Advertisement
E-Paper

রেজাল্ট নেগেটিভ! যেন পুনর্জন্ম হল আমার

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের গঠন করা দু’লক্ষ কোটি ডলারের ত্রাণ-তহবিলের বেশির ভাগই ব্যয় করা হচ্ছে অতিদরিদ্র মার্কিনদের জন্য।

সায়ন্তী ভট্টাচার্য​

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৫:১৯
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

গত মাসের ১৯ তারিখ থেকে আমরা বাড়িবন্দি। প্রথম প্রথম দিশাহারা সকলে। টয়লেট টিসু, স্যানিটাইজ়ার কিনতে দোকানে দোকানে মারামারি, খাবারদাবারের তাক খালি, যেন শুধু নিজেকেই বাঁচতে হবে, প্রায় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। আস্তে আস্তে ছবিটা পাল্টে গেল। সব দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর রেশন করে দেওয়া হয়েছে, বয়স্ক মানুষদের জন্য অনেক দোকান থেকে আলাদা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে যাতে তাঁরা নির্বিঘ্নে কেনাকাটা করতে পারেন। বাইরে বেরোনো মানুষের সংখ্যা যাতে কমানো যায়, তাই দোকানে যাওয়ার আগে আমরা সবাই পাড়া-প্রতিবেশীদের থেকে জেনে নিচ্ছি কারও কিছু লাগবে কি না। হাসপাতালে করোনা টেস্টিং হচ্ছে বাইরে, যাতে যে সব পেশেন্ট ভিতরে আছেন, তাঁদের সংক্রমণ না-হয়। মাস্কের জোগান কমে যাচ্ছে বলে অনেকে বাড়িতে মাস্ক বানিয়ে হাসপাতালে দিয়ে আসছে। সভ্যতাকে বাঁচাতে গেলে যে সবাইকে হাত ধরাধরি করে বাঁচতে হবে, এত দিনে আমরা বুঝে গিয়েছি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের গঠন করা দু’লক্ষ কোটি ডলারের ত্রাণ-তহবিলের বেশির ভাগই ব্যয় করা হচ্ছে অতিদরিদ্র মার্কিনদের জন্য। বিমা সংস্থাগুলি চেষ্টা করছে, করোনা চিকিৎসার বিল যাতে বেশি না-হয়। এই অতিমারির মধ্যে বাড়িওয়ালারা যাতে ভাড়াটেদের উৎখাত না-করেন, সেই ব্যবস্থাও হয়েছে।

এই কয়েক দিনের মধ্যে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলেছে এই খুদে ভাইরাস। স্কুল-কলেজ-দফতর চলছে বাড়ি থেকেই। অপরাধের হার কমে গিয়েছে। স্টারবাকস ছাড়া যাঁরা কফি খেতেই পারতেন না, তাঁরা নিজেরাই বাড়িতে বানাচ্ছেন ‘ডালগোনা’ কফি। বাড়িতে আড়ম্বরহীন খাবার, তাতেই সবাই খুশি।

কিছু দিন আগে, আমার সর্দি-কাশি-জ্বর হয়েছিল বলে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ‘আর্জেন্ট কেয়ার’ থেকে জানাল পার্কিং লটে গাড়ি পার্ক করে অপেক্ষা করতে হবে। আমার স্বামীর ফোন নম্বর নিয়ে নিলেন ওঁরা। কিছু ক্ষণ পরে ফোন করে বললেন, গাড়ি নিয়ে এগিয়ে আসতে। ডাক্তার নিজে এলেন, গাড়িতেই পরীক্ষা করলেন, ওষুধ দিলেন। বললেন, টেস্টের রেজাল্ট আসা পর্যন্ত বাড়িতেই ‘সেল্ফ-আইসোলেশনে’ থাকতে। দু’দিন বাদে করোনা টেস্টের রেজাল্ট চলে এল— নেগেটিভ! সে দিন যেন পুনর্জন্ম হল আমার। ওই দু’দিন বাড়ির একটা একলা ঘরে সকলের থেকে আলাদা হয়ে বন্ধ থাকতে থাকতে বুঝেছিলাম মৃত্যুভয় কী ভয়ানক!

সিলিকন ভ্যালির মানুষ নাকি কখনও ঘুমোয় না। কিন্তু, এখন রাস্তায় বেরোলে মনে হয় যেন ছোটবেলায় রূপকথার গল্পে পড়া এক ঘুমন্তপুরীতে চলে এসেছি। তবে আমার বিশ্বাস, খুব তাড়াতাড়িই সেখানে প্রতিষেধকের সোনার কাঠির ছোঁয়ায় জেগে উঠবে সবাই, আর এই সুন্দর পৃথিবীকে আরও বেশি করে ভালোবাসব আমরা। বহু বছর পরে আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে শোনাব, কী ভাবে এই অতিমারিকে জয় করে আমরা লিখেছিলাম বিশ্বের সব থেকে সুন্দর এক রূপকথা।

(লেখক মলিকিউলার বায়োলজিস্ট)

Coronavirus USA San Francisco
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy