Advertisement
১৩ অক্টোবর ২০২৪
Bangladesh Interim Government

মুজিব নন, জিন্নাকে জাতির পিতা ঘোষণা করার দাবি ঢাকায়

বুধ সন্ধ্যার এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তা যা বলেন তার সার কথা— ১৯৭১-এ ‘কেমন করে যেন’ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ আসলে স্বাধীন হয়েছে ২ বার।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০৯
Share: Save:

বাংলাদেশের স্বাধীনতা-যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়ায় একাত্তরে পাকিস্তানের সেনারা ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবকে নিশানা করে কামান দেগেছিল। পরেও সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে গণতন্ত্রের লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের নেতৃত্ব। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে বিভিন্ন মত ও পথের অনুসারীরা ক্ষমতায় এসে দাবি করছেন, ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার দেশছাড়ার দিনেই আদতে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ। আর এই ‘স্বাধীন’ বাংলাদেশে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবের প্রেক্ষাগৃহে উর্দু শের-শায়েরি ও বক্তৃতায় বুধবার পালিত হয়েছে পাকিস্তানের জনক মহম্মদ আলি জিন্নার ৭৬তম মৃত্যুদিন। জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা পরিবর্তনের দাবি ওঠার পরে এই ঘটনা নাড়া দিয়েছে বাংলাদেশের উদারপন্থীদের। সারা দিন সমাজমাধ্যমে তাঁরা বিষয়টি নিয়ে সরব ছিলেন।

বুধ সন্ধ্যার এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তা যা বলেন তার সার কথা— ১৯৭১-এ ‘কেমন করে যেন’ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশ আসলে স্বাধীন হয়েছে ২ বার। এক বার ১৯৪৭-এর ১৪ অগস্ট, তার পরে চলতি বছরের ৫ অগস্ট। ১৯৭১ ছিল পাকিস্তানকে ভাঙার চক্রান্ত, যা দিল্লির রচনা করা। শেখ মুজিবুর রহমান নন, বাংলাদেশের প্রকৃত জাতির পিতা হলেন মহম্মদ আলি জিন্না। আইন করে এটা প্রতিষ্ঠিত করা হোক। কারণ পাকিস্তানের জন্ম না হলে বাংলাদেশও তৈরি হত না। জিন্না সে দিন না থাকলে পশ্চিমবঙ্গের মতো ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য হয়েই থাকতে হত আজকের বাংলাদেশকে। দিল্লির গোলামি করে কাটাতে হত বাঙালিদের।

কোটা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে সদ্যগঠিত সংগঠন নাগরিক পরিষদের সভাপতি মোহম্মদ সামসুদ্দিন বলেন, “১৯৭১-এ আসলে বাংলাদেশ ভারতের গোলাম হয়েছে। জিন্না অ্যাভিনিউ বা আল্লামা ইকবাল হলের নাম কেন পরিবর্তন করা হয়েছিল? কারণ দিল্লি এটা চেয়েছিল, দেশের মানুষ চায়নি।” এই নব্য নেতা বলেন, “১৯৪৭-এ বাংলাদেশ যদি পাকিস্তানের সঙ্গে না থাকত, তবে কাশ্মীরের মতো আমাদের ঘাড় ফেরানোর উপায় থাকত না। ভারতের জান্তা-রা ঘাড়ের উপরে অস্ত্র ধরে রাখত। জিন্নার অবদান আমাদের ভুললে হবে না। নতুন বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব রেখে চলবে।”

পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার কামরান ধাঙ্গাল বলেন, “এক দিকে পাকিস্তান, অন্য দিকে, বন্ধু দেশ বাংলাদেশ। মাঝখানে একটা বিষধর সাপ, যারা আমাদের সম্পর্ককে বিষাক্ত করে তুলেছিল। এখন আবার আমরা পরস্পরকে আলিঙ্গন করব।”

পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে জিন্নার জন্ম ও মৃত্যুদিন পালন আগে হয়নি তা নয়, তবে তা ছোট মাপের অনুষ্ঠানে। মুছে যেতে বসা মুসলিম লিগ এবং নবাব সলিমুল্লা বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে সংক্ষিপ্ত পরিসরে এই অনুষ্ঠান পালন করত। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। এ বার জাতীয় প্রেস ক্লাবের এই সাড়ম্বর অনুষ্ঠানটির আয়োজকও ছিলেন নবাব সলিমুল্লা অ্যাকাডেমি। অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি হাই কমিশনার প্রধান অতিথি হওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। ছিলেন ডেপুটি হাই কমিশনার ধাঙ্গাল ও পাকিস্তানি দূতাবাসের বেশ কয়েক জন কর্মী। উর্দু কবিতা শোনানো হয়। হয় জিন্নার জীবনী পাঠও।

এই ঘটনার পরে বৃহস্পতিবার নেটিজ়েনদের বিস্ময় ও আতঙ্ক ঝরে পড়ে সমাজমাধ্যমে। কেউ কেউ বলেন, ‘এ-ও দেখার বাকি ছিল!’ অন্য কয়েক জনের প্রশ্ন— ‘এ বার কি পাকিস্তানি জাতীয় সঙ্গীতই আমাদের গাইতে হবে?’ অনেক সাংবাদিক আবার ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের অস্থায়ী নেতৃত্বকে নিশানা করে। তাঁদের প্রশ্ন— এমন অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হল কেন? আবার এক নেটিজ়েন লিখেছেন, ‘এটাই তো প্রকৃত স্বাধীনতা। অনেকের চেপে রাখা মনের কথা কেমন বেরিয়ে পড়ল। আমরাও তাদের চিনে রাখলাম। বুঝলাম দেশকে কোন দিশায় নিয়ে যেতে চায় এরা!’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE