E-Paper

৫ মিনিট সময় দিয়েছিল, তার পরেই আগুন

গতকাল পোখরা ঢোকার সময়েই মোড়ে মোড়ে জ্বলতে দেখেছিলাম মোটরসাইকেল, টায়ার। আগুন লাগানো হয়েছিল বাছাই করা বেশ কিছু দোকান, সরকারি অফিস, হোটেলে।

শুভময় ঘোষ

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৩৩
ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর পরে পোখরার হোটেল।

ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর পরে পোখরার হোটেল। ছবি: শুভময় ঘোষ।

গতকালের অরাজকতা, অস্থিরতার পরে কেটেছে মাত্র ১৫-১৬ ঘণ্টা। রাতের বৃষ্টিতে নিভেছে সব আগুন। আজ সকাল থেকে চারিদিক সব শান্ত। মনে হচ্ছে, যেন কিছুই ঘটেনি!

গতকাল পোখরা ঢোকার সময়েই মোড়ে মোড়ে জ্বলতে দেখেছিলাম মোটরসাইকেল, টায়ার। আগুন লাগানো হয়েছিল বাছাই করা বেশ কিছু দোকান, সরকারি অফিস, হোটেলে। আমাদের হোটেলের ঘরে বসে শুনেছিলাম, মাত্র ১০০ মিটার দূরে পোখরার সবচেয়ে বড় পাঁচতারা হোটেলে একের পর এক ফাটছে সিলিন্ডার। আজ সকালে ঘুমচোখ খুলেই আমার তিন সঙ্গীকে নিয়ে ছুটেছিলাম সেই সরোবর হোটেলে। নিরাপত্তারক্ষীর কাছে শুনলাম, হোটেলের কর্মী-আবাসিকদের নাকি আন্দোলনকারীরা ঠিক পাঁচ মিনিট সময় দিয়েছিল বেরিয়ে আসার জন্য। এর পরেই ১২-১৫ মিনিটের মধ্যে একের পর এক সিলিন্ডারের গ্যাস খুলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে এক সন্ধ্যাতেই পুড়ে খাক কয়েক কোটি টাকার ওই সম্পত্তি। কিন্তু কেন? জানতে পারলাম, নেপালের কোনও নেতা-মন্ত্রীর টাকায় তৈরি হয়েছিল পোখরার সবচেয়ে বড় হোটেলটি। তাই তার এই দশা।

শুধু ওই হোটেলই নয়, রাস্তায় বেরিয়ে বুঝলাম, বেছে বেছে সেইসব দোকান-হোটেলেই আগুন লাগানো হয়েছে, যার সঙ্গে শাসকদলের কোনও নেতা-মন্ত্রীর প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। হয়তো তাঁদের টাকায় অথবা তাঁদের পরিজনদের নামে তৈরি হয়েছিল সেইসব হোটেল বা দোকান। বিক্ষোভকারীদের রোষ আছড়ে পড়েছে সেখানেই। অথচ এক ফুট দূরে থাকা পাশের হোটেল, দোকানে এতটুকু আঁচ লাগেনি। কী আশ্চর্য!

স্থানীয়েরাই বলছেন, সবটাই পূর্ব পরিকল্পিত। কোন হোটেল বা দোকানে ভাঙচুর করা হবে এবং কেন, তা নিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে তথ্য আগে থেকেই ছিল। আর মোক্ষম সময়ে সরে দাঁড়িয়েছে পুলিশ। ফলে অবাধে ভাঙচুর জানিয়েছে উন্মত্ত জনতা। এমনকি, জনরোষ থেকে বাদ যাননি শাসকদলের ছোটখাটো নেতারাও। তাঁদের অধিকাংশই পালিয়ে বেঁচেছেন। তবে পুড়েছে তাঁদের বাড়িঘর। আজ একটা গলিতে ঢুকে দেখলাম, সেখানে একটা বাড়ি পুড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন করে জানলাম, সেটা কোনও এক নেতার বাড়ি ছিল। নেতাকে না পেয়ে বাড়িটাই জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।

হোটেল-দোকানের ছেলেপুলে ও মালিকদের সঙ্গে কথা বলে বুঝলাম, তারা অবশ্য খুবই খুশি। সকলেরই একটাই দাবি, দুর্নীতিমুক্ত দেশ। গত বছর টিলম্যান পাস ট্রেক করতেএসেও দুর্নীতির এত বাড়াবাড়ি দেখিনি, যা এ বারে এসে হাড়ে হাড়ে মালুম হয়েছে। আসলে এ দেশে দুর্নীতি এমন ভাবে চারিয়ে গিয়েছে যে, ন্যূনতম নাগরিক পরিষেবা পেতেও আজকাল চড়া হারে ঘুষ দিতে হচ্ছিল। ফলে তিতিবিরক্ত ছিল জনতা। সমাজমাধ্যম ব্যান ও তার পরে তরুণদের মৃত্যু সেই রোষে ঘৃতাহুতির কাজ করেছে। পর্বতারোহণ বা ট্রেকিং আয়োজনকারী সংস্থাগুলিও সমাজমাধ্যমের মাধ্যমেই নিজেদের বিজ্ঞাপন দেয়, ব্যবসা করে। তাই এমন সরকারি সিদ্ধান্তে বিরক্ত ছিল তারাও। সরকার কে চালাবে, তা নিয়ে সুস্পষ্ট ধারণানেই জনসাধারণের।

গত কাল ভাঙচুরের আগে বেছে বেছে কিছু এলাকার ট্রান্সফর্মার পুড়িয়ে দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। আজ সকাল থেকে পথে নেমেছে সেনা। ফলে দুপুর থেকে পোখরায় ফিরেছে আলো। সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু হয়েছে কার্ফু। সব মিলিয়ে ঝড় চলে যাওয়ার পরের শান্ত পরিবেশ আজ পোখরায়। সম্ভবত এ বার দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার দিকে এগোচ্ছে দেশটি।

আজ হোটেলে ফেরার পথে গাড়ি সরবরাহকারী সংস্থার সঙ্গে কথা বলে এলাম। কাল সকালে গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে সকালেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ব, সাত ঘণ্টা দূরের রক্সৌলের উদ্দেশ্যে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nepal Violence Nepal Nepal Unrest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy