র্যাবাইয়ের এই বাড়িতেই চড়াও হয়েছিল আততায়ী। সাংবাদিকদের জানাচ্ছেন নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো। এএফপি
ফের হামলার শিকার ইহুদিরা। তাঁদের একটি উৎসব চলাকালীন চাপাতি হাতে এক র্যাবাইয়ের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এক জন। তার পরে আচমকা লোকজনকে মারতে শুরু করে সেই আততায়ী। শনিবার রাতে নিউ ইয়র্কের শহরতলি এলাকার ওই ঘটনায় পাঁচ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। আহতদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা গুরুতর।
নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই ঘৃণ্য, কাপুরুষোচিত কাজে তিনি আতঙ্কিত। ‘ঘরোয়া সন্ত্রাস’-এর সঙ্গে তিনি তুলনা করেছেন এই ঘটনাকে। পুলিশকে দ্রুত এই ঘটনার সুরাহা করার নির্দেশ দিয়েছেন অ্যান্ড্রু। টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘নিউ ইয়র্কে ইহুদি-বিদ্বেষ কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া হবে না। সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় হামলাকারীকে যথাযোগ্য শাস্তি দেওয়া হবে।’’
এক সপ্তাহের মধ্যে নিউ ইয়র্কে সম্ভাব্য ইহুদি-বিদ্বেষজনিত অন্তত আটটি ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল ডে ব্লাসিয়ো। তাঁর দাবি, পুলিশ শহরে নজরদারি আরও বাড়িয়েছে। ইজ়রায়েলের প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিন বলেছেন, ‘‘আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ইহুদি-বিদ্বেষ ক্রমশ বাড়ছে, এটা শুধু ইহুদিদের সমস্যা বা ইজ়রায়েলের সমস্যা নয়। এই মনোভাব দূর করতে আমাদের একজোট হয়ে লড়তে হবে। সারা বিশ্বেই এই মানসিকতা ক্রমশ মাথাচাড়া দিচ্ছে এবং আশঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’
নিউ ইয়র্ক শহরের মঁসি এলাকাটি ইহুদি-প্রধান। অ্যারন কোন নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, আততায়ী একটা ঝাঁটার মতো লম্বা চাপাতি হাতে নিয়ে পর পর তেড়ে যায় লোকজনের দিকে। ৬৫ বছর বয়সি অ্যারনের কথায়, ‘‘নিজের জন্য প্রার্থনা করছিলাম।’’ সেই সময়ে ওই বাড়িটিতে অন্তত ১০০ জন লোক ছিলেন বলে দাবি। উৎসবের রাতে র্যাবাই মোমবাতি জ্বালাচ্ছিলেন। সেই সময়েই ওই আতঙ্ক। অ্যারনের দাবি, আততায়ী স্থানীয় একটি সিনাগগে ঢুকে পড়বে ভেবে পালাতে গেলেও বাড়ির দরজা বন্ধ করে দেওয়ায় সে আর পারেনি। পুলিশ তাঁকে পাকড়াও করে। কৃষ্ণাঙ্গ, লম্বা ওই হামলাকারী আপাতত পুলিশি হেফাজতে।
এই হামলার নিন্দা করেছেন ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তাঁর কথায়, ‘‘উৎসব চলাকালীন নিউ ইয়র্কের মঁসিতে র্যাবাইয়ের বাড়ির মধ্যে ইহুদিদের উপরে নৃশংস হামলার কড়া নিন্দা করছে ইজ়রায়েল। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে বসে আমরা এই মনোভাব দূর করতে আপ্রাণ চেষ্টা করব।’’
গত বছর পিটসবার্গের এক সিনাগগে এক উগ্র-শ্বেতাঙ্গ হামলা চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছিল। আমেরিকায় এর আগে ইহুদিদের উপরে এত বড় হামলার ঘটনা আর ঘটেনি।
র্যাবাইয়ের বাড়িতে হামলার পরে সৌহার্দ্যের বার্তা প্রচারের চেষ্টা শুরু করেছে প্রশাসন। নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটা জেমস বলেছেন, ‘‘আমি আজ এবং প্রতিদিন ইহুদিদের পাশে আছি।’’ মেয়র ব্লাসিয়ো বলেছেন, ‘‘নিউ ইয়র্কের বহু ইহুদি পরিবারের সঙ্গে মঁসির নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। সেই সব মানুষ কী পরিমাণ আতঙ্কে রয়েছেন, তা অকল্পনীয়। এই ঘৃণার পরিবেশ
যাতে ‘স্বাভাবিক’ হয়ে না পড়ে তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে হবে আমাদের।’’
ইহুদি-বিদ্বেষ রুখতে কাজ করে এমন এক সংস্থা এডিএল-এর চেয়ারম্যান জনাথন গ্রিনব্লাট বলেছেন, ‘‘সিনাগগে প্রার্থনা, সুপারমার্কেটে কেনাকাটা অথবা বাড়িতে উৎসব পালন— সব ক্ষেত্রেই ইহুদিরা যেন হিংসা থেকে দূরে থাকতে পারেন। এই মুহূর্তে ইহুদিদের জন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োজন। যারা আইন ভাঙছে, তাদের যেন যথাযথ শাস্তি হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy