জঙ্গি সংগঠন আল কায়দার অর্থ সহায়তাকারীদের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ‘গ্রামীণ’ নেটওয়ার্কের দীর্ঘদিনের যোগাযোগ রয়েছে— বাংলাদেশের সাপ্তাহিক পত্রিকা ব্লিৎজ়-এ এমনই একটি অনুসন্ধানমূলক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে।
নোবেলজয়ী ইউনূসকে বিশ্ব জুড়ে ক্ষুদ্র ঋণের পথিকৃৎ এবং দরিদ্রদের বন্ধু হিসেবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু ইউনূসের ‘গ্রামীণ ব্যাঙ্ক’ সম্পর্কে ২০০৩ সালের মার্চে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্টের প্রসঙ্গ টানা হয় ব্লিৎজ়-এর ওই প্রতিবেদনে। সিআইএ-র তথ্যের ভিত্তিতে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে আল কায়দার অর্থদাতাদের তালিকায় সৌদি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ জামিলের নাম উঠে আসে। তিনি ‘গ্রামীণ-জামিল মাইক্রোফাইন্যান্স’-এর বোর্ড মেম্বার ছিলেন। বাংলাদেশের ওই সাপ্তাহিকটির দাবি অনুযায়ী, জামিল ৯/১১ হামলার মূলচক্রী ওসামা বিন লাদেনের অন্যতম অর্থ সহায়তাকারী ছিলেন। ব্লিৎজ়-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ, অনলাইন কর্পোরেট রেকর্ড অনুযায়ী, ২০০৭ সালে ‘গ্রামীণ’ ফাউন্ডেশন এবং আব্দুল লতিফ জামিল গ্রুপের শাখাপ্রতিষ্ঠান ‘গ্রো ওয়েল লিমিটেড’-এর যৌথ উদ্যোগে ‘গ্রামীণ-জামিল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও তুরস্কে ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার কাজ করে বলে দাবি। তবে ব্লিৎজ়-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সাইপ্রাসে নিবন্ধিত এবং দুবাইয়ে সদর দফতর থাকা এই প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইট বর্তমানে নিষ্ক্রিয় এবং ফেসবুক পেজটিও রহস্যজনক ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে’।
গ্রামীণ এবং জামিল সংযোগকে আরও সুদৃঢ় করছেন ‘গ্রামীণ-জামিল মাইক্রোফাইন্যান্স লিমিটেড’-এর চেয়ারম্যান জাহের আল মুন্নাজ্জেদ। তিনি সৌদি আরবের এএলজে গ্রুপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আব্দুল লতিফ জামিলের সিনিয়র উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন। হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের প্রাক্তনী ও ফরাসি আন্তর্জাতিক আইনে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী মুন্নাজ্জেদকে এমইএনএ এবং তুর্কি অঞ্চলে মাইক্রোফাইন্যান্স বিস্তারের অন্যতম স্থপতি বলে ব্লিৎজ়-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের ওই সাপ্তাহিকটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, জামিল পরিবারের আর এক ব্যক্তি ইউসুফ জামিলের কথা। গত শতাব্দীর ৮০-র দশকে লন্ডনের ক্যাসিনো মহলে তাঁর কুখ্যাতি ছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেল’-এর তথ্য অনুযায়ী ইউসুফ জামিল একটি আন্তর্জাতিক শিশু অপহরণ মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। দাবি করা হয়, কুখ্যাত জেফ্রি এপস্টাইনের ‘ব্ল্যাক বুক’-এ তাঁর নাম পাওয়া গিয়েছে। এ ছাড়া, ৯/১১ হামলার আর্থিক সহায়তার অভিযোগ নিয়ে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা এবং পরবর্তী কালে ২০০৬ সালে ব্রিটিশ সর্বোচ্চ আদালতে পত্রিকার পক্ষে রায়ের বিষয়টিও প্রতিবেদনে বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ব্লিৎজ়-এর প্রতিবেদনে আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য দাবি করা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুডের যোগ রয়েছে। এ ছাড়াও প্রতিবেদনে অত্যন্ত উদ্বেগজনক একটি অভিযোগ হল, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ ব্যক্তিদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রিতে বাধ্য করার মতো ঘটনার সঙ্গেও গ্রামীণ ব্যাঙ্কের নাম জড়িয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)