যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজ়ায় শান্তি ফেরানো ও বন্দি-বিনিময় নিয়ে যখন চর্চা চলছে নানা মহলে, ঠিক তখনই প্যালেস্টাইনিদের উপরে হামাসের হামলার ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তুঙ্গে বিতর্ক। এ বিষয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেপ্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ভিডিয়োগুলো কোনও ভাবেই ‘বিচলিত’ করছে না তাঁকে। ট্রাম্পের মতে, যে আট জনকে হামাস খুন করেছে, তাঁরা আসলে কোনও ‘গ্যাং’-এর সদস্য। কী ভাবে ট্রাম্প এই‘গ্যাং’-এর কথা জানলেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য কোনও সদুত্তর মেলেনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের তরফে। এরই মধ্যে অবশ্য,গাজ়াবাসীর উপরে হামলা অব্যাহত ইজ়রায়েলের। ঢুকছে না পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণও। ফলে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যায়, অন্তত আট জন প্যালেস্টাইনিকে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে গুলি করে খুন করছে হামাস। আশপাশে থাকা মানুষজন ওই প্যালেস্টাইনিদের ‘কোল্যাবোরেটর’ বলে মন্তব্য করছেন। অনেকের মতে, যে প্যালেস্টাইনিদের ওই ভাবে খুন করা হচ্ছে, তারা সম্ভবত কোনও এক সময়ে ইজ়রায়েলের হয়ে কাজ করেছিল। এর ফলেই তাঁদের ‘শাস্তি’ দিয়েছে হামাস। এই ভিডিয়ো নিয়ে প্রশ্ন করতেই ট্রাম্প প্রথমে বলেন, এই হত্যার ঘটনা নিয়ে তিনি বিশেষ বিচলিত নন। কারণ তিনি মনে করেন, হামাস কিছু ‘ভীষণ খারাপ গ্যাং’-এর সদস্যদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় কী ভাবে তিনি এই গ্যাংগুলির বিষয়ে জানলেন, তখন অবশ্য নিজের অবস্থান কিছুটা বদল করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি ‘খতিয়ে দেখছেন’।
গাজ়ায় শান্তিচুক্তি কার্যকর করার মাঝেই অবশ্য গাজ়াবাসীর উপরে ইজ়রায়েলি হামলা অব্যাহত। হামাস সূত্রে খবর, গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ২৯ জন গাজ়াবাসীর দেহ এসেছে গাজ়ার বিভিন্ন হাসপাতালে। এর মধ্যে তিন জনকে এ দিন সকালেই হত্যা করে ইজ়রায়েল সেনা। বাকিদের দেহ উদ্ধার হয় ধ্বংসস্তূপ সরানোর সময়ে। এ ছাড়াও, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের আকাশপথে হামলা চালানো হয় দক্ষিণ লেবাননের একাধিক জায়গায়। এই ঘটনায় কোনও হতাহতের খবর এখনও না মিললেও প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
এর পাশাপাশি, হামাস সূত্রে খবর এখনও গাজ়ায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না ইজ়রায়েল। যেখানে প্রতিদিন ৬০০ ট্রাক ত্রাণ ঢুকলে সবচেয়ে বেশি উপকার হয় গাজ়াবাসীর, সেখানে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিন মাত্র ৩০০টিট্রাক ঢুকছে গাজ়ায়। সবগুলিতে ত্রাণসামগ্রী নেই বলে জানা গিয়েছে। বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ট্রাকওঢুকে পড়ছে এই সুযোগে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে শিশুরা। তাদের খাবার, পোশাক, ওষুধ-সহ আরও নানা জিনিস মিলছে না পর্যাপ্ত ত্রাণ না মেলায়। প্রায় সবই বেশি টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে বাজার থেকে। যে পরিবারগুলির সে সামর্থ নেই, তাদের আলাদা করে কোনও সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ গাজ়ার সাধারণ মানুষের। ফলে, শান্তিচুক্তি কার্যকরের প্রক্রিয়া জোরকদমে চললেও সাধারণ গাজ়াবাসীর দিন সেই অনিশ্চয়তার মধ্যেই কাটছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)