Advertisement
E-Paper

মাথায় কোটি কোটি টাকার দেনা! আদানির থেকে বিদ্যুৎ কেনা অর্ধেকে নামিয়ে আনল মুহাম্মদ ইউনূসের প্রশাসন

২০১৭ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য তৎকালীন সরকারের সঙ্গে চুক্তি হয় আদানি গোষ্ঠীর। কিন্তু বাংলাদেশের থেকে কোটি কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে আদানির। ইতিমধ্যে তা মেটাতে শুরু করেছে বাংলাদেশ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:১৩
(বাঁ দিকে) গৌতম আদানি এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) গৌতম আদানি এবং মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

আদানি গোষ্ঠীর থেকে বিদ্যুৎ কেনা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি হয় বাংলাদেশের। সেই চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আদানি গোষ্ঠী। তবে বাংলাদেশের থেকে কোটি কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে আদানিদের। এই বকেয়া বিতর্কের আবহে এ বার আদানির থেকে বিদ্যুৎ কেনা অর্ধেকে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।

বাংলাদেশের যুক্তি, বর্তমানে শীতের মরসুম চলায় বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদ (বিপিডিবি)-এর চেয়ারপার্সন মহম্মদ রেজাউল করিমও জানিয়েছেন শীতকালে চাহিদা হ্রাসের কথা। তাঁর বক্তব্য, সেই কারণে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট চালানোর প্রয়োজন নেই বলে আদানি গোষ্ঠীকে জানানো হয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি ঘিরে সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ। বকেয়া মেটাতেও দেরি হচ্ছে। এই অবস্থায় ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী।

২০১৭ সালে হাসিনার আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎচুক্তির পরে ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ও পার বাংলায় বিদ্যুৎ সরবরাহের সিদ্ধান্ত নেয় আদানি গোষ্ঠী। গোড্ডা থেকেই বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানি করে তারা। সেখানে দু’টি ইউনিট রয়েছে। এক একটি ইউনিটের প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, নভেম্বর মাসে গোড্ডার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ৪১.৮২ শতাংশ ক্ষমতায় কাজ করেছে। যা চলতি বছরে সর্বনিম্ন। ১ নভেম্বর থেকে একটি ইউনিট বন্ধ রাখা হয়েছে গোড্ডায়।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের দু’টি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, গত বারের শীতের মরসুমে আদানির থেকে প্রায় এক হাজার মেগাওয়ারট বিদ্যুৎ কিনেছে বাংলাদেশ। ওই দুই সূত্রের আরও দাবি, কবে থেকে আবার স্বাভাবিক হারে বিদ্যুৎ কেনা হবে তা জানতে চেয়েছিল আদানি গোষ্ঠী। তবে তার কোনও নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি আদানি গোষ্ঠী বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে জানায়, বিদ্যুতের বকেয়া বিল বাবদ ৮০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৬৭৮২ কোটি টাকা) পাওনা রয়েছে। জবাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানায়, দেশে ডলার সঙ্কট সত্ত্বেও তারা আদানি গোষ্ঠীকে ১৫ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ১২৭১ কোটি টাকা) দিয়েছে। তার পরেও ৬৫ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৫৫১১ কোটি টাকা) বকেয়া থেকে যায়। সেই টাকাও মেটানো হবে বলে আশ্বস্ত করে ঢাকা। রয়টার্সকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করিম জানান, বকেয়া ৬৫ কোটি ডলার রয়েছে আদানির কাছে। অক্টোবরে ৯.৭ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৮২২ কোটি টাকা) এবং নভেম্বরে ৮.৫ কোটি ডলার (৭২০ কোটি টাকা) মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই বিপুল বকেয়া থাকার পরেও বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে আদানি গোষ্ঠী। তবে রয়টার্সকে সংস্থার এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, বাড়তে থাকা বকেয়া একটি উদ্বেগের বিষয়। এর কারণে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে সচল রাখা নিয়েও সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদ এবং সরকারের সঙ্গে আমরা বার বার আলোচনা করছি। আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে বকেয়া টাকা শীঘ্র মিটিয়ে দেওয়া হবে।”

২০১৭ সালের চুক্তি অনুসারে ২৫ বছর ধরে আদানি গোষ্ঠীর বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কথা। কিন্তু এই চুক্তিতে একাধিক অনিয়ম ধরা পড়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশের হাই কোর্ট তদন্তের নির্দেশ দেয়। তদন্তের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনেরও নির্দেশ দেয় আদালত। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ওই কমিটির রিপোর্ট দেওয়ার কথা। এর পাশাপাশি ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার আদানি-সহ ছ’টি সংস্থার সঙ্গে হওয়া বিদ্যুৎচুক্তিও খতিয়ে দেখছে।

Bangladesh Adani Row dhaka
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy