Advertisement
০৭ মে ২০২৪
International News

দ্বীপরাষ্ট্রে দ্রুত বাড়ছে চিনা প্রভাব, দু’বছরের মাথায় ফের শ্রীলঙ্কা সফরে মোদী

শ্রীলঙ্কা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত দু’বছরের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার দ্বীপরাষ্ট্র সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আজ অর্থাত্ বৃহস্পতিবারই শ্রীলঙ্কা পৌঁছনোর কথা তাঁর। বুদ্ধজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচিতে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে মোদীর।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ভারত সফর সেরে গিয়েছেন। উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। মোদীর জন্যও কলম্বোয় একই আয়োজন। কিন্তু নয়াদিল্লির সঙ্গে নৈকট্য বাড়ালেও বেজিং-এর সঙ্গে কলম্বো নৈকট্য কমাবে, এমনটা বিশেষজ্ঞরা মোদী করছেন না। — ফাইল চিত্র।

শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি ভারত সফর সেরে গিয়েছেন। উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। মোদীর জন্যও কলম্বোয় একই আয়োজন। কিন্তু নয়াদিল্লির সঙ্গে নৈকট্য বাড়ালেও বেজিং-এর সঙ্গে কলম্বো নৈকট্য কমাবে, এমনটা বিশেষজ্ঞরা মোদী করছেন না। — ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ১৬:০৭
Share: Save:

শ্রীলঙ্কা যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত দু’বছরের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার দ্বীপরাষ্ট্র সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আজ অর্থাত্ বৃহস্পতিবারই শ্রীলঙ্কা পৌঁছনোর কথা তাঁর। বুদ্ধজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচিতে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে মোদীর। ওয়াকবিহাল মহলের মতে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক লক্ষ্য নিয়েই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর। অর্থনৈতিক কারণে চিনের প্রভাব যে ভাবে ফের বাড়ছে শ্রীলঙ্কায়, তা রুখতেই কলম্বো এবং নয়াদিল্লির মধ্যে কূটনৈতিক দৌত্যের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের আমলে ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছয়। চিন-পন্থী রাজাপক্ষে শ্রীলঙ্কার দরজা চিনের জন্য হাট করে খুলে দিয়েছিলেন। কলম্বোয় চিন বন্দর তো বানাচ্ছিলই, শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন অংশে সড়ক এবং রেল পরিকাঠামোও গড়ে উঠছিল চিনা বিনিয়োগে। কিন্তু, ২০১৫-র জানুয়ারিতে রাজাপক্ষেকে হারিয়ে বিপুল জয় পান ভারত-পন্থী হিসেবে পরিচিত মৈত্রিপালা সিরিসেনা। প্রেসিডেন্ট হয়েই তিনি ভারত সফরে এসেছিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীও ২০১৫-তেই শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়েছিলেন। ভারত-শ্রীলঙ্কা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে সোনালি অধ্যায়ের সূচনা করা হবে— আশ্বাস দিয়ে এসেছিলেন মোদী। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা শ্রীলঙ্কায় চিনা বিনিয়োগে নির্মীয়মান প্রকল্পগুলির কাজ থামিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি আবার ঘুরে গিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মাথাতেই ফের শ্রীলঙ্কায় বাড়তে শুরু করেছে চিনের প্রভাব।

শ্রীলঙ্কার বর্তমান প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা ভারত-পন্থী হিসেবে পরিচিত হলেও, অর্থনৈতিক কারণে তিনি চিনকেও খুশি রাখতে চাইছেন। বলছেন বিশেষজ্ঞরা। —ফাইল চিত্র।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা বলছেন, চিন যে পরিমাণ অর্থসাহায্য এবং বিনিয়োগ শ্রীলঙ্কায় করছে, তা ভারতের পক্ষে করা সম্ভব নয়। ভারতও শ্রীলঙ্কার উন্নয়নে খরচ করতে আগ্রহী। কিন্তু টাকা ঢালার লড়াইয়ে বেজিং-এর সঙ্গে এঁটে ওঠা নয়াদিল্লির পক্ষে এই মুহূর্তে অসম্ভব। প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা যখন চিনকে দূরে ঠেলার পথ ধরেছিলেন, সে সময় তিনি শুধুমাত্র ভারতীয় বিনিয়োগের ভরসায় তা করেছিলেন, এমন নয়। পশ্চিমী দেশগুলির কাছ থেকেও যথেষ্ট বিনিয়োগ আসবে শ্রীলঙ্কায়, আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু, সে আশা পূরণ হয়নি। অর্থনীতিকে অক্সিজেন জোগাতে তাই প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাও ফের চিনা বিনিয়োগের দিকেই ঝুঁকেছেন।

আরও পড়ুন: চিন বাদ, নেপালের শীর্ষ উন্নয়ন সহযোগী তালিকায় ঢুকল ভারত

যে সব রেল এবং সড়ক প্রকল্পের কাজ সিরিসেনা থামিয়ে দিয়েছিলেন, সেগুলির কাজ শ্রীলঙ্কায় সম্প্রতি ফের শুরু হয়েছে। চিনা বিনিয়োগে শুরু হয়েছে টেলিকমিউনিকেশন টাওয়ার তৈরির কাজ। ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে কলম্বো বন্দর সংলগ্ন জলভাগে যে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির পরিকল্পনা চিন করেছিল, প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার সরকার সেই প্রকল্পকেও সবুজ সঙ্কেত দেওয়ার পথে। কলম্বো বন্দরে চিনের এমন বিপুল উপস্থিতি ভারতের পক্ষে মোটেই সুখবর নয়। সব মিলিয়ে দ্বীপরাষ্ট্রে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব দেখে ভারত একেবারেই স্বস্তিতে নেই। সে কারণেই মাত্র দু’বছরের মধ্যেই ফের শ্রীলঙ্কা সফর নরেন্দ্র মোদীর। বলছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশারদরা।

শ্রীলঙ্কায় সাধারণ মানুষের ভাবাবেগ কিন্তু চিন বিরোধী। চিনা বিনিয়োগে তৈরি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ এবং বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা তীব্র আন্দোলন করছেন। পুলিশকে জলকামান ব্যবহার করে বা বলপ্রয়োগ করে ভাঙতে হচ্ছে আন্দোলন। ছবি: এপি।

মোদীর এই শ্রীলঙ্কা সফরেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? তিনি দ্বীপরাষ্ট্রে পা রাখলেই কি দেশটি ফের চিনকে দূরে ঠেলে দেবে? একেবারেই না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। শ্রীলঙ্কা এখন নিজেদের জলসীমার দক্ষিণাংশে একটি গভীর সমুদ্র বন্দরের নিয়ন্ত্রণ স্বত্বও চিনকে বিক্রি করে দিতে চাইছে। ওই বন্দরের নিয়ন্ত্রণ চিনের হাতে যাওয়া ভারতের পক্ষে কৌশলগত ভাবে বড় ধাক্কা হবে বলে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মত। কিন্তু ভারতের পক্ষে তা রোখাও সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আজ নিজের দেশে স্বাগত জানাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে। কিন্তু মোদী শ্রীলঙ্কা থেকে ফেরার কিছু দিনের মধ্যেই বেজিং যাচ্ছেন রনিল। গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়ে চুক্তি চূড়ান্ত করে আসাই তাঁর বেজিং সফরের মূল লক্ষ্য।

অনেক আশা নিয়েই এই শ্রীলঙ্কা সফর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। কূটনৈতিক লক্ষ্যটাও অনেক বড়। ভারতের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সুসম্পর্ক আরও নিবিড় করতে হয়তো মোদী সফল হবেন। কিন্তু দ্বীপরাষ্ট্রকে চিনা প্রভাব থেকে মুক্ত করার যে লক্ষ্য নয়াদিল্লির রয়েছে, তা পূরণে মোদী কতটা সফল হবেন, সে নিয়ে সংশয় রয়েই যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE