কৃষ্ণগঞ্জে তৃণমূলকে রুখতে মরিয়া সব পক্ষ। তবে বিজেপির উত্সাহ সব থেকে বেশি। বসিরহাট উপনিবার্চনে জেতার পর বনগাঁ এবং কৃষ্ণগঞ্জ নিয়েও তারা সমান আশাবাদী। তাই আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামছে তারা।
বিজেপি চাইছে বিধানসভা এলাকার নেতৃত্বের সঙ্গে বাইরের নেতৃত্বকে জুড়ে দিতে। তাতে নাকি তৃণমূলের সন্ত্রাস রুখতে সুবিধা হবে। সেই অনুযায়ী নিপুন স্তর বিন্যাস করে ফেলেছে তারা। কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের সাতটি ও হাঁসখালি ব্লকের আটটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা। এই বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য এক জন জেলা স্তরের নেতাকে ‘ইনচার্জ’ করা হয়েছে। তাঁর নীচে থাকবেন দু’জন ব্লক ইনচার্জ। তাঁদের নীচে জেলা পরিষদ আসন স্তরে প্রতিটি ব্লকে দু’জন করে ‘ইনচার্জ’। সর্বশেষ স্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত ‘ইনচার্জ’। মজা হল এঁরা সকলেই হবেন বিধানসভা এলাকার বাইরের বাসিন্দা। তবে জেলাস্তরের পদাধিকারীদের সঙ্গে থাকবেন স্থানীয় বিভিন্ন স্তরের সাংগঠনিক সভাপতিরা। আর জেলা পরিষদ আসন স্তরে বাইরের ‘ইনচার্জ’দের সঙ্গে থাকবে সেই আসনের স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা।
কিন্তু কেন বাইরের নেতৃত্বকে এতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? তবে কি স্থানীয় নেতৃত্বের উপর ভরসা করা যাচ্ছে না?
বিজেপি-র জেলা সভাপতি কল্যাণ নন্দী বলেন, “আসলে তৃণমূলের সন্ত্রাস মোকাবিলায় এটা একটা কৌশল। অনেক সময় স্থানীয় নেতৃত্ব শাসক দলের সন্ত্রাসের মুখে মনোবল হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের ওই অঞ্চলেই বসবাস করতে হয়। তাই একটা চাপ থেকেই যায়। কিন্তু যাঁরা বাইরে থেকে যাবেন তাঁদের সেই ভয়টা থাকবে না। তাছাড়া এর ফলে একেবারে নিচুস্তর পর্যন্ত জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা সম্ভব হবে।”
এই বাইরে থেকে নেতৃত্ব ঠিক করার বিষয়টা থাকছে একেবারে নিচু স্তর পর্যন্ত। একজন গ্রাম পঞ্চায়েত ইনচার্জের দায়িত্বে থাকবে তিন থেকে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত। মোট ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটির জন্য দু’জন করে বুথ ইনচার্জ থাকবেন। এঁরা হবেন সেই ব্লক স্তরের কার্যকর্তা। কিন্তু অন্য গ্রাম পঞায়েত থেকে তাঁদের নিয়ে আসা হবে। খোঁজা হচ্ছে এমন নেতাদের, যাঁদের মোটর বাইক আছে। যাতে তাঁরা প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেরাই দ্রুত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে যেতে পারেন।
এ দিকে বনগাঁ লোকসভা ও কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচন তৃণমূলের ‘সম্মানের’ লড়াই শুধু নয়, অস্তিত্বের লড়াইও বটে। বিরোধীরা মনে করছেন ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচনেই বোঝা যাবে শাসকদলের জনসমর্থনের ভিত্তিতে ঠিক কতটা ভাঙন ধরেছে। অন্যদিকে বসিরহাট বিধানসভা উপনির্বাচনে বিজেপির কাছে পরাজয়ের পরে এই দু’টি আসনে তৃণমূল আর কোনও রকম ঝুঁকি নেবে না।
এমনটা ধরে নিয়ে ঘুঁটি সাজাচ্ছে সিপিএমও। বিশেষ করে ঘুঘড়াগাছি ঘটনার পর। গ্রামের জমি দখল ঠেকাতে গিয়ে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের গুলিতে অপর্ণা বাগের খুনের পর এলাকার মানুষের প্রতিরোধের ফলে এই এলাকায় তৃণমূল নেতারা ঢুকতে পারেনি। ফলে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী সিপিএম। নির্বাচনেও ঘুঘড়াগাছিকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের মোকাবিলা করতে চাইছে তারা। দলের জেলা সভাপতি সুমিত দে বলেন, “মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিরোধ কাকে বলে ঘুঘড়াগাছি তা দেখিয়ে দিয়েছে। গুলি করে খুন, হুমকি সেখানকার মানুষকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। বরং প্রতিরোধের সামনে তৃণমূল ওই এলাকাতেই ঢুকতে পারছে না।” তিনি জানান, তৃণমূল কোথাও সন্ত্রাস করলে ঘুঘড়াগাছি মডেলে মানুষকে দিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন তাঁরা। সেইসঙ্গে এলাকায় মিটিং, মিছিল হবে। কোনও ঘটনা ঘটলে রাজ্য নেতৃত্ব ছুটে যাবেন, জানানো হবে নির্বাচন কমিশনকে। পাশাপাশি তাঁরা যে প্রশাসনের উপরে ন্যূনতম ভরসা রাখছেন না, তাও স্পষ্ট করে দেন।
তবে কংগ্রেসের একমাত্র ভরসার জায়গা অধীর চৌধুরী। তাই কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনেও তাদের ভরসা পাশের জেলা মুর্শিদাবাদ। জেলা সভাপতি অসীম দত্ত বলেন, “প্রদেশ সভাপতির নেতৃত্বে আমরা সর্বশক্তি দিয়ে দলের কর্মীদের পাশে থাকব। কোনও অবস্থাতেই কিন্তু পিছিয়ে আসার জায়গা নেই। মুর্শিদাবাদের কর্মীরাও আসবেন। থাকবেন ওই জেলার নেতা বিধায়করাও। আমরা বুঝিয়ে দেব যে আমরাও দুর্বল নই। আমাদের শক্তিটা বুঝিয়ে দিতে পারলেই তৃণমূল আর সন্ত্রাস করার সাহস দেখাতে পারবে না।”
লড়াইটা যে এবার ‘কঠিন’ সে কথা প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল তৃণমূল নেতাদের মুখে। তবে এই প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরিশঙ্কর দত্ত বলেন, “বিরোধীরা কি নির্বাচন কমিশন আর কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরে ভরসা হারিয়ে ফেলেছেন? তারা ভোটার পিছু একজন করে কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার ব্যবস্থা করুক। মানুষ সঙ্গে থাকলে সন্ত্রাসের কোনও দরকার হয় না। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy