জল ভেঙে: হার্ভে-বিধ্বস্ত হিউস্টনের রাস্তায়। রবিবার। ছবি: এএফপি।
আগে থেকেই প্রশাসন সতর্ক থাকায় রোখা গিয়েছে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি। তবু হারিকেন হার্ভের চোখরাঙানিতে কাঁপছে টেক্সাস। আপাতত সব চেয়ে বড় আশঙ্কা, ভয়াবহ বন্যায় ভাসতে পারে গোটা রাজ্য।
ইতিমধ্যেই হিউস্টনের প্লাবিত অঞ্চলগুলি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় এক হাজার মানুষকে। দু’টি বহুতল থেকে উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫০টি শিশু। হিউস্টন মেট্রো এলাকায় হড়পা বানের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। রবিবার রাত পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, এখানে মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। আরানসাসে আরও তিন জনের মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে। গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে বন্যার আশঙ্কাই তাঁদের প্রধান উদ্বেগের কারণ। হিউস্টন ও কারপাস ক্রিস্টির অধিকাংশ এলাকায় ৫০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার জেরে উপচে পড়েছে স্থানীয় নদী, নালা বা খাল। বন্যার আশঙ্কায় একটি জেলখানা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বন্দিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোনও কোনও এলাকার পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে সেখানে পৌঁছতে গিয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে উদ্ধারকারীদের।
আবহাওয়া দফতর আগেই ঘোষণা করেছিল, গত ১২ বছরে হারিকেন হার্ভের মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আসেনি আমেরিকায়। দুর্যোগ মোকাবিলায় সেই মতো প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিল আপৎকালীন বাহিনী। যদিও শুক্রবার উপকূলে আঘাত করার পরেই শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে হার্ভে। তবে বন্যার যে রূপ ইতিমধ্যেই দেখা গিয়েছে, তাতে দুশ্চিন্তা কাটছে না প্রশাসনের। তারা জানিয়েছে, দুর্ভোগের তো এই সবে শুরু। এরই মধ্যে উদ্ধারকারী বাহিনীকে সাহস জোগাতে তাঁদের কাজের ঢালাও প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার তিনি টুইট করেছেন, ‘‘হাজার জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সরকারের সর্বস্তরের মধ্যে অসাধারণ সমন্বয়ের ফলেই এটা সম্ভব হয়েছে। আমি যত দ্রুত সম্ভব টেক্সাসে যাওয়ার চেষ্টা করছি।’’
আপাতত ক্ষয়ক্ষতির যে ছবি, তাতে ঘূর্ণিঝড়ে সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত পোর্ট আরানসাস শহর। মেয়র চার্লস বুজান জানিয়েছেন, হ্যারিকেনে যেন মুছে গিয়েছে গোটা শহরটা। কোনও কোনও অঞ্চল এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত যে সেখানে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না। মেয়র জানিয়েছেন, উদ্ধারকারী বাহিনী পৌঁছতে দেরি হওয়ায় সেখানে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে এক জনের। রবিবার সেখান থেকে আরও দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। হিউস্টনে গাড়ির ভিতর থেকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে এক জনকে। বন্যার জলে ভাসতে দেখা গিয়েছে এক মহিলার মৃতদেহ। স্থানীয় বাসিন্দা জ্যানেট ক্যাস্টিলোর কথায়, ‘‘ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে আমরা বাড়িতে আটকে। এ দিকে জল ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সাহায্যের জন্য পাগলের মতো সব জায়গায় ফোন করছি। হয় ফোন ব্যস্ত, নয় বেজে চলেছে। রাস্তায় বেরিয়েও কোথাও যাওয়ার উপায় নেই।’’ প্লাবিত এলাকাগুলিতে আটকে পড়া অনেকেই নিজেদের এলাকার বিবরণ দিয়ে ফেসবুক, টুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্য চাইছেন। রবিবার ফ্লোরিডা ও নিউ ইয়র্ক থেকে আরও উদ্ধারকারী বাহিনী পাঠানো হয়েছে টেক্সাসে।
পুলিশ জানাচ্ছে, প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে অনেকেই পোষ্য ফেলে রেখে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। শনিবার টেক্সাসের ভিক্টোরিয়ায় একটি টেলিফোনের খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে একটি কুকুরকে। অন্য একটি শহর রোমান ফরেস্টেও দেখা গিয়েছে একই দৃশ্য। এ ভাবে অসহায় পোষ্যদের ফেলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ পুলিশের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, দুর্যোগের মধ্যে চেন বাধা অবস্থায় এ ভাবে পোষ্যদের ফেলে রেখে যাওয়া আইন-বিরুদ্ধ। স্টিফেন চার্লিস নামে এক পুলিশ কর্তার আবেদন, ‘‘ওরাও আপনাদের পরিবারের সদস্য। দয়া করে ওদের সঙ্গে এই রকম ব্যবহার করবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy