Advertisement
E-Paper

হঠাৎ সুর নামিয়ে প্রশংসা কুড়োলেন ট্রাম্প, ভাষণের নেপথ্যে নাকি ইভাঙ্কা!

একটা ভাষণই বেশ খানিকটা বদলে দিল পরিস্থিতি। ট্রাম্প বিরোধী সুর আচমকাই কিছুটা নরম আমেরিকার অন্দরে। মঙ্গলবার রাতে মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবং অনেককেই অবাক করে দিয়ে বেশ কিছুটা নরম সুর শোনা গেল ট্রাম্পের গলায়। ভারসাম্য খোঁজার চেষ্টা স্পষ্ট ধরা পড়ল।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৭ ১৬:৫৬
ইভাঙ্কা ট্রাম্প— ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন আমেরিকার ক্ষমতার অলিন্দে। ছবি: এএফপি।

ইভাঙ্কা ট্রাম্প— ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন আমেরিকার ক্ষমতার অলিন্দে। ছবি: এএফপি।

একটা ভাষণই বেশ খানিকটা বদলে দিল পরিস্থিতি। ট্রাম্প বিরোধী সুর আচমকাই কিছুটা নরম আমেরিকার অন্দরে। মঙ্গলবার রাতে মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবং অনেককেই অবাক করে দিয়ে বেশ কিছুটা নরম সুর শোনা গেল ট্রাম্পের গলায়। ভারসাম্য খোঁজার চেষ্টা স্পষ্ট ধরা পড়ল। মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষা বলছে, এই ভাষণকে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন নাগরিকদের বড় অংশই। আর তার পর থেকেই বার বার ভেসে উঠতে শুরু করেছে ইভাঙ্কা ট্রাম্পের নাম। প্রেসিডেন্টের বার্তায় এই ভারসাম্য আনার নেপথ্যে নাকি বড়সড় ভূমিকা নিয়েছেন ট্রাম্পের বড় মেয়ে।

মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষণ কেমন হবে, তা নির্ধারণে ইভাঙ্কা ট্রাম্প যে খুব বড় ভূমিকা নিয়েছেন, হোয়াইট হাউস সূত্রেই তেমন খবর বাইরে আসছে। মঙ্গলবার ভাষণ দিয়েছেন ট্রাম্প। এক মাস আগে থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউসের কয়েক জন পদস্থ কর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিভিন্ন মার্কিন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, শেষ ১০ দিনেই মূলত আকার নিয়েছে প্রেসিডেন্টের ভাষণ। এবং এই শেষ ১০ দিন বিষয়টি নিয়ে নাকি খুব খেটেছেন ইভাঙ্কা।

মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি।

ট্রাম্প যে সব নীতির কথা ঘোষণা করে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন, সেই সব নীতি থেকে যে তিনি সরে এসেছেন, তা কিন্তু নয়। কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণেও তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, নিজের নীতিতে তিনি অবিচলই। কিন্তু প্রেসিডেন্টের শব্দ চয়ন হঠাৎ বদলে গিয়েছে। আক্রমণাত্মক সুর অনেকটা নেমে গিয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ যে তিক্ত কথাবার্তা বলছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন কংগ্রেসে দেওয়া ভাষণে তা শোনা যায়নি। ডেমোক্র্যাটদের খুব একটা আক্রমণ তিনি করেননি। মিডিয়ার বিরুদ্ধে যে বেনজির ‘জেহাদ’ তিনি ঘোষণা করেছিলেন, তা থেকেও কিছুটা সরে এসেছেন। জাতীয় ঐক্যের কথা শোনা গিয়েছে প্রেসিডেন্টের মুখে। সব মিলিয়ে, ক্ষমতা হাতে পাওয়ার মাসখানেকের মাথায় কিছুটা পরিণত আচরণ মার্কিন প্রেসিডেন্টের, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা তাঁর ভাষণে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই সংশোধিত অবস্থান অনেক মহলেই প্রশংসিত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট হয়েই কারওকে পরোয়া না করার যে বার্তা ট্রাম্প চারিয়ে দিয়েছিলেন, তাতে সমস্যা যে দিন দিন বাড়ছিল, তা ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মানুষরা বেশ টের পাচ্ছিলেন। তাঁদের পরামর্শেই শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ভারসাম্যের সুরে পৌঁছনোর চেষ্টা করলেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের দাবি। আর ট্রাম্পের এই ঘনিষ্ঠ বৃত্তের প্রসঙ্গ এলেই আমেরিকায় এখন সর্বাগ্রে উচ্চারিত হচ্ছে ইভাঙ্কা ট্রাম্পের নাম। গত রবিবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে নিজের পরামর্শদাতাদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন ট্রাম্প। ভাষণের রূপরেখা অনেকটাই চূড়ান্ত হয়ে যায় সেই ম্যারাথন আলোচনাতেই। ইভাঙ্কা ট্রাম্প এই আলোচনার অংশ ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। তাঁর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ ট্রাম্প মেনে নিয়েছেন বলেও হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দুই প্রধান পরামর্শদাতা ইভাঙ্কা ও কুশনার। প্রেসিডেন্টের ভাষণ চলাকালীন মার্কিন কংগ্রেসে হাজির তাঁরাও। ছবি: রয়টার্স।

রিপাবলিকানরা কোনও কালেই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের বিষয়ে উৎসাহী নন। কট্টরবাদী ট্রাম্প তো আরওই নন। কিন্তু সেই ভাবমূর্তি ট্রাম্পের গায়ে ধীরে ধীরে জনবিরোধী তকমা সেঁটে দিচ্ছিল। মধ্য তিরিশের ইভাঙ্কা কিন্তু অভ্রান্ত বুঝে নিয়েছিলেন সে কথা। সমাজের বিভিন্ন অংশে মেলামেশা রয়েছে তাঁরা। তাই সাধারণ মার্কিনরা সরকারের কাছ থেকে কোন কোন বিষয়ে সহানুভূতি ও সহায়তা আশা করছেন, সে বিষয়ে ইভাঙ্কার ধারণা বেশ স্পষ্ট। কম খরচে শিশুর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা এবং পরিবারকে সময় দেওয়ার জন্য সবেতন ছুটির যে নীতি, তার পক্ষে কথা বলার জন্য প্রেসিডেন্টকে রাজি করান নাকি ইভাঙ্কাই। এতে দেশের নাগরিদের একটা বড় অংশের সমর্থন পাবেন ট্রাম্প, এমনই নাকি বলেছিলেন ইভাঙ্কা। ডেমোক্র্যাটরাও এ নীতির বিরোধিতা করবেন না বলে ইভাঙ্কা নাকি আশা প্রকাশ করেছিলেন। ট্রাম্প সে পরামর্শ মেনে নিয়েছেন। তাতে ফল কিন্তু ইতিবাচকই।

আরও পড়ুন: এক ঘণ্টায় এক ঝুড়ি স্বপ্ন ফিরি করলেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, যাঁদের নিয়ে আলোচনা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর ভাষণের বয়ান চূড়ান্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানন, হোয়াইট হাউসের টিফ অব স্টাফ রেইন্স প্রিবাস এবং চিফ স্পিচ রাইটার স্টিফেন মিলার। এঁদের সঙ্গে ছিলেন ট্রাম্পের বড় মেয়ে ইভাঙ্কা এবং জামাই কুশনার। বাণিজ্যিক চুক্তি এবং মধ্য এশিয়া সংক্রান্ত বিষয়ে ট্রাম্পের মূল পরামর্শদাতা এই কুশনারই। ইভাঙ্কা এবং কুশনার নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নানা রকম ভাবে সহায়তা করেছেন। ট্রাম্প জয়ী হওয়ার পর সরকার চালনার কাজে সব সময় তাঁকে সাহায্য করার লক্ষ্যে ইভাঙ্কা নিউ ইয়র্ক ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে ওয়াশিংটন চলে এসেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইভাঙ্কার মতকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে শুনছেন।

আরও পড়ুন: কানসাসের ঘটনা নিন্দনীয়, অবশেষে মুখ খুললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

মার্কিন কংগ্রেসে যে ভাষণ ট্রাম্প দিয়েছেন, তা যে এক লাফে মার্কিন নাগরিকদের অনেকের মনোভাবকেই ট্রাম্পের প্রতি নরম করে দিয়েছে, সংবাদ মাধ্যমের সমীক্ষায় সে কথা স্পষ্ট। ফলে ইভাঙ্কা ট্রাম্পের পরামর্শ যে আগামী দিনে ওভাল অফিসে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে, তা নিয়ে হোয়াইট হাউসের পদস্থ কর্তাদের সংশয় নেই।

Donald Trump Ivanka Trump US Congress White House
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy