গভীর রাতে মুহাম্মদ ইউনূসের অনুগামী ‘ছাত্র-জনতা’ দরজা ভেঙে ঢুকল বাড়িতে। অভিযোগ, বাড়িটিতে ‘ঠিক মতো তল্লাশি চালালে’ অন্তত ২০০ কোটি টাকা এবং লুকিয়ে থাকা ‘স্বৈরাচারের দোসর’ আওয়ামী লীগের নেতাদের পাওয়া যাবে।
এ জন্য পুলিশকে জানায়নি ছাত্র-জনতা, ডাকা হয় টিভি চ্যানেলগুলিকে। তাদের সামনে দরজা ভেঙে সেই বাড়িতে ঢুকল জনতা। মুহূর্তে লুট হয়ে গেল ঘরে রাখা নানা দামি সামগ্রী।
তার পরে চলল আস্ফালন। এল পুলিশ, সেনাবাহিনীও। দুই বাহিনীর কর্তা এক গাল হেসে করমর্দন করলেন, যেন কিছুই ঘটেনি। দরজা ভেঙে ঢোকা লুটেরারা যেন আরও সাহস পেল। কিছু লোক ঘুরে ফিরে দুই বাহিনীর কর্তাদের কাছে নানা অভিযোগ করতে শুরু করল— ‘এখনি ভেতরের ঘরে যান থরে থরে টাকা মিলবে’, ‘দোতলায় গেলেই সবাইকে
ধরতে পারবেন’। বাড়ির বাসিন্দা একটি শিশু তখন তারস্বরে কাঁদছে। তাকে কোলে নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন এক মহিলা। মিনতি করছেন, “আপনারা ভুল করছেন। এখানে কেউ লুকিয়ে নেই। বাড়িতে কোনও পুরুষ মানুষও নেই!” সারা রাত সরকারি বাহিনীর মুখের সামনে দুষ্কৃতীদের এই লুটপাট ও আস্ফালন সম্প্রচার হল টিভিতে, ফেসবুকে, ইউটিউবে।
ঘটনাস্থল ঢাকার অভিজাত গুলশান-২ এলাকা, যার অদূরে আমেরিকা-সহ নানা দেশের দূতাবাস। বাড়িটি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এইচ টি ইমামের পুত্র তানভীর ইমামের প্রাক্তন স্ত্রীর। ২৭ বছর আগে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পুলিশ তিন দুষ্কৃতীকে ধরে ভ্যানে তুলেছিল। কিন্তু এক জন অফিসার এসে তাদের ছেড়ে দিতে বলেন। কারণ ধৃতরা সরকার সমর্থক ও প্রভাবশালী। এর পরে জনতার নির্দেশ শিরোধার্য করে বাহিনী বাড়িটির ভিতরের ঘরে এবং দোতলায় তল্লাশি করতে ওঠে। তবে টাকার পাহাড় বা লুকিয়ে থাকা কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। খালি হাতেই ফেরে বাহিনী।
মঙ্গলবার রাতের ঘটনা ঢাকার বিশিষ্ট জনেদের শিরদাঁড়ায় হিমস্রোত বইয়ে দিয়েছে। সবারই প্রশ্ন— এ বার কার পালা? প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং দাবি করেছে, গুলশনের ওই হামলার ঘটনা আসলে বাড়িটির প্রাক্তন কেয়ারটেকারের চক্রান্ত। বাড়িওয়ালার সঙ্গে গোলমালের জেরে ওই ব্যক্তি সেখানে টাকা থাকার গুজব ছড়িয়ে ভিড় জড়ো করে। ওই ব্যক্তি, তার ছেলে ও আর এক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু নিস্পৃহ বাহিনীর সামনে কী ভাবে রাতভর লুটপাট চলল, বাহিনী কেন লুটেরাদের নির্দেশে পরিচালিত হল, তার ব্যাখ্যা মেলেনি।
মঙ্গলবার দুপুরেই গুজব ছড়িয়ে ভিড় জড়ো করে ইরানের দুই নাগরিককে প্রচণ্ড মারধর করা হয় ঢাকার বসুন্ধরায়। পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এই দুই পর্যটক বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের জন্য এসেছিলেন। ছিনতাইকারী বলে গুজব ছড়িয়ে তাঁদের টাকা, মোবাইল ও ব্যাগও কেড়ে নেওয়া হয়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)