পহেলগাঁও কাণ্ডের পরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক কূটনৈতিক পদক্ষেপ করেছে ভারত। সেগুলির মধ্যে অন্যতম ১৯৬০ সালের ভারত-পাক সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেওয়া। কিন্তু ভারত ওই চুক্তি স্থগিত করে দেওয়ার পরেও পাকিস্তানে স্বাভাবিক ছন্দেই বইছে সিন্ধুর জল। উপগ্রহ চিত্র এবং সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে এমনটাই জানিয়েছে ‘ইন্ডিয়া টুডে’।
ভারত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করার ফলে পাকিস্তানের উপর তার কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে নানা পক্ষের নানা মত ছিলই। এর আগে ভারতের কেউ কেউ সমাজমাধ্যমে দাবি করেছিলেন, সিন্ধুর জল না-যাওয়ায় ক্রমশ খরা দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের নানা অংশে। অন্য দিকে, পাকিস্তানিদের একাংশ দাবি করতে থাকেন, ভারত হঠাৎ জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে দেশের বিস্তীর্ণ অংশে।
এই দাবি, পাল্টা দাবির আবহেই, ‘ইন্ডিয়া টুডে’-র প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করার পরেও সিন্ধু এবং পাকিস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত পশ্চিমবাহিনী দুই উপনদী চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তায় জলের প্রবাহ কমেনি। ওই প্রতিবেদনে ওই তিন নদীর উপর নির্মিত ভারতের একটি বাঁধ এবং পাকিস্তানের একটি বাঁধ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ খতিয়ে দেখা হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তান তাদের বাঁধ থেকে তুলনায় কম জল ছাড়েনি। যা থেকে ইঙ্গিত মেলে যে, ভারতে অবস্থিত শেষ বাঁধ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ স্বাভাবিকই রয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনে পাকিস্তানের সিন্ধু নদী পরিচালন ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের দেওয়া পরিসংখ্যান উদ্ধৃত করা হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ এপ্রিল, যে দিন ভারত চুক্তি স্থগিত করার কথা জানিয়েছিল, সে দিন চন্দ্রভাগা নদীর উপর পাকিস্তানের সিয়ালকোট এলাকার মারালা বাঁধ থেকে ২২,৮০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। গত বুধবার ওই বাঁধ থেকেই ছাড়া হয়েছে ২৬,২৬৮ কিউসেক জল। একই ভাবে গত ২৪ এপ্রিল পাক অধিকৃত কাশ্মীরে বিতস্তা নদীর উপর থাকা মংলা বাঁধ থেকে ছাড়া হয়েছে ৪৪,৮২২ কিউসেক জল। আর গত বৃহস্পতিবার একই বাঁধ থেকে ছাড়া হয়েছে ৪৩,৪৮৬ কিউসেক জল।
ভারত ছাড়িয়ে নদীগুলি পাকিস্তানে ঢোকার পরেই তাদের উপর বাঁধ তৈরি করেছে পাকিস্তান। প্রতিবেদন অনুসারে, জলবণ্টন চুক্তি স্থগিতের পরেও পাকিস্তানের বাঁধগুলি থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ এই ইঙ্গিতই দেয় যে, ভারতে থাকা বাঁধগুলি থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ এখনও প্রায় একই রয়েছে। অর উল্টোটা হলে পাকিস্তানের বাঁধগুলি থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ কমত বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, সিন্ধু এবং তার পশ্চিমবাহিনী উপনদীগুলির জল আটকানো বা অন্য পথে ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো পরিকাঠামো এখনও পর্যন্ত ভারতের নেই। নেই কোনও বড় বাঁধ, যার মাধ্যমে সিন্ধুর বিপুল জলরাশিকে আটকে দেওয়া যায়।
তবে চুক্তি স্থগিতের কোনও প্রভাবই পাকিস্তানের উপর পড়বে না, বিষয়টা এমনও নয়। ভারত সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করায়, জল ছাড়ার পরিমাণ আর ইসলামাবাদকে জানাতে বাধ্য নয় দিল্লি। ফলে নিম্ন অববাহিকায় কতটা জল এসে পৌঁছোবে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য থাকবে না পাকিস্তানের হাতে। এর প্রভাব পড়তে পারে সে দেশের সেচ ব্যবস্থা, কৃষি এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায়।