বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করে শোরগোল ফেলে দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে সে দেশের রাজনৈতিক মহলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় বিএনপি এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত) নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন তিনি। সে দেশের সংবাদপত্র প্রথম আলোর প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বিএনপি সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার সচিবালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত উল্টো দিক থেকে কোনও সাড়া না-মেলায় খালেদা জিয়ার দল ওই দিনই জরুরি সাংবাদিক বৈঠক করে। সেখানে অন্তবর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা-সহ তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়। এই পরিস্থিতিতে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় (বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী) বিএনপিকে নেতৃত্বকে দেখা করার সময় দিয়েছেন ইউনূস। অন্য দিকে, শনিবারই সন্ধ্যা ৬টায় জামাত নেতৃত্বের সঙ্গে ইউনূসের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশের সাংগঠনিক শক্তি এবং দেশজোড়া প্রভাবের বিচারে সর্ববৃহৎ দল বিএনপি-ই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদার দল অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু নতুন নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা না-হওয়ায় সরকারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়ে। বিএনপি জানিয়েছে, তারা ইউনূসের পদত্যাগ চায় না। কিন্তু নির্বাচনের রূপরেখা জানতে চায়। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ‘প্রথম আলো’কে বলেন, “আমরা তো ওঁর (প্রধান উপদেষ্টা) পদত্যাগ চাই না। আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছি। তিনি কেন সে দিকে যাচ্ছেন না, সেটা আমরা জানি না। তার পরও তিনি যদি দায়িত্ব পালন করতে না-পারেন, তা হলে জাতি নিশ্চয়ই বিকল্প বেছে নেবে। কারণ এটা কোনও ব্যক্তিগত বিষয় নয়, রাষ্ট্রীয় ব্যাপার।”
আরও পড়ুন:
একাধিক সূত্র উদ্ধৃত করে ‘প্রথম আলো’ জানিয়েছে, ইউনূস পদত্যাগ করতে চান। বৃহস্পতিবার এই খবর প্রকাশ্যে আসার পরই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পারস্পরিক আলোচনা শুরু করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলির দাবি, বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জামাত-সহ বিভিন্ন দলের নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় জানান, ইউনূস পদত্যাগ করুন, তাঁরা কেউই চান না। তবে বিএনপির মতো দলগুলি দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা জানতে চায়। বিএনপি সূত্রে খবর, ইউনূসের পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ নির্বাচন পিছোনোর জন্য কোনও কৌশলগত হুমকি কি না, তা-ও বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে দীর্ঘ ক্ষণ বৈঠক করেছিলেন ইউনূস। সেখানেই তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন বলে খবর। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ জানায়, বৈঠকেই ইউনূস নতুন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। জানিয়ে দেন, সেখানে তিনি আর থাকতে চান না। ঘটনাচক্রে, তার আগের দিনই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ়-জ়ামান বলেন, ‘‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদের নির্বাচন হওয়া উচিত।’’