Advertisement
E-Paper

চিনের প্রাচীর, বার্লিন প্রাচীর পারেনি! ট্রাম্পের প্রাচীরও কি পারবে?

প্রাচীরের জিগির তুলেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রাক নির্বাচনী সময় থেকেই এ ছিল তার অন্যতম প্রতিশ্রুতি। এ বার সময় এল তা কাজে পরিণত করার। তাঁকে এই প্রাচীরের প্রেরণা কিন্তু জুগিয়েছে যে দেশটি, যার সঙ্গে টক্কর এখন প্রায় সর্বজনবিদিত। চিন।

প্রসেনজিৎ সিংহ

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৭ ১৫:৫১

প্রাচীরের জিগির তুলেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রাক নির্বাচনী সময় থেকেই এ ছিল তার অন্যতম প্রতিশ্রুতি। এ বার সময় এল তা কাজে পরিণত করার। তাঁকে এই প্রাচীরের প্রেরণা কিন্তু জুগিয়েছে যে দেশটি, যার সঙ্গে টক্কর এখন প্রায় সর্বজনবিদিত। চিন।

চিনের প্রাচীর ট্রাম্পের যেমন প্রিয়, তেমনই প্রিয় ছিল আর এক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের। প্রাচীর দিয়ে আমেরিকার দক্ষিণপ্রান্তে মেক্সিকো থেকে অনুপ্রবেশ আটকানোর পরিকল্পনা করেছেন ট্রাম্প। ঠিক যেমন চিনের উত্তরাংশ থেকে মঙ্গোল তথা উপজাতিদের আটকাতে তৈরি হয়েছিল চিনের প্রাচীর। যদিও সেই প্রাচীর একেবারে নিরবচ্ছিন্ন ছিল না। আর তা এক দিনেও তৈরি হয়নি। সম্ভবও ছিল না, কারণ তখন ছিল না ময়দানবোচিত কোনও যন্ত্র। তবে বলে দিতে হয় না, এর পিছনে শ্রম ছিল প্রচুর। সেই শ্রমিকদের অধিকাংশকেই বলপূর্বক ধরে আনা হতো। ঐতিহাসিকদের অনুমান, অন্তত চার লক্ষ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছিলেন চিনের ১৩ হাজার মাইল লম্বা প্রাচীর তৈরির জন্য অনামুষিক কাজ করতে গিয়ে।

শুধু তো প্রাচীর তৈরি করলেই হবে না, তার রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। সর্বোপরি প্রয়োজন উপযুক্ত প্রহরার ব্যবস্থা করা। বহু সাধারণ নাগরিকের জীবনের একটা বড় অংশ কেটে যেত প্রাচীরে টহল দিতে দিতে। দেশে ফেরা হতো না। প্রাচীন চৈনিক লোকগাথায় সে সবের নিদর্শন মেলে। প্রাচীরে কাজ করতে গিয়েছে স্বামী। বহু দিন তাঁর খোঁজ না পেয়ে স্বামীকে খুঁজতে খুঁজতে শত বাধা অতিক্রম করে দেশের উত্তর প্রান্তে এসেছেন তার প্রিয় স্ত্রী। এসে শুনেছেন, স্বামীটি বহু দিন আগেই মারা গিয়েছেন, অমানুষিক পরিশ্রম আর স্বল্পাহারে। ইতিহাসের পাতায় হয়তো সব কথা লেখা থাকে না।

পর্বত প্রমাণ বাধা বোঝাতে এখনও সারা পৃথিবীর মানুষ চিনের প্রাচীরের কথাই ভাবতে ভালবাসে। ইউনেস্কো একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট ঘোষণা করেছে। দৃশ্যতই বিশাল এই প্রাচীরের জন্য মিং রাজাদের মনে রেখেছে পৃথিবীর মানুষ। মিথ হয়ে গিয়েছে এই প্রাচীর। সেই সঙ্গে রাজবংশ। কিন্তু সেই মিথের উল্টো পিঠে রয়েছে ব্যর্থতাও। যে কারণে প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল, তা কিন্তু সফল হয়নি। আটকানো যায়নি অনুপ্রবেশ।

চিনের উত্তরের ওই পার্বত্য অঞ্চলে দিনের পর দিন একা থাকতে থাকতে পাহারাদার সৈনিকদের সঙ্গে সহজেই সম্পর্ক গড়ে উঠত ওপারের মঙ্গোল মহিলাদের। পরবর্তীকালেও চিনা সেনাদের একাংশের বিশ্বাসঘাতকতায় শত্রুরা অনায়াসেই ঢুকে পড়েছিল সেখান দিয়ে। প্রাচীরের সার্থকতা তুচ্ছ করেই। এ নিয়ে প্রচলিত ঠাট্টা হল- চিনাদের পাথরের প্রাচীর যত শক্ত ছিল, নৈতিক প্রাচীর ততটা নয়।

প্রেক্ষিত ভিন্ন হলেও টেকেনি আরও এক প্রাচীর। বার্লিন প্রাচীর। ঠান্ডা যুদ্ধের প্রথম দিকে পূর্ব জার্মানির কমিউনিস্ট সরকার বার্লিন প্রাচীর খাড়া করেছিলেন যাতে গণতন্ত্রের বাতাস খেতে কেউ পশ্চিম জার্মানিতে পালাতে না পারে। পূর্ব জার্মানির সরকারের কাছে সেই দেওয়াল ছিল ‘ফ্যাসিস্ত বিরোধী রক্ষাপ্রাচীর’। আর পশ্চিম বার্লিন একে বলেছিল ‘লজ্জার দেওয়াল’। সেই দেওয়ালও টেকেনি। ২৮ বছর পর ১৯৮৯ সালের নভেম্বরে ভেঙে দিতে হয়। কিন্তু সেই দেওয়াল পেরোতে গিয়েও ওই ক’বছরে প্রায় শ’দেড়েক মানুষের মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকায় কোথাও কাঁটাতার, কোথাও নদী বা জঙ্গলের মতো প্রাকৃতিক বাধার উপর ভরসা করে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা হয়। পারছে কই? সীমান্ত পার হতে গিয়ে রক্ষীদের গুলিতে যেমন বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, তেমনই বেআইনি ভাবে প্রবিষ্ট মানুষের সংখ্যা অগণিত। ভোটবাক্সের বাস্তবতা দেশের সার্বভৌমত্বের গরিমাকেও কখনও খাটো করে দেয়।

আরও পড়ুন: আরব সাগরে নতুন ক্ষেপণাস্ত্রের অগ্নিপরীক্ষায় সফল ভারতীয় নৌসেনা

চিনের প্রাচীর তৈরির সময় শোনা যায় পেরুর রুপোর খনি থেকে টনটন রুপো এসেছিল প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে এশীয় বাণিজ্যপথে। নিশ্চয় সে যুগেও বহু অর্থই খরচ করেছিলেন চিনা রাজারা। মেক্সিকো সীমান্তে দেওয়াল তুললে সেই প্রাচীরের খরচ কে দেবে? মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নেইতো আগেই ট্রাম্পের এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, প্রাচীর তৈরি করতে কোনও অর্থ দেবে না মেক্সিকো সরকার। শুধু তাই নয়। মেক্সিকোর বেসরকারি নির্মাণ সংস্থাগুলিকেও সাবধান করে দেওয়া হয়েছে, তারা যাতে ট্রাম্পের ওই প্রকল্পে শরিক না হয়। একটি বিখ্যাত ফরাসি সংস্থা বিতর্কিত এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

ট্রাম্প বলছেন, মেক্সিকোর প্রাচীর তৈরি করতে বারোশো কোটি ডলার খরচ হবে। যদিও সিএনবিসি-র মতো সংস্থার অনুমান, অঙ্কটা আড়াই হাজার কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে। তবু প্রাচীর তৈরি হবেই।

ট্রাম্প ইতিমধ্যেই এই প্রাচীর কেমন হবে তার একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করেছেন। বলেছেন, আমেরিকার দিক থেকে সুন্দর দেখতে লাগবে এই প্রাচীর, কিন্তু কেউ টপকাতে পারবে না। সত্যিই কি তাই?

ইতিহাস বলে, প্রাচীর তুলে মানুষের গতি রোধ করা যায়নি। ট্রাম্পের এই প্রাচীর কি সেই মিথ ভাঙতে পারবে? জবাব দেবে সময়।

Chinese Wall Donald Trump Mexico Wall Ming Dynasty East Germany Infiltration, Migration
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy