রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলায় দু’জনকে যাবজ্জীবন এবং ন’জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিল বাংলাদেশের হাই কোর্ট। এই মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাত আসামির সাজা কমিয়ে দিয়েছে হাই কোর্ট। বিচারপতি মোস্তাফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি নাসরিন আক্তারের বেঞ্চ আজ এই রায় ঘোষণা করেছে।
রমনা বটমূলে হামলার মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া জীবিত আসামিদের অধিকাংশের সাজা হাই কোর্ট কমিয়ে দিয়েছে। নিম্ন আদালত প্রাক্তন উপমন্ত্রী আবদুস সামাল পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। হাই কোর্ট তা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। কেবল মাত্র শাহাদাতউল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। এই মামলায় নিম্ন আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি মুফতি আব্দুল হান্নানের ফাঁসি আগেই অন্য মামলায় (সিলেটে গ্রেনেড হামলা মামলা) কার্যকর হয়েছে। এ ছাড়া, নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আব্দুর রউফ ও ইয়াহিয়া হাই কোর্টে আপিল শুনানি অপেক্ষমাণ থাকা অবস্থায় মারা যান। সে কারণে এই তিন জনের নাম মামলা থেকে বাদ যায়।
নিম্ন আদালত সাত জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল, হাই কোর্ট তা কমিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। মোট ৯ জনের ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং তার সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করেছে আদালত।
হাই কোর্ট বলেছে, ‘‘নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) রমনা বটমূলে ওই হামলা চালিয়েছিল বলে প্রমাণিত হয়েছে। সেটা ছিল ‘ব্রুটাল মার্ডার’। এই হামলা সাংস্কৃতিক অধিকারের উপরে আঘাত।’’ সরকার পক্ষের আইনজীবী সুলতানা আখতার রুবি বলেন, ‘‘এই হামলা একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ।’’ হাই কোর্টের রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন দোষীদের আইনজীবী শিশির মনি। রায় ঘোষণার পরে কোনও রাখঢাক না করেই তিনি বলেছেন, ‘‘এই রায়দান সঠিক হয়নি। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই এই রায় দেয়নি হাই কোর্ট, বরং নৈতিক কারণে সাজা দেওয়া হয়েছে।’’ হাই কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদনের কথা জানিয়েছে আসামি এবং সরকারপক্ষ।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৯ জন। এক জনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে। এই ঘটনায় নীলক্ষেত থানার পুলিশ সার্জেন্ট অমলচন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি মামলা করেছিলেন। ২০১৪ সালের ২৩ জুন বিচারক আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে। এর পর ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের জেল আপিল ও ফৌজদারি আপিলের শুনানির জন্য মামলাটি হাই কোর্টে গিয়েছিল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)