Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

এল নিনো দুর্বল, তবু ২০১৭-র মাথা গরম

‘এল নিনো’ থাকলে তাপমাত্রা চড়চড়িয়ে বাড়বে, ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় হবে, ঋতুচক্র পুরো ওলটপালট হয়ে যাবে— এটাই রীতি। এল নিনো দুর্বল হওয়া মানে জলবায়ুর স্বাভাবিক ছন্দে ফেরা। ২০১৭ সালের আবহাওয়া কিন্তু প্রকৃতির সেই স্বাভাবিক নিয়মকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৯
Share: Save:

সচরাচর তার নিয়মের ব্যত্যয় হয় না। বরং তার নিয়মেই চলতে হয় বিশ্বসংসারকে। অবশেষে সেই প্রকৃতির নিয়মেও বুঝি বদল ঘটল!

‘এল নিনো’ থাকলে তাপমাত্রা চড়চড়িয়ে বাড়বে, ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় হবে, ঋতুচক্র পুরো ওলটপালট হয়ে যাবে— এটাই রীতি। এল নিনো দুর্বল হওয়া মানে জলবায়ুর স্বাভাবিক ছন্দে ফেরা। ২০১৭ সালের আবহাওয়া কিন্তু প্রকৃতির সেই স্বাভাবিক নিয়মকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল।

আবহবিদেরা বলছেন, প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম হল, দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল থেকে উষ্ণ সমুদ্রের জল পশ্চিমে সরে গিয়ে কেন্দ্রীভূত হয় এশিয়া-অস্ট্রেলিয়া উপকূলের কাছে। এর উল্টো প্রক্রিয়াটাই ‘এল নিনো’। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরের যে-অংশের অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকার কথা, সেটি উষ্ণ হতে শুরু করে। সমুদ্রের সেই অতিরিক্ত তাপ নির্গত হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের বাতাসে। তার জেরে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। অর্থাৎ এল নিনো হলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়বে আবার এল নিনো দুর্বল হলে কমবে উষ্ণায়নও। কিন্তু এ বছর সেখানেই উল্টো পথে হেঁটেছে প্রকৃতি।

আবহবিদেরা বলেন, এল নিনো দুর্বল হলে যে-বিপরীত প্রক্রিয়া তৈরি হয়, তার নাম ‘লা নিনা’। তাঁদের অধিকাংশেরই ধারণা ছিল, লা নিনার প্রভাবে উষ্ণায়নের প্রভাব কমবে ২০১৭-য়। কিন্তু পূর্বাভাস মেলেনি। আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যারোনটিক অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বা নাসা বলছে, এল নিনো সক্রিয় না-হওয়া সত্ত্বেও ২০১৭ সাল এখনও পর্যন্ত (১৮৮০ সাল থেকে হিসেব ধরে) দ্বিতীয় উষ্ণতম বছর বলে চিহ্নিত হয়েছে। এর আগে শুধু রয়েছে ২০১৬। মার্কিন আবহাওয়া গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নোয়া)-র তথ্য অনুযায়ী ২০১৬, ২০১৫ সালের পরে ২০১৭ সাল তৃতীয় উষ্ণতম বছর। নাসা এবং নোয়ার গবেষকদের মন্তব্য, ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে এল নিনো সক্রিয় ছিল। ওই দু’বছর উষ্ণায়নের তালিকায় প্রথম সারিতে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০১৭ সালে কী ভাবে বিশ্ব জুড়ে তাপমাত্রা এতটা বাড়ল, সেটাই গবেষণার বিষয় বলে মনে করছেন ওই গবেষকেরা।

গবেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এল নিনো দুর্বল হয়ে লা নিনা এলেও নানা কারণে তা হয়তো সক্রিয় হতে পারেনি। দুর্বল লা নিনা-র জন্যই ২০১৭-র আবহাওয়ায় অস্বাভাবিকতা বেশি ছিল। ভারতের ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব মাধবন রাজীবনের মতে, ক্রমাগত গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের জেরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। তার ফলেই এই ‘এল নিনো-লা নিনা’র হিসেব ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। ‘‘গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন চলতে থাকলে আগামী দিনেও এই ধরনের ওলটপালটের ঘটনা বাড়বে,’’ বলছেন মাধবন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওশানোগ্রাফিক স্টাডিজের অধ্যাপক সুগত হাজরা জানান, ভূপৃষ্ঠ এবং সাগরে প্রচুর তাপ জমে রয়েছে। তার ফলেই এমন অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটছে। তাঁর কথায়, ‘‘পৃথিবীতে যত পরিমাণে তাপ জমা হয়েছে, তাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন বন্ধ করলেও উষ্ণতা বাড়তেই থাকবে।’’

কয়েক দশক ধরে এল নিনোর সক্রিয়তা ও নিষ্ক্রিয়তার উপরে ভিত্তি করে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় আবহাওয়া কেমন যাবে, তার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। ২০১৭ সালটা এল নিনোর বছর ছিল না। ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের অত্যধিক গরম, ঘনঘন ঘূর্ণিঝড়, অস্বাভাবিক আবহাওয়ার জের আর ২০১৭ সালে পড়বে না— এমনটাই মনে করেছিলেন অধিকাংশ আবহবিজ্ঞানী। কিন্তু প্রকৃতি দেখাল, তার রহস্য অত সহজে ভেদ করার নয়। তার খামখেয়ালের নাগাল পাওয়া অযুত তুঘলকেরও সাধ্যের অতীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

El Nino Warmest Year এল নিনো
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE