Advertisement
১৯ মে ২০২৪
pakistan

Pakistan: রাতারাতি ছাড়তে হয়েছিল বাড়ি, ৭৫ বছর পরে পৈতৃক ভিটের টানে পাকিস্তানে নবতিপর

ভারত থেকে ওয়াঘা-অটারী সীমান্ত পেরোতে পেরোতে ৯২ বছরের রিনা ছিব্বরের কথায় বার বার ফিরে আসছিল সেই ফেলে আসা সময়ের কথা।

রিনা ছিব্বর।

রিনা ছিব্বর।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২ ০৬:০৪
Share: Save:

ভিটে-মাটি, গেরস্থালি, পাড়াতুতো বন্ধুবান্ধব— সব পিছনে ফেলে হঠাৎ একদিন ভাই-বোনেদের সঙ্গে পরবাসী হতে হয় পনেরোর কিশোরীটিকে। একেবারে রাতারাতি বাড়িছাড়া হওয়ার পরে পিছন ফিরে তাকাতেই চোখে পড়ে কাঁটাতার।

তবে চোখের আড়াল হলেও বুকে যত্নে ধরা ছিল ‘দেশের বাড়ির’ সেই টুকরো স্মৃতি। আর মন জুড়ে ছিল দৃঢ় প্রত্যয়— এক দিন ফের পা রাখবেন কয়েক পুরুষের পুরনো সেই পৈতৃক আস্তানায়। শেষমেশ স্বপ্নপূরণ হল শনিবার। তবে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির পাট চুকিয়ে ভারতের সোলানে চলে আসা পনেরোর সেই কিশোরী এখন নবতিপর। কাঁটাতার পেরিয়ে একবারের জন্য জন্মভিটেতে পা-রাখার মাঝে পেরিয়ে গিয়েছে৭৫ বছরেরও বেশি!

ভারত থেকে ওয়াঘা-অটারী সীমান্ত পেরোতে পেরোতে ৯২ বছরের রিনা ছিব্বরের কথায় বার বার ফিরে আসছিল সেই ফেলে আসা সময়ের কথা। ছোটবেলার স্মৃতি। বৃদ্ধা বলছিলেন, রাওয়ালপিন্ডির প্রেম নিবাসে যেখানে তাঁরা থাকতেন, দেশভাগের আগে সেখানে সবসময় খোলামেলা সংস্কৃতিই দেখে এসেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের বাড়িতে অবারিত যাতায়াত ছিল আমার বড় দাদা এবং দিদিদের বন্ধুবান্ধবদের। তাঁদের মধ্যে অনেকে মুসলিমও ছিলেন। বাড়ির পরিচারক পরিচারিকারাও ছিলেন বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে।’’

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে ভাই-বোনেদের সঙ্গে ভারতে চলে আসতে বাধ্য হন রিনা। কিছুদিন পরে তাঁদের বাবা-মাও চলে আসেন এখানে। সেই থেকে এই দেশকেই আপন করে নেওয়া। তবে মনের কোণায় থেকে গিয়েছিল পাকিস্তান-রাওয়ালপিন্ডি-প্রেম নিবাস। বৃদ্ধার মন্তব্য, ‘‘পৈতৃক বাড়ি, পাড়া, ওই রাস্তাগুলোকে কিছুতেই মন থেকে মুছতে পারছিলাম না।’’ এ দেশে বসবাস শুরুর ১৮ বছর পর, ১৯৬৫ সালে প্রথম পাকিস্তানে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন জানান রিনা। তবে সে সময়ে দু’দেশের মধ্যে চলা সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরে সেই আবেদনের কোনও সাড়া মেলেনি। তবে সে বার না হলেও পরে একবার পাকিস্তানে পা রেখেছিলন তিনি, জানান রিনা। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেট যুদ্ধ দেখতে সে বার ভারতীয়দের জন্য কয়েকটি ভিসা মঞ্জুর করা হয়েছিল। সেই সুযোগ হাত ছাড়া করেননি রিনা। তবে লাহোর থেকে ম্যাচ দেখেই ফিরতে হয়েছিল তখন। যাওয়া হয়নি রাওয়ালপিন্ডি।

২০২১ সালে নিজের পূরণ না-হওয়া সেই ইচ্ছের বিষয়ে সমাজ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন রিনা। যা দেখে সাজ্জাদ হায়দার নামে এক পাকিস্তানি নাগরিক তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর সেই পৈতৃক বাড়িটির ছবি তুলে পাঠান রিনাকে। সে বছরই ফের ভিসার আবেদন জানান রিনা। যদিও এ বারও তা খারিজ হয়ে যায়। ফের সমাজ মাধ্যমের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধা। পোস্টের মাধ্যমে জানান, একবারের জন্য ফের সেই পৈতৃক ভিটেতে পা-রাখতে ঠিক কতটা মরিয়া তিনি। ভিডিয়োটি ট্যাগ করে দেন পাকিস্তানি বিদেশ প্রতিমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারকে।

রিনা জানান, কাজ হয় এতেই। দেরি না-করে ওই বৃদ্ধার ভিসার ব্যবস্থা করার জন্য পাকিস্তান হাই কমিশনকে নির্দেশ দেন হিনা। এর পর দিল্লির পাকিস্তান হাই কমিশন থেকে যোগাযোগ করা হয় তাঁর সঙ্গে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ৯০ দিনের ভিসা হাতে চলে আসে বৃদ্ধার।

প্রসঙ্গত, দু’দেশের ষাটোর্ধ্ব নাগরিকদের সীমান্ত থেকেই ভিসা দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি সই হয়েছিল ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে। তবে কোনও পক্ষের তরফেই সেই নিয়ম রক্ষা করা হচ্ছে না বলে জানা গিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই নিয়ম বলবৎ থাকলে হয়তো এতটা ঝক্কির মুখে পড়তে হত না ওই নবতিপরকে। রিনা অবশ্য এই নিয়ে কিছু বলেননি।

রাওয়ালপিন্ডির রাস্তা দিয়ে ছুটে চলা গাড়ির ভিতরে বসে ছোটবেলার বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার উত্তেজনার মাঝে তিনি শুধু বললেন, ‘‘দু’দেশের সরকারের কাছেই আর্জি জানাচ্ছি যে তারা যেন ভিসা জটিলতা কমাতে একটু এগিয়ে এসে একসঙ্গে কাজ করে। যাতে আমাদের জন্য যাতায়াত করা একটু সহজ হয়ে ওঠে আর কী...।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pakistan Ancestral home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE