আওয়ামী লীগের পরে মুহাম্মদ ইউনূসের লক্ষ্য কি এ বার বিএনপি! ভারতের গোয়েন্দা সূত্রগুলির দাবি, ক্ষমতাকে সুদৃঢ় ও দীর্ঘমেয়াদি করতে ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা সেরে ফেলেছেন ইউনূস এবং তাঁর সহযোগীরা। তার নীল নকশা অনুযায়ী, অন্তর্বর্তিকালীন সরকারে বিরোধী যে কোনও স্বরকে দমন করা হবে। বিশেষনজর রয়েছে বিএনপি-র উপরে। প্রয়োজনে সাধারণ জনগণ, বিশিষ্টজন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিদের গ্রেফতারের জন্য যে কোনও ধরনের ‘অপারেশন’ চালাতে পারে সরকার। গোয়েন্দা সূত্রগুলির দাবি, এই পরিকল্পনায় পূর্ণ মদত রয়েছে আমেরিকা এবং পাকিস্তানের।
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কয়েক দিন আগে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে নিযুক্ত ইউনূসের বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর বাসভবনে গোপন বৈঠক হয়। সেখানে ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের আইজি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সচিব। সেখানে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আসন্ন গণভোট ঠেকাতে বিএনপি-র আন্দোলন দমন-সংক্রান্ত কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই সূত্রটি জানিয়েছে, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিএনপি যাতে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করে ইউনূস প্রশাসনের উপরে চাপ তৈরি করতে না পারে, সে জন্য ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর ধাঁচে যৌথবাহিনীর একটি অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের মাধ্যমে ইউনূস জেনেছেন, বিএনপি তাঁর আশ্বাসে আর ভরসা করতে রাজি নয়। বরং তারা রাজনৈতিক ভাবে সক্রিয় হয়ে ফেব্রুয়ারির নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আদায়করে সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরিস্থিতি আঁচ করে ইউনূস প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়— বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০২৪-এর ৫ অগস্টের পর থেকেহিংসা, ভাঙচুর, লুটপাট ও তোলাবাজির অভিযোগে গ্রেফতার অভিযান শুরু করা হবে।
এই আশঙ্কা অনেক দিন থেকেই করছিল বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যখন বলতেন, পুলিশ-প্রশাসন তো ইউনূসের তা হলে তারা বিএনপির সঙ্গে যুক্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে না কেন! ইউনূস প্রশাসন তখন চুপ করে থাকত। এ বার সুযোগ বুঝে বিষয়টিকে কাজে লাগাতে চাইছে তারা। এক কূটনীতিকের কথায়, ‘‘আওয়ামী লীগ কার্যত নিষিদ্ধ। ভোটের ময়দানে তারা নেই। দেশের জনমতকে প্রভাবিত এবং সংগঠিত করতে পারবে একমাত্র বিএনপি। তাই বিএনপি-কে দমিয়ে রেখে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে তথাকথিত গণভোটের মাধ্যমে ইউনূসকে ক্ষমতায় রাখতে চায় জামায়াতেএবং পাকিস্তান।’’
বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত এক জেনারেলের বক্তব্য, ‘‘শুধু রক্ষাকবচ পাওয়ার জন্য ইউনূস রাষ্ট্রপতি হতে চান না। আর একটি কারণ হল, রাষ্ট্রপতি হলে তিনি সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হবেন এবং সেনাবাহিনীর উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এর পর তিনি ওয়াকার-উজ়-জ়ামানকে অপসারণ করে তাঁকে রাষ্ট্রদূত পদে পাঠাতে পারবেন এবং নিজের ঘনিষ্ঠ লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসানকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করতে পারবেন।’’
গোয়েন্দা সূত্রের খবর, যে অভিযানের পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার নেতৃত্বে থাকবে যৌথবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এস এম কামরুলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এবং আইএসআইয়ের পছন্দের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাদেকুজ্জামানের পদোন্নতি করা হয়েছে।তৃণমূল স্তরে যৌথবাহিনীর প্রয়োজন অনুযায়ী সেনা মোতায়েন ও সমন্বয়ের দায়িত্বও ওই ব্রিগেডিয়ারের উপরে ন্যস্ত থাকবে।
গোয়েন্দা তথ্যে উল্লেখ, অভিযান শুরু হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে বিএনপি-র প্রাক্তন মন্ত্রী এহসানুলহক মিলনকে বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানোর ঘটনায়। এ ছাড়া, অতি সম্প্রতি চট্টগ্রামের রাউজানে বিএনপি-র এক নেতার (যিনি অস্ত্র ব্যবসায়ীও) বাড়ি থেকেও বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)