শুক্রবারের মধ্যে নির্বাচনী সংস্কার বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের নিয়োগ করা কমিশন। রবিবার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এই খবর জানান। এ বিষয়ে নবনির্বাচিত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও সংস্কার কমিশন কথা বলেছে। কিন্তু রাজনীতি তেতে উঠেছে কোটা-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে মঙ্গলবার ঢাকার শহিদ মিনারের সভা নিয়ে। সেই সভায় ‘মুজিববাদী সংবিধানকে ছুড়ে ফেলে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করার কথা বলছেন ছাত্র নেতারা।
কোটা-বিরোধী ছাত্র নেতারা এই সভা নিয়ে সমাজমাধ্যমে নানা কথা বলছেন, তার কতটা বাস্তব আর কতটা ভিড় জমানোর লক্ষ্যে বিজ্ঞাপনী চাতুর্য— তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে বলে মনে করছেন অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা। রবিবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতা হাসনাত আবদুল্লা বলেছেন, “আমরা চাই মুজিববাদী সংবিধানকে কবরস্থ ঘোষণা করা হবে। মুজিববাদী বাহাত্তরের সংবিধানের কবর রচিত হবে। আমাদের প্রত্যাশা, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক ঘোষণা করা হবে।”
ছাত্র নেতাদের সাংবাদিক বৈঠক। রবিবার ঢাকায়। —নিজস্ব চিত্র।
ঘোষণাপত্রের খসড়ায় আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, ১৯৭১-এ যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ গঠন হয়েছিল, ১৯৭২-এ প্রণয়ন করা সংবিধানে তার কোনও প্রতিফলন ঘটেনি। তাই এই সংবিধানকে ‘ছুড়ে ফেলে দিতে হবে’। আর এক ছাত্র আব্দুল হান্নান মাসাউদ ঘোষণা করেন, “মঙ্গলবারের বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করব।” জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম বলেন, “এই ঘোষণাপত্র আরও আগে উপস্থিত করা উচিত ছিল। আমরা বিশ্বাস করি, এই ঘোষণাপত্র সবার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারবে।”
হাসনাত, সারজিস এবং অন্য সমন্বয়কদের সমাজমাধ্যমের পোস্ট থেকে বর্ষশেষের শহিদ মিনারের কর্মসূচির বিষয়ে রবিবার দিনভর কৌতূহল তৈরি হয়েছিল। অনেকে মনে করেছিলেন, ‘বিপ্লবী সরকার’ ঘোষণা করবেন ছাত্ররা। কেউ কেউ আবার বলছিলেন, রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানের অপসারণের দাবিতে হয়তো আন্দোলনের সূচনা করবেন ছাত্ররা। তবে দিনের শেষে সেই সব কৌতূহল অনেকটাই নিবৃত্ত। সারজিস বলেছেন, “ঘোষণাপত্রে আমরা আমাদের প্রস্তাব দেব, সরকারের দায়িত্ব সেটা বাস্তবায়ন করা।” সরকারে অংশ নিয়ে পাঁচ মাসে রং চটে যাওয়া ছাত্র নেতাদের ডাকে আর লোক জমছে না। অন্য ছাত্র সংগঠনের নেতাদের কথায়, মঙ্গলবার কত লোক এঁদের ডাকে জড়ো হন, সে দিকেই সবার নজর থাকবে।
ছাত্রদের অনুষ্ঠানের সঙ্গে দূরত্ব ঘোষণা করেছে ইউনূস সরকারও। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম রবিবার বলেন, “এটি একটি বেসরকারি উদ্যোগ। সরকারের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই।” উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “এটা একান্তই ছাত্রদের বিষয়।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)