মাসুদ আজহার। ছবি: এএফপি
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রুদ্ধশ্বাস আন্তর্জাতিক চিত্রনাট্যের যবনিকাপতন হল রাষ্ট্রপুঞ্জে। এ বারও চিনের বাধায় জইশ ই মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারল না রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। এই প্রশ্নে ভারতের পাশে ছিল আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়া, ব্রিটেন-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্র। কিন্তু ফের চিনের প্রাচীরে ধাক্কা খেয়ে আটকে গেল সেই উদ্যোগ। গোটা ঘটনায় ভারত ‘হতাশ’ বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ তালিকায় আনার এই চেষ্টা প্রথম নয়। গত দশ বছর ধরেই ভারত সরকার বিষয়টির জন্য সওয়াল করে আসছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলির কাছে। প্রত্যেক বারই হোঁচট খেতে হচ্ছে বেজিংয়ের আপত্তিতে। পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে নয়াদিল্লির অতিসক্রিয় কূটনীতির ফলে এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে মাসুদের ভূমিকা সামনে চলে আসায় প্রধানত আমেরিকা উঠে পড়ে লেগেছিল। সেইসঙ্গে সক্রিয় হয়েছিল পশ্চিমী বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলিও। তবে এহেন চাপের মধ্যেও যে একেবারে দায়ে না পড়লে ‘সব ঋতুর মিত্র’ পাকিস্তানকে কোনও অস্বস্তিতে ফেলতে চায় না চিন, প্রস্তাব পেশ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেও তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই বিষয়টির মীমাংসা ‘প্রত্যেকের কাছে গ্রহণযোগ্য’ হওয়া প্রয়োজন। সে দেশের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লু কাং বলেন, ‘‘আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের মতো আচরণ করবে চিন।’’ চিনের বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র রবার্ট পালাডিনো জানান, ‘‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসেবে ঘোষণা করার যে ক’টি শর্ত প্রয়োজন, তার সবক’টিই মাসুদ আজহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’’
কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিনের বাধায় মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটিতে ঐকমত্য হয়নি। প্রস্তাবে আপত্তি জানানোর সময়সীমা শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগে চিন জানায়, এই প্রস্তাব বিবেচনা করতে তাদের আরও সময় প্রয়োজন। এ নিয়ে চার বার এই উদ্যোগ আটকে দিল বেজিং। এক বিবৃতিতে সমর্থনকারী দেশগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ‘‘আমরা হতাশ। এর ফলে জম্মু-কাশ্মীরের সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষিতে মাসুদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে পদক্ষেপ করার পথ বন্ধ হয়ে গেল।’’ আজহারকে নিষিদ্ধ জঙ্গি হিসেবে ঘোষণা করতে পারলে কৌশলগত এবং ঘরোয়া রাজনৈতিক ক্ষেত্র- উভয় ক্ষেত্রেই লাভ হত মোদী সরকারের। পাকিস্তানের উপরে যে চাপ তৈরি করা হয়েছে তাতে অক্সিজেন পেত ভারত। একইসঙ্গে আসন্ন লোকসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি ঢেউ তুলতে পারত এই ‘কৃতিত্ব’-কে সামনে রেখে। বিরোধী কংগ্রেসের নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালার মতে, ‘‘মোদী সরকারের বিদেশনীতির ফলে একের পর এক বিপর্যয় হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: শত্রুর কাছে গোপন রাফাল নথি, বিপন্ন দেশের নিরাপত্তা, সুপ্রিম কোর্টে বলল কেন্দ্র
বিশেষজ্ঞদের মতে, চিন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরটি যে এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছে সেখানে জইশ-এর দাপট প্রবল। ফলে মাসুদ-বিরোধিতা করতে চায় না বেজিং।
আরও পড়ুন: পুঞ্চের কাছে নো-ফ্লাই জোনে পাক যুদ্ধবিমান, হাই অ্যালার্ট ভারতীয় বায়ুসেনায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy