Advertisement
E-Paper

নদীতে বিমান, অক্ষত যাত্রীরা

কিউবার গুয়ানতানামো বে-র মার্কিন সেনা ছাউনি থেকে ১৩৬ জন যাত্রী এবং ৭ বিমানকর্মীকে নিয়ে ফিরছিল মায়ামি এয়ার ইন্টারন্যাশনালের চার্টার বা ভাড়া করা বোয়িংটি। শুক্রবার রাতে ঘড়িতে তখন স্থানীয় সময় ৯টা ৪০।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০১৯ ০১:৫২
সেন্ট জনস নদীতে মায়ামি এয়ার ইন্টারন্যাশনালের বিমানটি। এপি

সেন্ট জনস নদীতে মায়ামি এয়ার ইন্টারন্যাশনালের বিমানটি। এপি

প্রবল ঝড়জল চলছিল। মাটিতে নামতে গিয়ে রানওয়ে থেকে সোজা নদীতে নেমে গেল বোয়িং ৭৩৭-৮০০ যাত্রিবাহী বিমান। শুক্রবার রাতে ফ্লরিডার জ্যাকসনভিলের ঘটনা। ২১ জন যাত্রী জখম হলেও কোনও মৃত্যুর খবর নেই।

কিউবার গুয়ানতানামো বে-র মার্কিন সেনা ছাউনি থেকে ১৩৬ জন যাত্রী এবং ৭ বিমানকর্মীকে নিয়ে ফিরছিল মায়ামি এয়ার ইন্টারন্যাশনালের চার্টার বা ভাড়া করা বোয়িংটি। শুক্রবার রাতে ঘড়িতে তখন স্থানীয় সময় ৯টা ৪০। প্রবল ঝড়বৃষ্টি চলছিল জ্যাকসনভিলে। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, দুর্যোগের মধ্যেই স্থানীয় সেনা ছাউনিতে নামতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। বিমানের চাকা পিছলে গিয়ে সোজা সেন্ট জনস নদীতে নেমে যায় বিমানটি। জ্যাকসনভিল নদীর ওই জায়গায় জল কম। তাই অল্পের জন্য রক্ষা মিলেছে। ডুবে যায়নি বিমানটি। যাত্রীদের কেউই গুরুতর জখম হননি। আহত ২১ জনকে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কোনও যাত্রীরই মৃত্যুভয় নেই। জ্যাকসনভিলের শেরিফ অফিস থেকে টুইট করা হয়েছে, ‘‘বিমানটি ডুবে যায়নি। সবাই বেঁচে আছেন।’’ দু’টি ছবিও টুইট করেছেন শেরিফ। তাতে দেখা যাচ্ছে, সেন্ট জনস নদীতে অর্ধেক ডুবে বিমানটি। গায়ে লেখা ‘মায়ামি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল।

জ্যাকসনভিলের মেয়র লেনি কারিও টুইটারে জানান, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনিও। পরে ফের টুইট করেন লেনি, ‘‘কোনও হতাহতের খবর নেই। বিপদে আমরা সবাই এক সঙ্গে আছি।’’

বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে জোর রক্ষা মিললেও আতঙ্ক কাটছে না যাত্রীদের। বিমানে ছিলেন শেরিল বরমান নামে এক কৌঁসুলি। স্থানীয়
সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি জানান, গুয়ানতানামো বে থেকে ৪ ঘণ্টা দেরিতে রওনা হয়েছিল বিমানটি। জ্যাকসনভিলে নামার সময়ে প্রবল ঝড়বৃষ্টি চলছিল, বাজ পড়ছিল। ওর মধ্যে বিমান অবতরণ বেশ কঠিন হয়ে পড়েছিল পাইলটের পক্ষে। বলেন, ‘‘বিমান নীচে নামে। কিন্তু তার পরেই মাটিতে জোরে গোত্তা খায় ও লাফিয়ে ওঠে। বোঝাই যাচ্ছিল, পাইলটের নিয়ন্ত্রণে নেই বিমান। ভয়াবহ পরিস্থিতি। যাত্রীরা সবাই তখন আতঙ্কে।’’ শেরিল জানান, ঝাঁকুনিতে তাঁর মাথা ঠুকে যায় সামনে রাখা ট্রে-তে। একটা সময়ে রানওয়ে থেকে নেমে পাশের সাইডওয়েতে উঠে পড়ে বিমান। তার পরে সোজা নদীতে।

ফ্লরিডার উত্তরপূর্বে সেন্ট্রাল জ্যাকসনভিলের ৮ মাইল দক্ষিণে সেন্ট জনস নদীর পশ্চিম তীরে সেনা ছাউনিটি। শেরিল বলেন, ‘‘সেই মুহূর্তে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। বিমানের চারপাশে যে জল, তা টের পাই। কিন্তু সেটা নদী, না সমুদ্র, মাথা কাজ করছিল না।’’ জানান, বিমানের ভিতরে ভয়ের পরিবেশ। অক্সিজেন মাস্ক নেমে এসেছিল সবার সামনে। জানলা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল, বিমানের ডানা থেকে উপরের অংশ জলের উপরে জেগে। জ্বালানি বেরিয়ে জলে মিশেছে, তা-ও আন্দাজ করতে পারছিলেন সবাই। শিকাগোর বাসিন্দা শেরিল জানান, বিমানে উপস্থিত সবাই কর্মসূত্রে মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত। সবাই একে অপরকে সাহায্য করে আসন ছেড়ে বিমানের ডানার উপরে উঠে পড়েন। কিছু ক্ষণ বাদে উদ্ধারকারী দল নৌকা নিয়ে আসে।

জ্যাকসনভিলের কাণ্ড মনে করিয়ে দিয়েছে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের একটি ঘটনা। ১৫৫ জন যাত্রীকে নিয়ে হাডসন নদীতে নেমে গিয়েছিল ইউএস
এয়ারওয়েজ়ের বিমান। নিউ ইয়র্কে লাগার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকে ওড়ার সময়ে পাখির ঝাঁকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বিমানের দু’টি ইঞ্জিনই বিকল হয়ে যায়। নিশ্চিত দুর্ঘটনা এড়াতে বিমান নিয়ে ঠান্ডায় জমে যাওয়া হাডসন নদীর উপরে নেমে গিয়েছিলেন পাইলট। যাত্রীরা সবাই বেঁচে যান। সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ‘মিরাকল অন দ্য হাডসন’।

মায়ামি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল একটি চার্টার উড়ান সংস্থা। এরা বিমান ভাড়া দেয়। যারা ভাড়া নেয়, তারাই ঠিক করে বিমান কোথা থেকে উঠবে এবং নামবে। মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিশেষ ভাবে চুক্তিবদ্ধ সংস্থাটি। সপ্তাহে দু’বার তাদের বিমান গুয়ানতানামো বে থেকে আমেরিকা যাতায়াত করে। শুক্রবার তাদের বোয়িং ৭৩৭-৮০০তে দুর্ঘটনার পরে সংস্থার পক্ষ থেকে কোনও উত্তর মেলেনি। বোয়িং জানিয়েছে, জ্যাকসনভিলে দুর্ঘটনার খবর তারা পেয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে তারা।

Boeing Florida
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy