E-Paper

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতোর মালা পরিয়ে হেনস্থা কুমিল্লায়

কেউ এক জন এগিয়ে দিল সাদা কাগজ আর কলম। নির্দেশ এল, ‘সই কর ব্যাটা, সই কর!’ সঙ্গে পড়ল মাথার দু’দিকে দুই রামচাঁটি।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:৩৫
বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্থা বাংলাদেশে।

বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাকে হেনস্থা বাংলাদেশে। প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

বাজার করতে বেরিয়েছিলেন ৭৯ বছরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই। ঘিরে ধরে ১৫-২০ জন। কিল-চড় পোশাক ধরে টানাটানি। অপরাধ কী প্রশ্নের জবাব, ‘এ ব্যাটা মুক্তিযোদ্ধা’। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারায় রবিবার সকালের ঘটনা। অতঃপর গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হল জুতোর মালা। ‘৫ অগস্ট‘ স্বাধীন হওয়া’ বাংলাদেশের ‘তৌহিদি জনতা’ তাদের ফতোয়া জানিয়ে দিল— ‘তুই নিজেকে আর কখনও মুক্তিযোদ্ধা বলবি না। চলে যাবি এই গ্রাম ছেড়ে, এখানে তোর থাকা চলবে না।’

কেউ এক জন এগিয়ে দিল সাদা কাগজ আর কলম। নির্দেশ এল, ‘সই কর ব্যাটা, সই কর!’ সঙ্গে পড়ল মাথার দু’দিকে দুই রামচাঁটি। বিভ্রান্ত বৃদ্ধকে আজ্ঞা পালন করতে দেখা গেল। সঙ্গে সঙ্গে নতুন নির্দেশ— ‘এত দিন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অহঙ্কার করেছিস, এর জন্য গ্রামের সকলের কাছে ক্ষমা চা। কে তোকে মুক্তিযুদ্ধ করতে বলেছিল?’ জোড় হাত উপরে তুললেন বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা— গলায় ঝুলছে জুতোর মালা, দু’চোখে অশ্রুধারা। কম্পিত কণ্ঠে বললেন, ‘সবার কাছে আমি ক্ষমা চাইছি।’ এ বার এক জন তার হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে নিয়ে চলল, ভেসে এল তার কণ্ঠ, ‘গ্রামে সকলের কাছে গিয়ে গিয়ে তোকে ক্ষমা চাইতে হবে। চল...’

ভিডিয়ো শেষ। খুবই স্পষ্ট ভিডিয়ো। ‘তোহিদি জনতা’-র নামে কারা এই কাজ করল, ভাল ভাবেই দেখা গিয়েছে। পরে নির্যাতিত বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা নিজেই বলেছেন, “এরা সকলেই পরিচিত লোক, জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী।” জামায়াত যদিও তা অস্বীকার করে বলেছে, এদের কেউ তাদের কোনও স্তরের নেতা বা কর্মী নয়। মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান’ বলে বর্ণনা করে দোষীদের বিচারের দাবি করা হয়েছে দলের বিবৃতিতে।

পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিয়ো থেকে দুষ্কৃতীদের পরিচয় মিললেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এই ঘটনার নিন্দা করেছেন বলে জানিয়ে তাঁর প্রেস উইং বিবৃতি দিয়েছে। সেই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, খুন-সহ ৯টি মামলার আসামি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সফিউল আলম বলেন, “আব্দুল হাই মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেক্টরের এক জন বীর যোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে সাহসী ও অগ্রণী ভূমিকা ছিল তাঁর।” আলম জানাচ্ছেন, আওয়ামী লীগের শাখা সংগঠন কৃষক লীগের নেতা হলেও বরাবরই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন আব্দুল হাই। এ জন্য স্থানীয় সাংসদ মুজিবুল হকের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে আওয়ামী লীগ আমলেও মিথ্যা মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন। জেলেও গিয়েছেন তিনি।

মুক্তিযোদ্ধার নির্যাতনে তড়িঘড়ি নিন্দা করলেও রবিবারই ইউনূস সরকার যমুনা নদীর উপরে নির্মীয়মান রেল সেতুটির নাম থেকে বঙ্গবন্ধুকে ছেঁটে দিয়েছে। নোটিস জারি করে জানানো হয়েছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেতুটির নাম পরিবর্তন করে যমুনা রেল সেতু হল। সেতুটির কাজ কবে শেষ হবে, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

dhaka

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy