Advertisement
E-Paper

হারিয়ে খোঁজার পালা চলছে নিরন্তর

কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছিল গানটা “চিট্ঠি আয়ি হ্যায়, আয়ি হ্যায়, চিট্ঠি আয়ি হ্যায়...।” ফেলে আসা প্রিয় জনের সেই বার্তা ছিঁড়ে মাঝে-মাঝেই গমগম করে উঠছে মাইক। কোন অজানা গ্রামের কোনও অনামী কিশোরের নামে ডাক আসছে, যার অপেক্ষায় স্বজনেরা। সব তীর্থের সার না কি গঙ্গাসাগর। লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ে হারানো মানুষের সংখ্যাটাও যেন তারই প্রমাণ দিচ্ছে। মুহূর্মুহূ কেউ না কেউ হারিয়েই চলেছে। মাইক অনবরত ডেকে চলেছে কবিপ্রসাদ ঠাকুর, ভগবান চৌহান, গায়ত্রীদেবী, মিন্নু প্রধান....।

শিবনাথ মাইতি

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৭
সাধুসঙ্গ। গঙ্গাসাগর মেলায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছবি: দেবাশিস রায়

সাধুসঙ্গ। গঙ্গাসাগর মেলায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়। ছবি: দেবাশিস রায়

কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় ঘুরপাক খাচ্ছিল গানটা “চিট্ঠি আয়ি হ্যায়, আয়ি হ্যায়, চিট্ঠি আয়ি হ্যায়...।”

ফেলে আসা প্রিয় জনের সেই বার্তা ছিঁড়ে মাঝে-মাঝেই গমগম করে উঠছে মাইক। কোন অজানা গ্রামের কোনও অনামী কিশোরের নামে ডাক আসছে, যার অপেক্ষায় স্বজনেরা।

সব তীর্থের সার না কি গঙ্গাসাগর। লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ে হারানো মানুষের সংখ্যাটাও যেন তারই প্রমাণ দিচ্ছে। মুহূর্মুহূ কেউ না কেউ হারিয়েই চলেছে। মাইক অনবরত ডেকে চলেছে কবিপ্রসাদ ঠাকুর, ভগবান চৌহান, গায়ত্রীদেবী, মিন্নু প্রধান....। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, হরিয়ানা...।

হারিয়ে যাওয়াদের নাম লেখাতে এত বড় লাইন হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাসই হয় না। এই তো সবে মেলা শুরু হল! লাইন আবার দু’টি। একটি বাংলার জন্য, অন্যটি হিন্দির। সেই হিন্দির আবার কত রকম ছিরিছাঁদ। দেহাতি বুলি, মৈথিলী, ভোজপুরি সব মিলে-মিশে একাকার। লাইনও তেমনই। এ ওকে ঠেলছে, সে তাকে গুঁতোচ্ছে। “মুন্নে কি বাপু, কাঁহা হো তুম” বলে হাউহাউ করে কাঁদতে-কাঁদতে লাইন ভেঙে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলেন এক মধ্যবয়সী মহিলা। ঠিক তখনই “আরে, কঁহা গয়া মেরা পোতা?” আর্তনাদ করতে-করতে ঠেলে এগোনোর চেষ্টা করছেন পুঁটলি কাঁধে এক বৃদ্ধ।

কুম্ভ না থাকায় এ বছর সাগরমেলায় ভিড় যে মাত্রা ছাড়াবে, সে কথা আগেই অনুমান করেছিল রাজ্য প্রশাসন। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আশ্বাস, সেই মতোই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আবার এক কদম এগিয়ে দাবি করেন, “সাগরে পরিষেবার যে উন্নতি ঘটেছে, ভারতের যে কোনও বড় মেলার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা যাবে।” মেলা প্রাঙ্গণে আলোর রোশনাই বেড়েছে বটে। গত বছর ২৮ জায়গায় আলোর ব্যবস্থা ছিল, এ বার ৩৮টি জায়গায়। বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্তের আশ্বাস, পর্যাপ্ত বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। আপদকালীন জেনারেটরও থাকছে।

তবে সুর কাটল কয়েকটি পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা বলে। জানা গেল, প্রত্যেক বছরের মতো এ বারও স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমেই সাগরের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী যাত্রিনিবাস, হাসপাতাল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী বা সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যারিকেড তৈরি হয়েছে। প্রতি বার পঞ্চায়েতই শ্রমিক লাগিয়ে এই সব ব্যবস্থা করে। কিন্তু শ্রমিকেরা সবাই এখনও পুরো টাকা পাননি। মুড়িগঙ্গা-১ পঞ্চায়েত তো গত বছরের কয়েক লক্ষ টাকা পায়নি এখনও। একই সমস্যা গঙ্গাসাগর পঞ্চায়েতরও। মেলায় অস্থায়ী ছাউনি-সহ অন্য নানা খাতে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। এখনও কোনও টাকা হাতে আসেনি। গত বছরেরও প্রায় ৪ লক্ষ টাকা বাকি। নাগা সন্ন্যাসীদের পাকা আস্তানা নিয়েও জট পাকিয়েছে।

তবে সে সব তো কত্তাদের ঝক্কি। সাগরের দিকে ধেয়ে চলা লক্ষ মানুষ শুধু চেয়ে আছেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের দিকে সংক্রান্তির ভোরে ডুব দিয়ে তবে তো ঘরের পানে ফিরবেন।

sagar shibnath maity sagarmela makar sankranti
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy