আমি কলকাতার বাসিন্দা। বাড়ি সল্ট লেকে। যাদবপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি থেকে পিএইচডি করার পর বাসেলে চলে আসি। গত পাঁচ বছর ধরে এই শহরেই রয়েছি। রয়েছে আমার স্ত্রী এবং শিশুকন্যাও। সম্প্রতি আমার শ্বশুরমশাই-ও শিলচর থেকে এখানে এসেছেন। বয়স ৬৫-র ওপারে। সুইৎজারল্যান্ডের অন্যান্য শহরের মতো বাসেলও করোনাভাইরাস সংক্রান্ত আতঙ্কের কবলে। ফলে চিন্তিত হওয়ার কারণ যথেষ্ট। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ অনুসারে আমরা সব রকম সাবধানতাই অনুসরণ করছি। জীবাণু নিয়ে নিয়মিত কাজ করতে হয় আমাকে। ফলে আমি জানি, উল্টো-পালটা পরামর্শ মানতে গেলে লাভের চাইতে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।
সুইৎজারল্যান্ডের সব থেকে বড় সমস্যা হল এই যে, সীমান্ত পেরিয়ে বহু মানুষ এখানে আসেন জীবিকার সন্ধানে। স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশই সেই রকম। ঘটনার সূত্রপাত টিচিনো ক্যান্টনে। এই অঞ্চলটি ইটালির লম্বার্ডির লাগোয়া। মনে রাখতে হবে কোমো আর মিলান এই লম্বার্ডিতেই অবস্থিত। ইটালি যখন করোনায় বিধ্বস্ত, তখন সুইৎজারল্যান্ড তাকে আটকাতে পারেনি। সেখান থেকে স্বাস্থ্যকর্মীরা এসছেন, নইলে হাসপাতালে কর্মীর অভাব দেখা দিত। বাসেলের অবস্থান সুইৎজারল্যান্ডের এমন এক জায়গায়, যেখান থেকে ফ্রান্সের আলসাস প্রদেশ এবং জার্মানির বাডেন উর্টেমবার্গ প্রদেশ দূরে নয়। ফ্রান্স এবং জার্মানি, দুই দেশেই আক্রান্তের হার সাংঘাতিক রকমের বেশি। সুতরাং করোনা যে বাসেলে দ্রুত থাবা বসাবে, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। যে হেতু এই ভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ঘটে, সে হেতু বাসেলের পরিস্থিতিরও দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে। বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে বিপদের সম্ভাবনা বেশি। তবু তাঁরা মাস্ক আর গ্লাভস পরে বাইরে বেরচ্ছিলেন। একজন জীববিজ্ঞানী হিসেবে আমি বলতে পারি, শুধুমাত্র মাস্ক পরে এই ভাইরাসকে ঠেকানো যায় না। এমনকি, এন-৯৫ দিয়েও নয়। আবার বয়স্ক লোকেদের সবার না বেরিয়েও তো উপায় নেই। বেশির ভাগ মানুষই একা থাকেন। দোকান-বাজার করতেও বেরতে হয়। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে বাসেলের তরুণরা এগিয়ে আসে। তারাই বয়স্কদের বাজার-হাট করে দিতে শুরু করে।
গত সোমবার থেকে সুইৎজারল্যান্ডের সরকার যাবতীয় দোকানপাট ও পাবলিক প্লেসকে বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছে। ওষুধের দোকান আর গ্রসারি ছাড়া বাকি সব কিছুই বন্ধ। সরকার থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। তবু সুপারমার্কেটের দোকানগুলোর তাক খাঁ খাঁ করছে। সব্জির ক্রেট ফাঁকা, চাল পাওয়া যাচ্ছে না। ছোটদের ডায়াপার অলভ্য। মাংসও পাওয়া যাচ্ছে না। টিস্যু পেপার, লিকুইড সাবান, স্টেরিলাইজার ইত্যাদিও বাড়ন্ত। ওষুধের দোকানগুলো ব্যানার ঝুলিয়ে রেখেছে, সেখানে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।