Advertisement
E-Paper

কর্মী ছাঁটাই আর বরাদ্দে কোপ, মেঘ ঘনাচ্ছে আশঙ্কার

২০ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মচারীকে আট মাসের বেতন নিয়ে স্বেচ্ছাবসরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ট্রাম্প সরকারের তরফে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প। —ফাইল চিত্র।

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:১৯
Share
Save

ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যভার গ্রহণের পর থেকেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে সরকারি কর্মী ছাঁটাইয়ের পালা। কবে কোন সংস্থা বা বিভাগ বন্ধ করে দেওয়া হবে, তা নিয়ে নিত্যদিন আশঙ্কায় ভুগছেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা। ২০ লক্ষ কেন্দ্রীয় কর্মচারীকে আট মাসের বেতন নিয়ে স্বেচ্ছাবসরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ট্রাম্প সরকারের তরফে। ওই ঘোষণার পরে ৬৫ হাজার কর্মচারী ইতিমধ্যেই অবসর নিয়েছেন।

আমেরিকা-সহ একশোটি দেশে জনকল্যাণমূলক নানা কাজ ও ত্রাণ দিয়ে থাকে ইউএসএআইডি। ক্ষমতায় আসার পরেই এই সংস্থার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ত্রাণ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি সংস্থাটিতে বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়ের রাস্তা নিয়েছেন ট্রাম্প। তাঁকে সাহায্য করছেন তাঁর অন্যতম সহযোগী ধনকুবের ইলন মাস্ক। সংস্থাটির কর্মীসংখ্যা দশ হাজার থেকে কমিয়ে ছ’শোর কাছাকাছি নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে হোয়াইট হাউস সূত্রে। ট্রাম্প-মাস্কের ‘উদ্যোগে’ ইতিমধ্যেই ‘কনজ়িউমার ফিনান্সিয়াল প্রোটেকশন এজেন্সি’ বন্ধ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় এবং ছোট গবেষণা সংস্থাগুলিতে যে জৈব-চিকিৎসার (বায়োমেডিক্যাল) গবেষণা হয়, তার মূল পৃষ্ঠপোষক ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ। এই ধরনের গবেষণায় আমেরিকা বিশ্বের কাছে পথপ্রদর্শক। সম্প্রতি ওই সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এই গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমানো হবে। ক্যানসার চিকিৎসায় অত্যাধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, প্রতিষেধক এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধমূলক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে অনুদানের একটি বিরাট অংশ দিয়ে থাকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ। এই অনুদানের একটা অংশ দেওয়া হয় আনুষঙ্গিক খরচের জন্য। তার মধ্যে রয়েছে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনার খরচ, ছাত্র-গবেষকদের বেতন, প্রশাসনিক কাজকর্ম চালানোর খরচ, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ, সম্মেলন এবং প্রশিক্ষণের খরচ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বন্ধু একটি বায়োমেডিক্যাল গবেষণা সংস্থায় কর্মরত। তাঁরা এই কেন্দ্রীয় অনুদান পান। এই আনুষঙ্গিক খরচ, যা তাঁদের সংস্থা পায়, তা থেকেই তাঁদের ঘরভাড়া, বিদ্যুতের বিল, গবেষণাগারের যন্ত্রপাতি কেনা এবং অন্যান্য খরচ চলে। গবেষণার অনুদান ছাঁটাইয়ের পরে তাঁরা এখন আতঙ্কিত।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় বিশ্ববিখ্যাত। গবেষণার জন্য তাদের এই আনুষঙ্গিক খরচ হয় প্রায় সত্তর শতাংশ। একই রকম ভাবে বিখ্যাত প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় খরচ করে ৬৪ শতাংশ। সারা দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালগুলিতে গবেষণার খরচ ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা সংস্থাগুলিকে এই আনুষঙ্গিক খরচ ১৫ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে গবেষণাগারগুলিতে অনুদানের অভাবে গবেষণারত ছাত্রছাত্রীদের বড় অংশের চাকরি যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গবেষণা বন্ধ হয়ে যাওয়া বা তার গতি এবং মান উভয়ই পড়ে যাওয়ার মতো আশঙ্কাও থাকছে। প্রসঙ্গত, গবেষকদের মধ্যে অনেক বিদেশি ছাত্রছাত্রীও রয়েছেন। গবেষণার কাজ না হলে, তাঁরাও ৬০ দিনের বেশি সে দেশে থাকতে পারবেন না। ফলে সকলেই আশঙ্কার প্রহর গুনছেন।

এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে সরব হয়ে পদক্ষেপ করেছেন ২২টি প্রদেশের অ্যাটর্নি জেনারেলরা। ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল বিচারক অন্তত সাময়িক ভাবে এই নির্দেশ প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানিয়েছেন। হাসপাতাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও মিলিত ভাবে ট্রাম্প সরকারের এই নয়া নির্দেশিকার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। হার্ভাডে কর্মরত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গবেষক জানালেন, আদালত কয়েক দিনের মধ্যে কোনও পদক্ষেপ না করলে, ছোট থেকে বড় সমস্ত গবেষণাগারেই তার প্রভাব পড়বে। প্রভাব পড়বে মানুষের স্বাস্থ্যেও।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump vrs

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}