ব্রিটিশ অর্থমনন্ত্রী ঋষি সুনক। ছবি: রয়টার্স।
সরকারের কাছে স্ত্রী ও তাঁর পরিবারের ‘বিপুল’ সম্পত্তির পরিমাণ স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ না-করার অভিযোগ উঠল ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনকের বিরুদ্ধে। তাদের নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে এই বিষয়ে ‘অসঙ্গতি’ নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছে প্রথম সারির এক আমেরিকান সংবাদপত্র। যার জেরে ‘অস্বচ্ছতার’ অভিযোগে বিদ্ধ ইনফোসিস কর্তা নারায়ণ মূর্তির জামাই, ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি।
২০০৯ সালে নারায়ণ মূর্তির কন্যা অক্ষতা মূর্তির সঙ্গে বিয়ে হয় ঋষির। ইনফোসিসের পরিচালকমণ্ডলীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত অক্ষতা। বাবার সংস্থায় কমপক্ষে ৪৩ কোটি পাউন্ডের শেয়ার রয়েছে তাঁর। যে সূত্রে ব্রিটেনের অন্যতম বিত্তশালী মহিলা তিনি। অথচ সংবাদপত্রটির দাবি, ঋষির জমা দেওয়া তথ্য বলছে, ব্রিটেনে শুধু একটি ছোট বাণিজ্যিক সংস্থা চালান অক্ষতা!
আইনি বিধি অনুযায়ী, নিজের পাশাপাশি নিকট-আত্মীয়দের আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য সরকারের কাছে উল্লেখ করতে হয় ব্রিটেনের সব মন্ত্রীকে। আত্মীয়দের তালিকায়, বাবা-মা, ভাই-বোনের পাশাপাশি মন্ত্রীদের জীবনসঙ্গী এবং তাঁর পরিবারের সম্পত্তির খতিয়ানও জমা দেওয়া প্রয়োজন সরকারের কাছে। মন্ত্রী বা তাঁর সম্পর্কিতদের কারও আর্থিক লেনদেনের সূত্রে উদ্ভূত কোনও সমস্যার জেরে নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে তার জন্যেই এই ব্যবস্থা। তবে ঋষির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি শুধু স্ত্রী ছাড়া পরিবারের বাকি কারও সম্পত্তির খতিয়ান জমা করেননি। এবং স্ত্রীয়ের ক্ষেত্রেও সম্পূর্ণ তথ্য দেননি।
আরও পড়ুন: কলকাতায় আসছেন মন্ত্রী, জল্পনা অশোকনগর নিয়ে
আমেরিকান সংবাদপত্রটির নিজস্ব তদন্তের ভিত্তিতে ওই রিপোর্টের দাবি, ঋষির স্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের কাছে ইনফোসিসের বিপুল অঙ্কের শেয়ার রয়েছে। যার সামগ্রিক পরিমাণ ১৭০ কোটি পাউন্ডের কাছাকাছি। শুধু ব্রিটেনেই ওই সংস্থাটিতে কাজ করেন কয়েক হাজার মানুষ। সরকার এবং একাধিক নাগরিক সংগঠনের সঙ্গেও বিভিন্ন সময়ে চুক্তিবদ্ধ ভাবে কাজ করেছে সংস্থাটি। তবে এর কিছুই নাকি উল্লেখ করেননি ঋষি।
আরও পড়ুন: অ্যামাজনের আইন ভাঙার জরিমানা মাত্র ২৫ হাজার, ক্ষুব্ধ বণিক সংগঠন
আরও অনেক কিছুই ঋষি গোপন করে গিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছে সংবাদপত্রটি। যেমন, অ্যামাজ়ন এবং মূর্তিদের এক লগ্নিকারী সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ভারতে ৯০ কোটি পাউন্ডের একটি কর্মকাণ্ড রয়েছে। ‘জেমি অলিভার’ এবং ‘ওয়েন্ডি'জ় বার্গার’ ভারতে যারা চালায় ব্রিটেনের সেই সংস্থাটিতেও অক্ষতার শেয়ার রয়েছে। এ ছাড়াও ব্রিটেনের আরও পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে তিনি যুক্ত। এই সংস্থাগুলিতে তিনি ডিরেক্টর পদে রয়েছেন কিংবা সরাসরি সেখানকার শেয়ারহোল্ডার হিসেবে। সেই তালিকায় অন্যতম ইটন কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য টেলকোট প্রস্তুতকারী এক সংস্থা।
তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও সংবাদপত্রটির তোলা অভিযোগের বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ঋষি সুনকের। মেলেনি অক্ষতা মূর্তির বয়ানও। তবে দেশের ট্রেজ়ারির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিয়ম মেনেই সরকারের কাছে নিজের এবং তাঁর পরিবারিক সম্পত্তি বিষয়ক সমস্ত তথ্য পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ঋষির তরফে। দফতরের এক মুখপাত্রের কথায়, বিষয়টি পর্যোলোচনার দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাও তা নিয়ে কোনও আপত্তি প্রকাশ করেননি। পাশাপাশি তিনি এ-ও জানান যে, সম্পত্তির বিষয়ে কী-কী এবং কতটা উল্লেখ করতে হবে সেই সিদ্ধান্ত মন্ত্রীরা নেন না। এর দায়িত্বে থাকেন সরকারি আমলা বা নির্দিষ্ট উপদেষ্টারা। ফলে এ ভাবে সরাসরি কোনও মন্ত্রীকে কাঠগড়ায় তোলা কখনই উচিত নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy