইন মোতাবেক, প্রতিটি স্কুলে পরিস্রুত পানীয় জলের সুব্যবস্থা থাকতে হবে, সঙ্গে চাই শৌচালয়, গ্রন্থাগার, খেলার মাঠ, মিড-ডে মিলের জন্য পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত রান্নাঘর ইত্যাদি। স্কুল চত্বর পাঁচিলে ঘেরা বাধ্যতামূলক। রাজ্য স্কুল-শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “আরটিই-র যাবতীয় ক’টি মাপকাঠি মেনে ২০১৩-র ৩১ মার্চের মধ্যে পরিকাঠামো গড়ে তোলার কথা ছিল। তার পরেও এক বছর কেটে গিয়েছে। এখনও কাজ শেষ করা যায়নি।” ওঁর আক্ষেপ, “বহু জায়গায় চাহিদা মতো শিক্ষক-শিক্ষিকা নেই। যাঁরা আছেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ নিয়ে সমস্যা। উপরন্তু বহু স্কুলে টয়লেট থাকলেও পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। অন্যান্য পরিকাঠামোর হালও তথৈবচ।”

প্রসঙ্গত, স্কুল-শিক্ষার পরিকাঠামোগত পরিস্থিতি যাচাই করতে প্রতীচী ট্রাস্ট ২০১২-য় পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ জেলায় একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল। তাতেও দেখা গিয়েছে, অবস্থা মোটে সন্তোষজনক নয়। আবার কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল (জয়েন্ট রিভিউ মিশন)-এর রিপোর্টেও রাজ্যে মিড-ডে মিলের মান, রান্নাঘরের পরিচ্ছন্নতা প্রভৃতি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির সমীক্ষাতেও সেই দুর্দশার ছবি প্রকট। তাতে এ-ও দেখা যাচ্ছে, এ রাজ্যে ৬-১৪ বছর বয়সী ছেলেমেয়েদের ৩% (প্রায় চার লক্ষ) স্কুলেই যায় না। আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও প্রায় একই রকম তথ্য পেয়েছে। রাজ্যের ১১টি জেলায় ২৩৪টি স্কুলে সমীক্ষা চালিয়ে তারা দেখেছে, প্রায় ৫০% স্কুলে মেয়েদের পৃথক শৌচালয় নেই। পানীয় জলের জোগান নেই অন্তত ২০% স্কুলে। গোটা দেশের নিরিখে তো বটেই, অন্য অনেক রাজ্যের তুলনায় যা যথেষ্ট কম।

প্রাক্তন স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী পার্থবাবুর অভিমত, এ জাতীয় সমীক্ষার উপরে যেমন একশো শতাংশ নির্ভর করা যায় না, তেমন একেবারে উড়িয়ে দেওয়াও ঠিক নয়। পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, “রাজ্যে জমি-সঙ্কট তৈরি হয়েছে। তাই নবগঠিত স্কুলগুলোয় পরিকাঠামোর সমস্যা। তা ছাড়া সাধারণ মানুষের সুবিধার কথা মাথায় রেখে এ রাজ্য স্কুল-শিক্ষাক্ষেত্রে সে ভাবে বেসরকারিকরণের পথে হাঁটেনি। অন্য অনেক রাজ্য হেঁটেছে। তাই সেখানে পরিকাঠামোগত ঘাটতি তুলনায় কম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saberi pramanik education infrastructure
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE