Advertisement
০৩ মে ২০২৪
Fusion Energy

ফিউশন বিক্রিয়ায় অফুরান শক্তির সন্ধান বিজ্ঞানীদের, দূষণহীন বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন দিশা

আমেরিকার দাবি, এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিশার সন্ধান মিলবে। পাশাপাশি, পুরো পদ্ধতিটাই হবে দূষণমুক্ত। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনা যাবে।

ক্যালিফর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে চলছে কাজ।

ক্যালিফর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে চলছে কাজ। ছবি সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:০১
Share: Save:

যে ভাবে সূর্য আর নক্ষত্রেরা বছরের পর বছর ধরে জ্বলছে, ঠিক সেই পদ্ধতিতে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটিয়ে অফুরান শক্তির সন্ধান পেলেন আমেরিকার বিজ্ঞানীরা। গত কালই এ নিয়ে প্রথম মুখ খুলেছিল আমেরিকার শক্তি মন্ত্রক। জানিয়েছিল বড় দিনের আগে বড় চমক অপেক্ষা করছে। তার পরেই আজ, স্থানীয় সময় সকাল ১০ নাগাদ এ নিয়ে সরকারি ভাবে ঘোষণা করেছেন মন্ত্রকের সচিব জেনিফার গ্রানহোম। সরকারের দাবি, জাতীয় প্রতিরক্ষা এবং দূষণমুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি একটি বিরাট বড় সাফল্য।

আমেরিকার দাবি, এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নতুন দিশার সন্ধান মিলবে। পাশাপাশি, পুরো পদ্ধতিটাই হবে দূষণমুক্ত। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যে নামিয়ে আনা যাবে। যদিও পুরো বিষয়টি এখনও বেশ সময় সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদ্ধতিতে বিশ্ব জুড়ে বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে এক দশক বা তার বেশি সময়ও লেগে যেতে পারে। ভবিষ্যতের জন্য লাভজনক এই ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করেছেন জেফ বেজোস, বিল গেটসের মতো ধনকুবেররা।

আমরা এখনও বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লার মতো প্রচলিত জ্বালানির উপরে মূলত নির্ভরশীল। তবে মাটির তলার সেই খনিজের ভান্ডার দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তার উপরে রয়েছে দূষণের সমস্যা। জ্বালানি পুড়িয়ে শক্তি উৎপাদনের সময়ে যে বিপুল পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়, তাতে বিশ্ব-উষ্ণায়নের মতো সমস্যায় জেরবার পৃথিবী। ফিউশন বিক্রিয়ায় এই সমস্ত সমস্যার সুরাহা হবে।

কোন জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বছরের পর বছর ধরে সূর্য আর নক্ষত্রেরা জ্বলছে? কে শক্তি জোগাচ্ছে তাদের? ১৯৩০ সাল থেকে এই নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। একটি দৈনিকের দাবি, দীর্ঘ ৯০ বছরের সেই গবেষণার শেষে সুখবর শুনিয়েছে ক্যালিফর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি (এলএলএনএল)। তাদের বিজ্ঞানীরাই এই সাফল্যের পুরোহিত। এলএলএনএল-এর ডিরেক্টর কিম বুদিল আজ বলেছেন, ‘‘মানবজাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।’’

কিন্তু কী ভাবে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তাঁরা? কী এই ফিউশন বিক্রিয়া?

রিপোর্ট বলছে, এই পদ্ধতিতে দু’টি পরমাণুর মধ্যে থাকা নিউক্লি অংশ জুড়ে গিয়ে একটি বড় পরমাণু তৈরি হয়। তার ফলে মোট ভরের সামান্য তারতম্য ঘটে। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় বিপুল শক্তি। আইনস্টাইনের ভর ও শক্তির নিত্যতা সূত্র অনুযায়ী আমরা জানি, ভর আর শক্তি— একটি অপরটিতে পরিবর্তিত হতে পারে। দু’টি পরমাণু ভেঙে একটি বড় পরমাণু তৈরি হওয়ার সময়ে ভরের যে ফারাক হয়, তার থেকে জন্ম নেয় ওই বিপুল শক্তি। যা ব্যবহার করে অফুরান বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব।

গবেষণাগারে ফিউশন বিক্রিয়া ঘটাতে বাইরে থেকে বিপুল পরিমাণে তাপ প্রয়োগের প্রয়োজন (প্রায় ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস)। গবেষণাগারে লেজার পদ্ধতিতে সেই তাপের জোগান দেওয়া হয়েছে। তবে এর একটা সুবিধাও রয়েছে। ফিউশন বিক্রিয়া এক বার চালু হয়ে গেলে, তা থেকেই পরবর্তী ধাপের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি মেলে। আগের বিক্রিয়া থেকে শক্তি সংগ্রহ করে নেয় পরমাণুরা।

সব মিলিয়ে বিশ্ব রাজনীতি ও অর্থনীতিতে যখন এক দিকে অর্থনৈতিক মন্দার আভাস মিলছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের জটিলতায় জ্বালানি সঙ্কট তৈরি হয়েছে— সেই মুহূর্তে এই রকম একটি আবিষ্কারের কথা চমকে দিয়েছে পৃথিবীকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Scientists American usa Development Science
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE