আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্তের প্রদেশ টেক্সাসে প্রবল বন্যা ও হড়পা বানে অন্তত ১৩৬ জনের মৃত্যুর দু’সপ্তাহ পরে এখানকার আইনপ্রণেতারা আলোচনা বসলেন, কী ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে নির্ভরশীলতা কমিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মোকাবিলায় তহবিল তৈরি করা যায়।
টেক্সাসের সাম্প্রতিক বন্যা ও হড়পা বানে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গুয়াডালুপে নদী-সংলগ্ন ‘ক্যাম্প মিস্টিক’। মারা গিয়েছে গরমের ছুটিতে এখানে ক্যাম্প করতে আসা অনেক কিশোরী স্কুলপড়ুয়া। আর এই উদ্ধারকাজের প্রসঙ্গেই আলোচনায় উঠে আসছে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে ‘ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি’ বা ‘ফিমা’র-র কথা। আমেরিকার পরিবেশগত যে কোনও দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এত দিন ফিমা-ই ছিল সবথেকে নির্ভরযোগ্য সংস্থা। দাবানল থেকে হ্যারিকেন, টর্নেডো থেকে বন্যা— যে কোনও বিষয়ে তাদের অভিজ্ঞ কর্মী, প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ, এই সমস্ত কিছুর উপরে আমেরিকার প্রদেশগুলি নির্ভর করত। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়া পরে ইলন মাস্কের নির্দেশে যখন সরকারি সংস্থাগুলির বিপুল সংখ্যক কর্মচারী ছাঁটাই হচ্ছে, তখন ফিমা থেকেও দু’শো জনকে ছাঁটাই করা হয়। তা ছাড়া, ফিমাকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। ফিমা চলে যায় ‘ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিয়োরিটি’র অধীনে। ফিমার চিফ অব স্টাফ মাইকেল কোয়েন পদত্যাগ করেন, আরও এক হাজার কর্মীকে স্বেচ্ছাবসর নেওয়ানো হয়।
টেক্সাসের বন্যার খবর আসার পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি ফিমা। কারণ, ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিয়োরিটির প্রধান ক্রিস্টি নোমের অনুমোদন পাওয়ার জন্য সংস্থার কর্মীদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল। অভিজ্ঞ নেতৃত্ব চলে যাওয়া এবং আপতকালীন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তের জন্য অন্য সংস্থার উপরে নির্ভরশীলতা, এই দু’টি কারণের সাঁড়াশি চাপে বন্যাপীড়িত টেক্সাস হিল কান্ট্রিতে পৌঁছতে ফিমা কর্মীদের প্রায় তিন দিন দেরি হয়ে যায়। প্রাণ দিয়ে যার মাসুল গুনতে হল স্কুলপড়ুয়াদের।
ফিমা তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগে বলেছিলেন, তিনি চান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারেরই নেওয়া উচিত। কিন্তু বড় মাপের বিপর্যয় হলে যে তার মোকাবিলা করা প্রাদেশিক সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, তা দেখিয়ে দিল ‘ক্যাম্প মিস্টিক’-এর বিপর্যয়। এখন প্রেসিডেন্ট তাই ভাবছেন, আপাতত ছাঁটাই বন্ধ রেখে ফিমা-কে আগের মতোই কাজ করতে দেওয়া হোক। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ফিমা-র তহবিলেও আপাতত কোপ বসানো হবে না, এ রকমই সিদ্ধান্ত নাকি নিয়েছেন ট্রাম্প।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)