Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ছেলেরা জঙ্গি, মশলা ব্যবসায়ী বাবা গ্রেফতার

গত রবিবার কলম্বোর পাঁচতারা হোটেল সিনামন গ্র্যান্ডে যে দুই আত্মঘাতী হামলাকারী ছিল, তার মধ্যে এক জন এই মশলা ব্যবসায়ী ইউসুফেরই ছেলে, যার নাম ইলাম আহমেদ ইব্রাহিম।

তিন বছর আগের এই ছবিতে শ্রীলঙ্কার এক মন্ত্রীর সঙ্গে মহম্মদ ইউসুফ ইব্রাহিম (মাঝখানে) ও তাঁর ছেলে ইমসাত (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র

তিন বছর আগের এই ছবিতে শ্রীলঙ্কার এক মন্ত্রীর সঙ্গে মহম্মদ ইউসুফ ইব্রাহিম (মাঝখানে) ও তাঁর ছেলে ইমসাত (ডান দিকে)। ফাইল চিত্র

কলম্বো শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৯ ০৩:১১
Share: Save:

ইস্টার রবিবারের ধারাবাহিক বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে এ বার শ্রীলঙ্কা পুলিশের জালে মশলার এক বড়সড় কারবারি। ওই ব্যক্তি সন্দেহভাজন দুই আত্মঘাতী বোমারুর বাবা বলে পুলিশের দাবি। বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রে ছেলেদের সাহায্য এবং উৎসাহ দেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার মহম্মদ ইউসুফ ইব্রাহিম নামে ওই সম্পন্ন ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গত রবিবার কলম্বোর পাঁচতারা হোটেল সিনামন গ্র্যান্ডে যে দুই আত্মঘাতী হামলাকারী ছিল, তার মধ্যে এক জন এই মশলা ব্যবসায়ী ইউসুফেরই ছেলে, যার নাম ইলাম আহমেদ ইব্রাহিম। শ্রীলঙ্কার সরকারি মুখপাত্র সুদর্শন গুণবর্ধন আজ বলেছেন, ওই পাঁচতারা হোটেলে আত্মঘাতী হামলাকারীদের মধ্যে এক জনকে আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল, পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সে-ও এই ইলাম। আর তার ভাই অর্থাৎ মহম্মদের আর এক ছেলে, ইমসাত আহমেদ ইব্রাহিমও আত্মঘাতী বোমারু হিসেবে কাজ করেছে শাংগ্রি লা হোটেলে। এই তথ্য হাতে আসার পরেই তাদের বাবা মহম্মদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুণশেখর জানিয়েছেন, মহম্মদকে আপাতত পুলিশি হেফাজতেই রাখা হয়েছে। ইব্রাহিম পরিবারের বাকি সদস্যদের হালহকিকতও পুলিশের কাছে রয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি, মশলা ব্যবসায়ীর প্রাসাদোপম বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা। ইস্টার রবিবারে আট নম্বর বিস্ফোরণটি ওই বাড়িতেই তল্লাশি অভিযানের সময়ে ঘটেছিল। যাতে প্রাণ হারান তিন জন পুলিশকর্মী।

প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিংহে একটি বিদেশি চ্যানেলকে আজ জানিয়েছেন, উচ্চবিত্ত পরিবারের বিদেশে পড়াশোনা করা উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের নাম জড়াচ্ছে বিস্ফোরণের চক্রান্তে, যা খুবই চমকে দেওয়ার মতো খবর। বিক্রমসিংহের দাবি, হামলার আগে এদের অনেকের উপরেই নজর ছিল। কিন্তু তাদের হেফাজতে নেওয়ার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ হাতে ছিল না পুলিশের। বিক্রমসিংহে ওই চ্যানেলকে বলেছেন, দেশে আরও হামলার সম্ভাবনা রয়েছে। বেশ কিছু ‘স্লিপার সেল’ সক্রিয়, যারা যে কোনও মুহূর্তে আবার ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানোর ক্ষমতা রাখে। খুব সতর্ক হয়ে কাজ করতে হচ্ছে নিরাপত্তা ও পুলিশ বাহিনীকে। তাদের পাশে আছে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড, এফবিআই, ডেনমার্ক, নিউজ়িল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসের পুলিশ এবং ইন্টারপোল। তদন্ত সংক্রান্ত কোনও তথ্য যাতে বাইরে বেরিয়ে না যায়, তার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মতে, ‘‘পুলিশের উদ্বেগ, ফের গির্জায় এক-দু’জন ঢুকে বড় হামলা ঘটাতে পারে।’’ আর সে কথা মাথায় রেখে কলম্বোর আর্চবিশপ জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সব ক্যাথলিক গির্জা আপাতত বন্ধ রাখা হবে।

ইতিমধ্যে আট বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে ধৃতের সংখ্যা ঠেকেছে ৭০-এ। এই তালিকায় রয়েছেন চার জন মহিলা। কলম্বো থেকে সব চেয়ে বেশি সন্দেহভাজনকে ধরা হয়েছে। এদের বেশির ভাগই আত্মঘাতী হামলাকারীদের পরিচিত বলে পুলিশের দাবি। গত রবিবার থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবারও রাত দশটা থেকে শুক্রবার ভোর চারটে পর্যন্ত কার্ফু জারি থাকছে দেশে।

ধরপাকড় এবং বিস্ফোরণ পরবর্তী হিংসার আশঙ্কায় পশ্চিম শ্রীলঙ্কায় কয়েকশো মুসলিম শরণার্থী স্থানীয় থানা এবং মসজিদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে একাংশের দাবি। তবে বিস্ফোরণের জেরে কোনও ধরনের গোষ্ঠী সংঘর্ষ বা উত্তেজনা ছড়িয়েছে, এমনটা একেবারেই নয়। কিছু কিছু সংবাদমাধ্যম এ ধরনের ‘ভুয়ো’ খবর ছড়িয়ে পরিস্থিতি জটিল করছে।

শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাস সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রোহন গুণরত্ন বলছেন, এ দেশে অবিলম্বে সিঙ্গাপুরের মতো ‘সৌহার্দ্য আইনের’ প্রস্তাব আনা উচিত, যাতে বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা ও উস্কানিমূলক কথাবার্তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ১৯২২ সালে সিঙ্গাপুরে এই আইন পাশ হয়েছিল। এই আইনের আওতায় প্রয়োজন পড়লে যে কোনও ধর্মগুরু বা নেতার ‘উস্কানিমূলক’ ধর্মীয় জমায়েত নিয়ন্ত্রণ করা যায়। অন্য ধর্মের সমালোচনা করে কোনও বার্তা ছড়ানোর চেষ্টা হলেই তা ‘সৌহার্দ্য আইন’ লঙ্ঘন করার চেষ্টা হিসেবে ধরা হবে। গুণরত্নের মতে, ‘‘এই মুহূর্তে শ্রীলঙ্কায় সৌহার্দ্য আইন খুবই জরুরি। তাতে উস্কানিমূলক ভাষণে অপরাধের তকমা দেওয়া যাবে। বিস্ফোরণে অভিযুক্ত ন্যাশনাল তৌহিদ জামাত (এনটিজে)-র মৌলবী জ়াহরানকে যদি ওই আইনে নিয়ন্ত্রণ করা যেত, তা হলে শ্রীলঙ্কায় অনেক যুবককে কট্টর মতাদর্শ থেকে সরিয়ে আনা যেত। হয়তো সে ক্ষেত্রে এত বড় বিস্ফোরণও রুখে দেওয়া যেত।’’ জ়াহরান এখনও বেঁচে আছে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় শ্রীলঙ্কা সরকার।

সহ প্রতিবেদন পি কে বালচন্দ্রন, কলম্বো

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Bomber Arrest Terrorism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE