E-Paper

প্রত্যাবর্তন চায় বিএনপি, তারেক সংশয়ে

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, বিএনপি-র সঙ্গে জামায়াতে ইসালামীর তিক্ততা ক্রমশ বাড়ছে।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ১০:০৪
শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা। ফাইল চিত্র।

ফিরতে যত দেরি করবেন ততই কঠিন হবে দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। এমনই মনে করছে সে দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক সূত্র। বলা হচ্ছে, তাঁর দলেরই এক অংশের যে দাবি জোরালো হয়েছে, তার মূল কথা, ‘অনেক বছর হয়েছে, এ বার দেশে ফিরুন নেতা’। তাতে ঝুঁকি যদি নিতে হয়, দলীয় স্বার্থে তা নিতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে তিনি ঢাকায় ফিরলে বিএনপি-র জন্য তা অক্সিজেনের সমান, এমন কথাও বলা হচ্ছে।

তারেক অবশ্য নিজেই আজ জানান, এই মুহূর্তে দেশে ফেরা তাঁর নিজের হাতে নেই। বিএনপি-র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা প্রসঙ্গে সমাজমাধ্যম তিনি লিখেছেন, ‘এমন সঙ্কট-কালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যে কোনও সন্তানের মতো আমারও আছে। কিন্তু অন্য আর সকলের মতো সেটা বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ নেই।’ তাঁর কথায়, ‘রাজনৈতিক বাস্তবতার হিসাবে সেই পরিস্থিতি তৈরি হওয়া মাত্রই স্বদেশে ফেরার ক্ষেত্রে আমার সুদীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’

সব মিলিয়ে ইঙ্গিত স্পষ্ট। এখনই ফেরার কথা ভাবছেন না খালেদাপুত্র। অথচ তিনি যাতে ঢাকায় ফিরে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা পান, সে জন্য বুলেটপ্রুফ গাড়ি আনা হয়েছে বাইরে থেকে, দলীয় অফিসের কাছেই গুলশনে তাঁর বাড়িতে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় প্রায় দুর্গ তৈরি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, বিএনপি-র সঙ্গে জামায়াতে ইসালামীর তিক্ততা ক্রমশ বাড়ছে। অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও প্রকারান্তরে বিএনপি-কে ‘ফ্যাসিস্টদের (আওয়ামী লীগ) সহযোগী শক্তি’ এবং ‘পূর্বতন জমানার সুবিধাভোগী’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। দেওয়াল লিখন ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এক, আওয়ামী লীগের আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনাই নেই। হাসিনাকে বাংলাদেশের বর্তমান শাসক ফেরত না পেলেও তাঁর দলকে যে নির্বাচনী ময়দানের ধারে কাছে আসতে দেওয়া হবে না, তা স্পষ্ট। দুই, জামাত চাইছে গণভোট করে সংবিধান বদল এবং তারপর নিজেদের সুবিধাজনক শর্তে জাতীয় নির্বাচন করতে। সূত্রের বক্তব্য, ইউনূসও তাই চান, অর্থাৎ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা বাড়িয়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও অধিকার কাটছাঁট করতে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হতে চান। তবে এ ব্যাপারে আপাত ভাবে জামাত এবং ইউনূসের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব দেখা গিয়েছে। ইউনূস জানিয়েছিলেন, আগামী বছর জাতীয় নির্বাচন এবং জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট একই সঙ্গে হবে। জুলাই সনদ কার্যকরের উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানালেও জামাত ও তাদের সহযোগীরা জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করানোর সিদ্ধান্ত তারা সমর্থন করবে না। তারা আগে গণভোট চায়। তবে মতপার্থক্য যাই হোক, রাজনৈতিক সমীকরণে ইউনূস এবং জামাতের ঘনিষ্ঠতা অনেক বেশি এবং সে ক্ষেত্রে ছিটকে যেতে বসেছে বিএনপি। জামাত নেতৃত্বের পক্ষ থেকে অসুস্থ বিএনপি-র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গ তুলে বলা হচ্ছে, তাঁর অবর্তমানে বিএনপি পঞ্চাশ টুকরোতে ভেঙে যাবে। আওয়ামী লীগ সম্পর্কেও তাঁদের বক্তব্য, হাসিনা না-থাকলে এই দলের ভাঙন অবশ্যম্ভাবী।

তিন, পশ্চিমি দেশগুলিও জামাতকে একটা সুযোগ দিতে চাইছে কি না সেই প্রশ্ন উঠছে। ইসলামী মৌলবাদীরা গণতান্ত্রিক নেতা হয়ে উঠতে পারেন, এমন তত্ত্বের আভাস মিলছে ব্রিটেন থেকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুকের সঙ্গে জামাতের আমীর শফিকুর রহমানের বৈঠকটিও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বৈঠকের পর জামাতের বক্তব্য, বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

সব মিলিয়ে বিএনপি-র একটি সূত্রের দাবি, তারেক এলে বিএনপি চাঙ্গা হবে। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে তিনি যদি না-ও আসেন (কারণ সেটিতে শেখ হাসিনার সিলমোহর লাগানো রয়েছে) ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আসার সিদ্ধান্ত নিন, এমনই
চাওয়া হচ্ছে।

দলীয় শীর্ষ সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি-র একাংশের মত, তারেকের দেশে ফেরা ঠেকাতে দেশের ভিতরে ও বাইরে বিভিন্ন গোষ্ঠী তৎপর। এটাও বলা হচ্ছে, তারেক বর্তমানে ব্রিটেনে ‘ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেন (আইএলআর) স্টেটাসে’ রয়েছেন। দেশে ফিরতে হলে ট্রাভেল পাস-সহ একাধিক প্রশাসনিক ধাপ অতিক্রম করতে হবে। তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলি দেশের আদালত কী ভাবে বিবেচনা করবে—এ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sheikh Hasina bnp

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy