আমেরিকার পূর্ব উপকূলভাগে আছড়ে পড়ল বম্ব সাইক্লোন।
বুধবার থেকেই ফিলাডেলফিয়া শহরটা ঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সাধারণ ঝড় তো নয়। তুষার ঝড়। পর্বতারোহীরা এই শব্দটার সঙ্গে যতটা পরিচিত, সমতলের মানুষেরা ততটা নয়। সমুদ্র উপকূলের মানুষেরা তো একেবারেই নয়। অথচ এই বম্ব সাইক্লোন গ্রাস করল আমেরিকার পূর্ব উপকূলভাগের মানুষকে। বৃহস্পতিবার তো বটেই, শুক্র শনিবারেও এর প্রভাব থাকবে। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস সতর্ক করেছে, উইকএন্ড হবে কনকনে। এতটাই, আধঘণ্টার বেশি বাইরের হাওয়া লাগালে ফ্রস্টবাইটের আশঙ্কা রয়েছে।
বুধবার রাত তখন একটা হবে। বিছানার পাশে জানলার পর্দা সরিয়ে দেখলাম গুঁড়ো গুঁড়ো তুষারপাত শুরু হয়েছে। রাস্তার কালো রঙ তো বটেই, চারপাশের বর্ণময়তাও উধাও। শুধু সাদা কালো। এই মরসুমে আগেও কয়েকদিন বরফ পড়েছে। বরফের পাপড়ি। ফ্লেকস। এ বারেরটা অনেকটা গুঁড়ো গ্লুকোজের মতো।
বরফ পড়লে যে ছবিটা সচরাচর দেখা যায়, সকালবেলা উঠে দেখলাম ব্যাপারটা সে রকম নয়। পার্কিং লটে গাড়ির মাথায় জমে থাকে পুরু বরফের আস্তরণ। এ বারেও তা রয়েছে। আবার মাঝেমাঝে ঝড় তা উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকী সাইডওয়াকেও যে উঁচু হয়ে বরফ জমেছে তা-ও নয়। ইঞ্চি সাতেক। শুধু ঘরে বসে ঝড়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল। বহুকাল আগে রেডিও’র নাটকে যেমন শোনা যেত। হু হু শব্দে মাঝে মাঝে জানলাও কেঁপে উঠছে। বাড়িঘরের মাথায় জমে থাকা বরফও হাওয়ার দাপটে হঠাৎ হঠাৎ উড়ে যাচ্ছে দেখছি। এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখিনি।
আরও পড়ুন:
জমে বরফ নায়াগ্রা, ছবি দেখলে কেঁপে যাবেন আপনিও
ইভাঙ্কার নজরে প্রেসিডেন্ট পদ, বইয়ে জল্পনা
বরফে ঢেকে গিয়েছে রাস্তাঘাট।
স্কুল ডিস্ট্রিক্ট আগেই সমস্ত স্কুলে ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। বাড়ির কাছেই একটা সুপার মার্কেট। বুধবার রাতে সেখানে গিয়ে দেখি লোকজন খাবারদাবার সংগ্রহে ব্যস্ত। আর দেদার বিকোচ্ছে বরফ গলানোর নুন— রকসল্ট। স্থানীয় প্রশাসনের তরফে প্রধান রাস্তা এবং সাইডওয়াকে বরফ পরিষ্কার করার ব্যবস্থা থাকে। তবু বাড়ির চারপাশে বরফ গলাতে নুনই ভরসা। রাতেই সকলে এ সব সংগ্রহ করে রেখেছেন, যদি সকালে বাড়ি থেকে বের না হওয়া যায়! এ অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল শুরু হল এক রকম ছুটির মেজাজে। কিন্তু সারা দিন অবিরাম ঝোড়ো হাওয়া। পূর্বাভাস ছিল ৭২ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। কখনও বেড়েছে, কখনও একটু কমেছে।
ফক্স বা এবিসি’র মতো চ্যানেলে ঝড়ের ছবি দেখাচ্ছে। নিউ ইয়র্কে জেএফকে বিমানবন্দরে হোয়াইট আউট। দৃশ্যমানতা তলানিতে। সমস্ত উড়ান বাতিল। বস্টন বন্দরেও প্রভাব পড়েছে। এ বারে অবশ্য খেল দেখিয়েছে ফ্লোরিডা। বুধবার ফ্লোরিডার উপর দিয়ে এই ঝড় বয়েছে। সেখানে এবার তুষারপাতে লোকজন হতভম্ব। সাধারণত সেখানকার মানুষের তেমন প্রস্তুতি তো থাকে না। মোটকথা, গোটা পূর্ব উপকূলকেই তুর্কিনাচন নাচিয়ে ছাড়ল এই বম্ব সাইক্লোন। দশ পনের বছরে এক বার এ রকম ঝড় দেখে আমেরিকার পূর্ব উপকূল।
হঠাৎ কোনও জায়গার বাতাসের চাপ অনেকটা কমে গেলে বম্ব সাইক্লোনের মুখোমুখি হতে হয়। সে ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২৪ মিলিবারেরও বেশি কমতে হবে চাপ। এ ক্ষেত্রে নাকি ২১ ঘণ্টায় চাপ কমেছে ৫৩ মিলিবারের মতো। উত্তরের ঠান্ডা হাওয়া এবং মধ্য আটলান্টিক থেকে আসা অপেক্ষাকৃত উষ্ণ হাওয়ার সংঘাতে এই ঝঞ্ঝার উৎপত্তি। এখন সেটা ক্রমশ পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তর দিকে উঠে আসছে। ফলে নিউ জার্সি, ডেলাওয়্যার, পেনসিলভ্যানিয়ার একাংশ বিপর্যস্ত। চোখের সামনে তার কিছুটা তো দেখতেই পেলাম।
মুশকিল হল, শুধু তো তুষার ঝড় নয়। আবহাওয়া দফতর প্রবল ঠান্ডার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই তাপমাত্রা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা। মধ্য নিউ জার্সি, ফিলাডেলফিয়ায় বইবে প্রবল ঠান্ডা হওয়া (উইন্ড চিল)। শুক্র এবং শনিবারেও তাপমাত্রা থাকবে হিমাঙ্কের ১৫ ডিগ্রি নীচে। সে তো তাপমাত্রা। কিন্তু বাইরে বেরিয়ে সেটা মনে হবে (আবহাওয়া দফতর প্রকৃত তাপমাত্রার সঙ্গে আরো একটা তাপমাত্রা জানায়, যাকে বলে ফিলস লাইক) আরও চার পাঁচ ডিগ্রি কম। সেটা মূলত ঠান্ডা হাওয়ার জন্যই। এই হাওয়া আধঘণ্টার বেশি গায়ে লাগলে ফ্রস্টবাইট হতে পারে। হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা।
প্রশাসনের তরফে অবশ্য এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সমস্ত ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে। গৃহহীন এবং দুর্গতদের জন্য তৈরি হয়েছে অস্থায়ী আস্তানা। সেই নিরাপদ আশ্রয়ে খাবারদাবার, গরম পোশাক এবং হিটিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে।
ছবি: প্রবীর মিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy