২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে শুক্রবার ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু তাঁর সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেনি খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি তথা বিএনপি। তাদের বক্তব্য, ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসেই নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব। সেটিই উপযুক্ত সময়। তার জন্য ২০২৬-এর এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। শনিবার ইদুজ্জোহা উপলক্ষে বিএনপি-র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে গিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখান থেকে তিনি জানান, ডিসেম্বর নির্বাচনের উপযুক্ত সময়। এর আগে দলের তরফে বিবৃতি দিয়েও একই দাবি করা হয়েছে।
কেন ডিসেম্বর? কেন এপ্রিল নয়? মূলত তিনটি কারণ তুলে ধরছে বিএনপি। প্রথমত, তাদের দাবি, এপ্রিল মাসের আবহাওয়া নির্বাচনের অনুকূল নয়। সে সময়ে যেমন গরম বেশি থাকে, তেমন নিম্নচাপ এবং ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কাও থাকে। দ্বিতীয়ত, ভোটের জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা রমজান মাসের পরপরই। ফলে রোজার মধ্যে নির্বাচনী প্রচার চালাতে হবে। যাতে রাজনৈতিক দলগুলির সমস্যা হতে পারে। তৃতীয়ত, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে একাধিক পরীক্ষা চলে। সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে বলা হচ্ছে বিএনপি-র তরফে। দশম, দ্বাদশের পরীক্ষার কারণেও নির্বাচনে সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন:
এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে ডিসেম্বরই ভোটের আদর্শ এবং উপযুক্ত সময় বলে দাবি করছে বিএনপি। তাতে জনগণের সমস্যা কম হবে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মির্জা ফখরুল শনিবার বলেন, ‘‘নির্বাচনের জন্য যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য সঠিক সময় নয়। ওই সময় এখানে প্রচণ্ড গরম, ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা থাকবে। সময়টা রোজার পরপরই। পরীক্ষাও আছে। সময়টা খুব চিন্তা করে দেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। আমরা মনে করি, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া সম্ভব এবং সেটাই জাতির জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে।’’
এর আগে বিএনপি-র তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘‘ছাত্র ও জনগণের আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে জুলাই আন্দোলনে সাফল্য এসেছে। নির্বাচন আয়োজনে এই অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব আমাদের হতাশ করেছে। জনগণও ক্ষুব্ধ। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে মানুষ তাদের মৌলিক ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। এই সরকারের আমলে ভোট কতটা অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে, তা নিয়েও মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ ইউনূসের ঘোষণার পরেই বিএনপি-র তরফে ভার্চুয়াল মাধ্যমে জরুরি বৈঠক করা হয়েছিল। সেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছিল। শুক্রবারের ভাষণে ইউনূস যে ভাষা ব্যবহার করেছেন, তাতেও ঘোর আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। তাদের বক্তব্য, ‘‘প্রধান উপদেষ্টার বক্তৃতায় যে সমস্ত শব্দ নির্বাচন করা হয়েছে, তা রাজনৈতিক শালীনতার সীমা অতিক্রম করেছে।’’
২০২৪ সালের অগস্ট মাসে প্রবল গণবিক্ষোভের চাপে পড়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। তিনি ভারতে চলে আসেন। তার পর ৮ অগস্ট বাংলাদেশে নোবেলজয়ী ইউনূসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে অন্তর্বর্তী সরকার। কথা ছিল, বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করবে এবং গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা হবে। সেই নির্বাচনে দেরি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।