দিল্লির বার্তার পরে সাবধানি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। ভারত থেকে পলাতক জ়াকির নায়েককে আপাতত বাংলাদেশ সফরের অনুমতি দিচ্ছে না সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, মঙ্গলবার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জ়াকিরের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো এবং বিদ্বেষমূলক বক্তৃতার অভিযোগ রয়েছে। জঙ্গি কার্যকলাপেও তাঁর যোগ থাকতে পারে বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের। জ়াকিরের জন্ম হয়েছিল মুম্বইয়ে, তবে পরে তিনি ভারত থেকে পালিয়ে মালয়েশিয়ায় চলে যান।
২০১২ সালে জ়াকিরে এক বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের ঢাকায় হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলা হয়। ওই ঘটনার পর পরই ভারত থেকে পালিয়ে যান জ়াকির। তাঁকে পলাতক ঘোষণা করে ভারত সরকার। এরই মধ্যে সম্প্রতি খবর ছড়ায়, নভেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ সফরে যেতে পারেন জ়াকির। ‘প্রথম আলো’ অনুসারে, বাংলাদেশেরই এক প্রতিষ্ঠান আগামী ২৮-২৯ নভেম্বর দু’দিনের জন্য তাঁকে ঢাকায় আনতে চায়। তাঁকে ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল ওই প্রতিষ্ঠানের।
জ়াকিরের বাংলাদেশ সফরের সম্ভাবনার কথা চাউর হতেই শোরগোল পড়ে যায় ভারতেও। গত বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে। জ়াকির বাংলাদেশ যাচ্ছেন বলে যে খবর ছড়িয়েছে, তার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে দিল্লি কোনও বার্তা দিতে চায় কি না, তা জানতে চাওয়া হয় রণধীরের কাছে। জ়াকির বাংলাদেশে গেলে তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দিতে বলা হবে কি না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
ওই প্রশ্নের জবাবে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন দিল্লির অবস্থান। জ়াকিরকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ প্রসঙ্গে রণধীর বলেন, “তিনি একজন পলাতক। ভারত তাঁর খোঁজ চালাচ্ছে।” তিনি আরও জানান, তাই জ়াকির যেখানেই যান না কেন, সেখানকার কর্তৃপক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করবেন বলেই ভারতের আশা। জ়াকির প্রসঙ্গে ভারতের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যে উদ্বেগের বিষয়গুলি রয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট দেশ পূরণ করবে বলেও মনে করে দিল্লি।
ভারতের ওই বার্তার এক সপ্তাহ কাটার আগেই জানা গেল, জ়াকিরকে এখনই বাংলাদেশ সফরের অনুমতি দিচ্ছে না মুহাম্মদ ইউনূসদের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকারি ভাবে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জানায়নি ঢাকা। তবে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে ‘প্রথম আলো’ জানাচ্ছে, জ়াকির বাংলাদেশে এলে যে জনসমাগম হতে পারে, তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে নির্বাচনী কাজে ব্যস্ততার কারণে নিরাপত্তার ওই বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয়। মঙ্গলবারের বৈঠকে এমনটাই জানানো হয়েছে বলে দাবি ওই সূত্রের। প্রতিবেদন অনুসারে, বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের ভোটের পরে তিনি ঢাকায় যেতে পারেন, তার আগে নয়।