বনগাঁ লোকালে ওঠার ভিড়, বারাসত স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
হাওড়া পারল, কিন্তু শিয়ালদহ শাখা পারল না।
পূর্ব রেলের পরিসংখ্যানই বলছে, হাওড়ায় যখন ১০০ শতাংশ লোকাল ট্রেন ১২ বগির সেখানে শিয়ালদহে মাত্র ৪০ শতাংশ ট্রেনে ১২ বগি চালু করা গিয়েছে। এর মধ্যে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় কিছু ট্রেন ১২ বগির করা গেলেও মেন ও শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় মাত্র কয়েকটি ট্রেনে এই বদল করা সম্ভব হয়েছে।
অথচ, বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখা কিংবা মেনলাইনের ট্রেনগুলির অসম্ভব ভিড় কার্যত লোকগাথার পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তা নিয়ে অবশ্য হেলদোল নেই পূর্ব রেলের। গত ১০ বছরে যাত্রী বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু ট্রেন বেড়েছে হাতে গোটা কয়েকটি।
ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর অসুবিধা থাকায় ট্রেনের বগির সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করে রেল। তিনটি অতিরিক্ত কামরা বাড়িয়ে সমস্ত ট্রেন ১২ বগি করার সিদ্ধান্ত হয় বেশ ক’বছর আগে। সেই মতো প্রতিটি স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণের কাজও হয়। সেই কাজও শেষ হয়েছে কয়েক বছর। নতুন প্ল্যাটফর্ম হকারদের হাতে-হাতে দখলও হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ১২ কামরার ট্রেন চালু হয়নি এখনও।
শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখায় যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “ওই শাখায় যাত্রী-সংখ্যা প্রচুর বেড়ে গিয়েছে। ১২ কামরার ট্রেন হলে সমস্যা কিছুটা কমবে। শিয়ালদহ শাখায় ৪০ শতাংশ ট্রেন ১২ বগির হয়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণ শাখাতেই বেশির ভাগ চালু হয়েছে।”
প্রায় ৩০০ মতো ট্রেন চলে শিয়ালদহ শাখায়। কিন্তু কেন সব ট্রেনে চালু হচ্ছে না ১২ কামরা? রবিবাবু বলেন, “বাড়তি কামরার ট্রেন চালুর জন্য প্ল্যাটফর্ম সম্প্রসারণ হলেও কিছু কিছু স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম নিচু হয়ে গিয়েছে। সেগুলি ঠিক করে বাড়তি বগি আনা, সিগন্যালিং ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং ট্রাক ‘লে-আউট’ পরিবর্তন করতে হচ্ছে। তবে শীঘ্রই চালু হয়ে যাবে।”
কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত ট্রেন ১২ বগি হয়ে যাবে এ কথা শুনতে শুনতে অবশ্য ক্লান্ত ওই শাখার যাত্রীরা। এমনিতেই যশোহর রোডের বেহাল দশা। তীব্র যানজটে ওই রাস্তা বা বিটি রোড রোডে যাতায়াত করতে সময় অনেক বেশি লাগে। বেশির ভাগ মানুষ তাই যাতায়াতের জন্য বেছে নেন রেল। ফলে রেলে ভিড় আরও বেড়েছে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, অবস্থা এমন হয়েছে যে দুপুরের কিছুটা সময় বাদ দিলে ট্রেনে ওঠাই যায় না। শিয়ালদহ-বনগাঁ বা মেন লাইনের ট্রেনে অফিসযাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় থাকে। যাত্রীদের অভিযোগ, অফিসের সময়ে সাধারণ মানুষের ট্রেনে ওঠাই দায় হয়ে পড়ে। মহিলা বা শিশু সঙ্গে থাকলে তো ট্রেনে ওঠা অসম্ভব হয়ে ওঠে।
যাত্রীদের অভিযোগ, দমদম, বিরাটি, মধ্যমগ্রাম, বারাসত বা হাবরায় ভিড় ট্রেনে ঠেলে উঠতে না পেরে একের পর এক ট্রেন ছাড়তে হয়। প্রায় প্রতিটি ট্রেনে বিপজ্জনক ভাবে দু’টি কামরার মাঝে, জানলা ধরে ঝুলতে এমনকী, ট্রেনের মাথায় যাত্রীদের উঠে পড়তে দেখা যায়। ট্রেনে উঠতে না পেরে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনাও ঘটে।
এত কিছু সত্ত্বেও ট্রেন বাড়ানো দূরের কথা ১২ কামরার ট্রেনই চালু হয়নি। কিছু কিছু সময় ৯ বগির ট্রেনগুলি ১২ বগির সম্প্রসারিত প্ল্যাটফর্মে এগিয়ে যায়। ফলে প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের ছুটতে হয় ওই ট্রেনের পিছনে। শুরু হয় হুড়োহুড়ি। ভিড়ে ঠাসা কামরার দরজায় ঝুলতে থাকা যাত্রীদের পিছনে প্ল্যাটফর্মেই অসহায়ের মতো পড়ে থাকেন অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী যাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy