বাংলাদেশে কবে হবে নির্বাচন? সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বার বার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের দিন নিয়ে ইঙ্গিত দিলেও সরকারি ভাবে এখন পর্যন্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। খালেদা জিয়ার দল বিএনপিও বার বার এই নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর চাপ দিচ্ছে। এই আবহে বাংলাদেশের পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন, জলসম্পদ মন্ত্রকের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দাবি করলেন, চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন হবে। আর এই সময় বেঁধে দিয়েছেন খোদ ইউনূস। সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন এমনটাই জানিয়েছে।
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সম্মেলনে যোগ দিয়ে নির্বাচনের এই দিনক্ষণ ঘোষণা করেন সৈয়দা। তিনি জানান, চলতি বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর জুনের মধ্যে হবে নির্বাচন। এই দিনক্ষণ নড়চড় হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, শুধু নির্বাচনের কাজ করার জন্য এই অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়নি। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের সভার পরে এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সৈয়দা জানিয়েছেন, তিনটি ‘দায়িত্ব’ নিয়ে শাসনভার গ্রহণ করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। সেই তিন দায়িত্ব হল সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব শুধু নির্বাচন করানো নয়। মনে করা হচ্ছে, বিরোধী বিএনপি যে ভাবে নির্বাচন করানোর দাবি তুলেছে, সেই প্রসঙ্গেই এই কথা বলেছেন পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন, জলসম্পদ মন্ত্রকের উপদেষ্টা সৈয়দা। তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, দায়িত্ব নেওয়ার থেকে সরকারের সামনে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হচ্ছে। তাঁদের দায়িত্ব পালন তথনই সম্ভব হবে, যখন সকলের সহযোগিতা পাবেন।
আরও পড়ুন:
ইউনূসও এই প্রতিবন্ধকতার কথাই জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার। তা জানিয়ে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেছিলেন ইউনূস। সেখানেই তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বলে খবর। আরও খবর, বৃহস্পতিবারের বৈঠকে নির্বাচন নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন ইউনূস। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে তা অবাধ এবং সুষ্ঠু ভাবে হওয়া সম্ভব কি না, সেই নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি। সূত্রের খবর, ভোটে ব্যালট ছিনতাই আটকানো যাবে কি না, পুলিশ আদৌ ব্যালট ছিনতাই আটকাতে পারবে কি না, ইউনূস নিজেই তা নিয়ে সন্দিগ্ধ। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে ব্যর্থতা, কাঙ্ক্ষিত সংস্কারে ব্যর্থতার দায় তিনি নিতে চান না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। এ বার সে দেশের উপদেষ্টা জানালেন, ইউনূস নির্বাচনের দিনক্ষণ বেঁধে দিয়েছেন।
গত ৫ অগস্ট গণআন্দোলনের জেরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের, হাসিনা ভারতে চলে আসেন। তার পরে ইউনূসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। কথা ছিল, প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কারের পরেই সাধারণ নির্বাচন করা হবে বাংলাদেশে। এখনও কোনও নির্বাচন হয়নি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকারের উপর নির্বাচনের জন্য চাপ দিতে শুরু করেছে। সেই চাপেই ইউনূস পদ ছেড়ে দিতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই আবহে অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টা নির্বাচনের দিনক্ষণ জানিয়ে দিলেন। সেই সঙ্গে এ-ও জানালেন যে, শুধু নির্বাচন করানো এই সরকারের কাজ নয়।