প্রতি বছর মহালয়ায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে আমরা শুনি মৃণ্ময়ী মাকে চিন্ময়ী রূপে ধরায় অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান। কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সামাজিক প্রেক্ষাপটে, আমরা আমাদের আশপাশে, ঘর-সংসারে দশভূজা চিন্ময়ীরূপী মেয়েদের দেখি, মানুষের ঘৃণ্য মনোবৃত্তি, লোভ-লালসার তথা অবমাননার ও অত্যাচারের শিকার হতে।
তাই বোধ হয় এই বছর সুদূর উত্তর জার্মানিতে এলবে নদীর ধারে হামবুর্গ শহরে জেগে উঠেছেন একদল বাঙালি মহিলা। পরিবার, পরিজন ও বন্ধুদের সক্রিয় সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা ‘সংস্কৃতি’ সমিতির উদ্যোগে পালিত হতে চলেছে হামবুর্গ শহরের এই দুর্গাপুজো।
জার্মানিতে যে-হেতু প্যান্ডেল বেঁধে পুজো করা অসম্ভব, তাই হল ভাড়া নেওয়াই একমাত্র উপায়। কিন্তু হল ভাড়া পাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার, কারণ এই শরৎকাল শুধুমাত্র বাঙালির উৎসবের মরসুম নয়, আরও বহু দেশ ও সম্প্রদায়ের উৎসবকাল। তবে এ বার আমরা চার দিনের জন্য হল ভাড়া পেয়ে গিয়েছি। পুজো হবে চার দিনে। ষষ্ঠী থেকে শুরু হয়ে বিজয়া দশমী। নবমী ও দশমী পালিত হবেএকই দিনে।
ইউরোপে সে ভাবে ভাসান সম্ভব নয়, তাই মাতৃপ্রতিমাকে পুজোর শেষে বাক্সবন্দি করে তুলে রাখা হয়। গোল বাঁধে যখন নতুন প্রতিমা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয়। হামবুর্গ ‘সংস্কৃতি’ যে-হেতু নারীপরিচালিত সংস্থা, তাই মাতৃস্বরূপিণী মাতৃপ্রতিমার কোনও রকম অনিচ্ছাকৃত অবহেলা এড়াতে, তাঁরা নতুন প্রতিমা আনার বদলে পড়শি দেশ নেদারল্যান্ডসের পুজো সংস্থা ‘কল্লোল’-এর পুরনো মাতৃপ্রতিমা এনে পুজা করবেন। মা তো মা, তিনি কি কখনও পুরনো হন!
পুজোর আমেজ তৈরি করতে হামবুর্গ সংস্কৃতির তরফে একটি মৌলিক শারদীয়া পুজার গান “দুর্গা এলেন হামবুর্গে” প্রকাশিত হয়েছে। ষষ্ঠী থেকে দশমী থাকছে নিরামিষ ও আমিষ পদের বিবিধ সমাহার। থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে ছোট-বড় সবাই অংশগ্রহণ করছেন। থাকছে সিঁদুরখেলা ও ধুনুচি নাচ। দশমীর বিশেষ আকর্ষণ ‘আনন্দ মেলা’, যেখানে ভারতবর্ষের প্রতিটি রাজ্যের অন্তত একটি করে পদ থাকবে।
আর এক মাসও নেই, তাই সর্বত্র বাঙালির মনে বেজে উঠেছে শারদীয়া ঢাক। প্রার্থনা করি প্রতি বছর মা যেন তাঁর হামবুর্গের এই প্রবাসী সন্তানদের তাঁর পদবন্দনার সুযোগ দেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)