Advertisement
E-Paper

ময়মনসিংহের সেই ভাঙা বাড়ি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের ভিটে নয়! বিতর্কের মুখে আর কী দাবি করল বাংলাদেশ সরকার?

ময়মনসিংহের বাড়ি ভাঙা নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন বাংলাদেশ সরকারের তরফে জানানো হল, সেখানে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের ভিটে ছিল না। এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি সুদীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫ ১৪:৪২
ময়মনসিংহের সেই ভাঙা বাড়ি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের নয়। বিবৃতি দিয়ে দাবি বাংলাদেশের।

ময়মনসিংহের সেই ভাঙা বাড়ি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের নয়। বিবৃতি দিয়ে দাবি বাংলাদেশের। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায় সত্যজিৎ রায়ের পারিবারিক বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রকে কথা বলার আর্জি জানান তিনি। বাড়ি ভাঙা নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন বাংলাদেশ সরকারের তরফে দাবি করা হল, যে বাড়ি ভাঙা হয়েছে, সেখানে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের ভিটে ছিল না। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি সুদীর্ঘ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ওই বাড়িটি বর্তমানে সরকারের মালিকানাধীন। বাড়িটির ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে সেখানে। বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক খবর না-ছড়ানোর আর্জি জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের তরফে।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, সবিস্তার তদন্তের পর দেখা গিয়েছে, বাড়িটির সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের কোনও সম্পর্ক নেই। বাড়িটি তৈরি করেছিলেন স্থানীয় জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী। বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতি অনুযায়ী, অধুনা ভাঙার কাজ চলা বাড়িটির পাশেই ছিল ওই জমিদারের বাংলোবাড়ি ‘শশী লজ’। শশীকান্তের জমিদারির কাজকর্ম যাঁরা দেখাশোনা করতেন, তাঁদের জন্য পাশের ওই বাড়িটি তৈরি করা হয়। জমিদারি প্রথা অবলুপ্ত হওয়ার পর বাড়িটি সরকারের হাতে আসে। পরে বাংলাদেশ সরকার বাড়িটি সে দেশের ‘শিশু অ্যাকাডেমি’-কে ব্যবহার করার অনুমতি দেয়। তার পর থেকে ওই বাড়িটি জেলার শিশু অ্যাকাডেমির দফতর হিসাবে ব্যবহৃত হত বলে দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে। সরকারের খাতায় অকৃষিযোগ্য বসত জমিটি শিশু অ্যাকাডেমিকে দীর্ঘ মেয়াদে লিজ় দেওয়া হয়েছিল। রাতারাতি বিতর্কের কেন্দ্র হয়ে ওঠা বাড়িটির ইতিহাস নিয়ে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা এবং বিদগ্ধ মানুষজনও একই কথা বলেছেন বলে দাবি করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।

বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি।

বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতি।

তবে ওই এলাকার সঙ্গে একটি ক্ষীণ সংযোগ রয়েছে সত্যজিতের প্রপিতামহ হরিকিশোর রায়ের। হরিকিশোর রায় সত্যজিতের পিতামহ তথা প্রখ্যাত সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে দত্তক নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাড়িটির সামনের রাস্তার নামকরণ হয়েছে হরিকিশোরের নামে। রাস্তাটির নাম হরিকিশোর রায় রোড। ওই রাস্তাতেই রায় পরিবারের একটি বাড়ি ছিল। তবে বহু বছর আগেই বাড়িটি বিক্রি করে দেওয়া হয় বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে। বর্তমানে পুরনো বাড়ি ভেঙে বহুতল ভবন মাথা তুলেছে।

ঢাকার বিবৃতি অনুযায়ী, ২০১৪ সালের পর থেকে শিশু অ্যাকাডেমি তাদের দফতর ময়মনসিংহ শহরের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায়। তার পর থেকে ওই বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ফলে সেখানে নানা অসামাজিক কাজ হত বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বাড়িটিতে একটি অর্ধস্থায়ী ভবন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মতো বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির অনুমতি নিয়ে জেলা প্রশাসন পুরনো বাড়িটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ৭ মার্চ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাড়িটি ভাঙার কথা জানানো হয়।

বিবৃতির শেষে বাংলাদেশের একাধিক বিশিষ্ট মানুষের মতামতের কথা জানানো হয়। তাঁদের মধ্যে কেউ কবি, কেউ বা প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ। প্রত্যেকেই জানিয়েছেন, ভাঙার কাজ চলা বাড়িটির সঙ্গে সত্যজিৎ বা তাঁর পূর্বপুরুষদের কোনও সম্পর্ক নেই। বিবৃতি অনুযায়ী, বুধবার বিকেলে এই বিশিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন ময়মনসিংহের ডেপুটি কমিশনার। সেই বৈঠকে প্রত্যেকেই ময়মনসিংহের শিশুদের স্বার্থে দ্রুত পুরনো বাড়ি ভেঙে অ্যাকাডেমির জন্য নতুন ভবন তৈরির আবেদন জানান।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল নয়াদিল্লি। কেন্দ্রের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকারের হাতে থাকা বাড়িটির সংস্কারের প্রয়োজন। বাড়িটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি এবং সেটিকে সাহিত্যের প্রদর্শশালা বানানোর প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়, তা সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণে অর্থসাহায্য করতে রাজি নয়াদিল্লি। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের তরফে দাবি করা হল, ওই বাড়িটি সত্যজিতের পূর্বপুরুষদের ছিল না।

Satyajit Ray Bangladesh Ancestral home
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy