বাইরে প্রবল ঝড়। বহুতল শপিং মলের পাঁচ তলায় কল সেন্টারে তখনও কাজ করছেন জনা ৪০ তরুণ-তরুণী। শনিবার সকালেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে তৃতীয় তলের পোশাক ও আসবাব পত্রের দোকানগুলোয়। দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে ওপরের দু’টি তলায়। পুড়ে যায় লিফ্ট। রবিবার সকালে দমকল কর্মীরা যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে, একটি দেহ মেলে সিঁড়ি থেকে। পঞ্চম তলটি সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ায় সেখানো ঢোকাও সম্ভব হয়নি। দক্ষিণ ফিলিপিন্সের খ্রিস্টান অধ্যুষিত দাভাও শহরের মেয়র সারা দুতের্তে কার্পিও কান্নাভেজা কণ্ঠে ঘোষণা করলেন— নিখোঁজ ৩৬ জনের বেঁচে থাকার কোনও সম্ভাবনাই নেই। তাঁদের মৃত বলে ধরে নিতে হবে। আগুন একেবারে নিভে গেলে দেহগুলি উদ্ধারের চেষ্টা করা হবে।
মলের মার্কেটিং ম্যানেজার জান্না আবদুল্লা মুতালিব জানিয়েছেন, শনিবার সকালে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে দমকল বাহিনীকে ডাকা হয়। গ্রাহকদের ঢোকাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রবল ঝড়ে আগুনকে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না। মলটির প্রথম তলে কেবল মনোহারি সামগ্রী বিক্রি হতো। পোশাক, জুতো, আসবাব পত্রের মতো দাহ্য সামগ্রীর দোকান ছিল তৃতীয় তলে। সম্ভবত বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে সেখানে আগুন লাগে। বড়দিনের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিপুল সামগ্রী স্টক করা হয়েছিল দোকানগুলিতে। আগুনও তাই দ্রুত ছড়ায়।
অগ্নিকাণ্ডের খবর শুনে দুর্যোগের মধ্যেই বহু মানুষ জড়ো হন মলের বাইরে। আটকে পড়া কল সেন্টারের কর্মীদের আত্মীয় স্বজনও সেখানে চলে আসেন। প্রথম প্রথম আটকে পড়া কর্মীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছিল। তার পরে সব স্তব্ধ হয়ে যায়। কান্নায় ভেঙে পড়ে স্বজনরা দমকল কর্মীদের উদ্ধার চেষ্টা দেখতে থাকেন। সারা রাত চেষ্টার পরে রবিবার সকালে যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে, ওপরের দু’টি তলার অনেকটাই তখন ভেঙে ঝুলে পড়েছে।
দাভাওয়ের বেশির ভাগ বাসিন্দাই খ্রিস্টান। বড়দিনের উৎসবের আগে এই দুর্ঘটনায় শোকে ভেঙে পড়েন তাঁরা। রোমান ক্যাথলিক গির্জার একটি প্রতিনিধি দল মেয়রকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরে ঘটনাস্থলে আসেন। তার পরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মেয়র সারা। কথা বলা শুরু করা মাত্র তাঁর চোখ দিয়ে জল গড়াতে থাকে। তার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জানান, দমকল কর্মীরা তাঁকে জানিয়েছেন— ধ্বংসস্তূপে কারও বেঁচে থাকার আশা নেই। নিখোঁজ ৩৬ জনকে তাই মৃত বলেই ধরে নিতে হবে। তাঁদের মধ্যে এক জন চিনা বা দক্ষিণ কোরীয় বলে মনে করা হচ্ছে। বাকি সকলেই ফিলিপিন্সের নাগরিক।