Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মুরগি কিনতে দেড় কোটি, নোট ডাস্টবিনে!

মাদুরোর দাবি, দাওয়াই ধরলে চাঙ্গা হবে অর্থনীতি। কর্পোরেট কর আদায় বাড়বে। ন্যূনতম বেতন বাড়বে ৩,০০০%! হাল ফেরানোর সেই ম্যাজিক ফর্মুলা নাকি তাঁর হাতে।

নোটের পাহাড় দিয়ে তবে আস্ত মুরগি।

নোটের পাহাড় দিয়ে তবে আস্ত মুরগি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কারাকাস শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫০
Share: Save:

দু’কেজি চারশো গ্রামের মুরগি। রবিবারের দুপুরে তা পাতে পেতে দু’দিন আগেও ১ কোটি ৪৬ লক্ষ বলিভার গুনতে হচ্ছিল ভেনেজুয়েলার মধ্যবিত্ত বাড়ির কর্তাকে। তার মানে ১২,৬৯৬ টাকা!

পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০ অগস্ট থেকে নোটে শেষ পাঁচটি শূন্য বাদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো। অর্থাৎ, ১০০,০০০ বলিভারের নোট রাতারাতি বদলে গিয়েছে ১ বলিভারে। কিন্তু তাতে হিসেব কিছুটা এ দিক-ও দিক হলেও, অর্থনীতির ছবি বিন্দুমাত্র বদলায়নি।

অনেক দিন ধরেই লাতিন আমেরিকার এই দেশের অর্থনীতি রসাতলে। নামতে নামতে কার্যত ‘পাতালে প্রবেশ’ করেছে সে দেশের মুদ্রা বলিভারের দাম। এক রোল টয়লেট পেপারের দাম পৌঁছেছে ২৬ লক্ষ বলিভারে। ‘মাত্র’ ২,২৬২ টাকা। আলু থেকে গাড়ি— সবই অগ্নিমূল্য। প্রতিদিন তা বাড়ছে লাফিয়ে।

আরও পড়ুন: প্রথম শ্রেণির বিমানযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ইমরানের

অবস্থা কতটা গুরুতর, তা স্পষ্ট লাতিন আমেরিকার দেশটির হাজারো ছবির কোলাজেই। বাজারে তেমন জিনিস নেই। হাতে নোট থাকলেও তার দাম নেই। খাবার বাড়ন্ত। অর্থনীতি শিকেয়। কাজ নেই। এই অবস্থায় দেশ ছাড়ছেন অসংখ্য মানুষ। এমনকি সন্তান প্রসবের জন্য যেতে হচ্ছে পড়শি মুলুকে। পরিস্থিতি সঙ্গিন।

দাম নেই। ১০০ বলিভারের নোটের ঠাঁই তাই ডাস্টবিনে।

খেই হারানো অর্থনীতি আর উল্কার বেগে বাড়তে থাকা মূল্যবৃদ্ধির হারের সমস্যায় (হাইপার ইনফ্লেশন) এটি বেশ চেনা ছবি। যেমন, এখনও জীবন্ত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯২২ সাল নাগাদ বিধ্বস্ত জার্মান অর্থনীতির স্মৃতি। মূল্যবৃদ্ধি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, এক টুকরো পাঁউরুটি কিনতে ঠেলাগাড়ি করে নিয়ে যেতে হত জার্মান মুদ্রা মার্কের বান্ডিল। রাস্তাঘাটে কম অঙ্কের মুদ্রা জড়ো করে পুড়িয়ে আগুন পোহাতেন মানুষ। বলা চলে প্রতি ঘণ্টায় লাফিয়ে বাড়ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। ১৯২৩ সাল নাগাদ ১ ডলারের দাম পৌঁছেছিল ৪ লক্ষ ২১ হাজার কোটি মার্কে! অনেকে বলছেন, এখন ভেনেজুয়েলার দশা কিছুটা তেমনই।

মাঝে এ ধরনের ছবি দেখা গিয়েছে কখনও জিম্বাবোয়ে তো কখনও তুরস্কে। একই সমস্যায় ভুগেছে যুগোশ্লাভিয়া, হাঙ্গেরি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরে এই আগুনে পুড়েছে রাশিয়াও। অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, একই ভাবে ভেনেজুয়েলায় পরিস্থিতি চলে যাচ্ছে একেবারে নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

এই দেশের অর্থনীতি তেল নির্ভর। সমস্যার শুরু বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম পড়ে যাওয়া থেকে। সমস্যা সমাধানে রাস্তার খোঁজ সরকার পায়নি। বরং অর্থনীতিই পথ হারিয়েছে কানাগলিতে। মাদুরোর দাবি, দাওয়াই ধরলে চাঙ্গা হবে অর্থনীতি। কর্পোরেট কর আদায় বাড়বে। ন্যূনতম বেতন বাড়বে ৩,০০০%! হাল ফেরানোর সেই ম্যাজিক ফর্মুলা নাকি তাঁর হাতে।

কিন্তু এখনও পর্যন্ত সাধারণ মানুষ তার দেখা পাননি। বরং সরকার তেল নির্ভর ডিজিটাল মুদ্রা চালু করার পরে সমস্যা বেড়েছে। ২০১৩ সাল থেকেই সেখানে মূল্যবৃদ্ধি ঊর্ধ্বগামী। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২০১৭ সালে বাজারে নগদের জোগান ১৪ গুণ বাড়িয়ে দেয় সরকার। তার পরে সবই প্রায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জুনে মূল্যবৃদ্ধি ছিল ৪৬,০০০%। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের আশঙ্কা, খুব তাড়াতাড়ি ওই হার ছাড়াবে ১০ লক্ষ শতাংশ!

ছবি: রয়টার্স, এএফপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Venezuela chicken economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE