অগস্টের মাঝামাঝি শুরু হল আমেরিকার নতুন শিক্ষাবর্ষ। চারদিকে সাজো সাজো রব। নতুন, ক্লাসরুম, শিক্ষক-শিক্ষিকা, আশা-উদ্দীপনা। আর তার মধ্যেই ঘটে গেল বন্দুকজনিত হিংসার এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। মিনিয়াপোলিস শহরের একটি ক্যাথলিক স্কুলের চার্চে, স্কুল শুরুর আগে একটি প্রার্থনানুষ্ঠানে জানলা ভেঙে গুলি চালাল এক বন্দুকধারী। দু’টি শিশু, একটির বয়স আট এবং অন্যটির দশ, ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এখনও ন’জন হাসপাতালে ভর্তি, তাদের মধ্যে একটি শিশুর অবস্থা সঙ্কটজনক বলে হেনেপিন হেল্থকেয়ার ক্লিনিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
২৩ বছর বয়সি বন্দুকধারী রবিন ওয়েস্টম্যান রাইফেল ও পিস্তল থেকেঅবিশ্রান্ত গুলি চালানোর পরে আত্মহত্যা করে। সে নিজেও এই স্কুলের পড়ুয়া ছিল। তা ছাড়া, তার মা ২০২১ সাল পর্যন্ত এই স্কুলের উঁচু পদে ছিলেন। আজ বিভিন্ন সমাজমাধ্যমে রবিনের একটি ভিডিয়ো, তার ডায়েরির পাতার ছবি এবং তার অস্ত্রের বিপুল সম্ভারের ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যা দেখে শিউরে উঠছেন সাধারণ মানুষ। গুলিতে ছিন্নভিন্ন শিশুদের মৃতদেহ দেখে তার কী ধরনের উল্লাস হবে, ভিডিয়োয় তা সবিস্তার জানিয়েছিল রবিন। তার ‘গুরু’ যে স্যান্ডি হুক স্কুলের কুখ্যাত বন্দুকবাজ অ্যাডাম ল্যান্জ়া, তা-ও অকপটে জানিয়েছে রবিন। তার বন্দুকে ল্যান্জার নামও খোদাই করা আছে। ২০১২-র ডিসেম্বরে স্যান্ডি হুক স্কুলে ল্যান্জ়ার গুলিতে ২৬ জন নিহত হয়েছিল, যার মধ্যে ৬-৭ বছর বয়সি শিশুর সংখ্যা ২০। আমেরিকার ইতিহাসে সেটিই সব থেকে ভয়াবহ স্কুলে হামলার ঘটনা।
রবিনের বন্দুকে ‘ট্রাম্পকে মারো’, ‘ইজ়রায়েল ধ্বংস করে দাও’ এ ধরনের নানা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য রয়েছে। অসমর্থিত সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি বন্দুকে লেখা ছিল— ‘পরমাণু বোমা মেরে ভারতকে উড়িয়ে দাও’। মিনিয়াপোলিস থেকে হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসে িনর্বাচিত হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটিক দলের সদস্য ইলহান ওমর। রবিন যে ডিস্ট্রিক্টের বাসিন্দা ছিলেন, সেখান থেকেই নির্বাচিত হন ইলহান। রবিনের এই সব বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ইলহানের নিন্দায় সরব হয়েছেন রিপাবলিকানরা। তাঁদের দাবি, ট্রাম্প-বিরোধী, ভারত-বিরোধী, ইজ়রায়েল-বিরোধী এই সব ‘দেশি জঙ্গিদের’ মদত দেন ডেমোক্র্যাটেরা।
এঞ্জেলা জাবেলা, ‘মাদার্স ডিমান্ড অ্যাকশন’-এর মিনিয়াপোলিস শাখার এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টরের প্রশ্ন, “আর কত শিশু মারা গেলে এই দেশ থেকে যুদ্ধে ব্যবহারের মারণাস্ত্র বেআইনি হবে? স্কুল হোক বা কলেজ, কনসার্ট হোক বা চার্চ, এ দেশে কোথাও প্রাণের কোনও নিশ্চয়তা নেই।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)